জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার খবর পেয়ে সৌদি আরব সফর সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফিরেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বুধবার (২৩ এপ্রিল) ভোরে তিনি দিল্লির পালাম বিমানঘাঁটিতে অবতরণ করেন। এর আগে মঙ্গলবার রাতেই নয়াদিল্লির উদ্দেশে রওনা হন তিনি।
ফ্লাইট ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট ফ্লাইটরাডার-২৪–এর তথ্য অনুযায়ী, সৌদি আরব থেকে ফেরার সময় মোদিকে বহনকারী ‘এয়ার ইন্ডিয়া ওয়ান’ বিশেষ বিমানটি পাকিস্তানের আকাশসীমা এড়িয়ে চলে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ সিদ্ধান্ত ভারতের নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর সর্বোচ্চ সতর্কতারই প্রমাণ।
মঙ্গলবার সকালে সৌদি সফরের পথে প্রধানমন্ত্রীর ভারতীয় বিমানবাহিনীর বোয়িং ৭৭৭-৩০০ উড়োজাহাজটি পাকিস্তানের আকাশসীমা ব্যবহার করেছিল। কিন্তু ফিরতি পথে একই পথ অনুসরণ না করে বিমানটি সরাসরি আরব সাগরের উপর দিয়ে গুজরাট হয়ে উত্তর দিকে ঘুরে দিল্লিতে পৌঁছে।
বিমান রুটের এই পরিবর্তন বর্তমান প্রেক্ষাপটে পাকিস্তান থেকে উদ্ভূত সম্ভাব্য হুমকির প্রতি ভারতীয় নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর সচেতন দৃষ্টিভঙ্গির ইঙ্গিত দেয়। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে মনে করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।
দিল্লিতে পৌঁছানোর পরপরই প্রধানমন্ত্রী মোদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালকে সঙ্গে নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বৈঠকে জম্মু ও কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তবে বৈঠকের বিস্তারিত আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) জম্মু ও কাশ্মীরের পর্যটন শহর পেহেলগামে সন্ত্রাসীদের গুলিতে অন্তত ২৬ জন নিহত হন। নিহতদের মধ্যে দুজন বিদেশি নাগরিকও রয়েছেন। এই হামলাকে ২০১৯ সালের পুলওয়ামা ঘটনার পর কাশ্মীর অঞ্চলের সবচেয়ে বড় হামলা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
সৌদি থেকে ফিরে বিমানবন্দরেই জরুরি বৈঠক মোদির
কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার পরপরই সৌদি সফর সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফিরেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বুধবার (২৩ এপ্রিল) সকালেই দিল্লি বিমানবন্দরে নেমেই কোনো বিলম্ব না করে কাশ্মীর পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসেন তিনি।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং নিরাপত্তা ও প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। সরকারি সূত্রগুলো জানায়, হামলার পরবর্তী প্রতিক্রিয়া, তদন্ত এবং সীমান্তবর্তী অঞ্চলে নিরাপত্তা জোরদার নিয়ে মূলত আলোচনা হয় বৈঠকে।
সফরসূচি অনুযায়ী মোদির দিল্লি ফেরার কথা ছিল বুধবার রাত। তবে মঙ্গলবার বিকেলে অনন্তনাগ জেলার পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার খবর পাওয়ার পরই সিদ্ধান্ত বদলান তিনি। সৌদি আরবের যুবরাজ সালমানের আমন্ত্রণে রাষ্ট্রীয় সফরে গিয়েছিলেন মোদি, কিন্তু সেই সফর অসমাপ্ত রেখেই মঙ্গলবার রাতের মধ্যেই রওনা হন দিল্লির উদ্দেশে।
সৌদির রাজার দেয়া নৈশভোজেও উপস্থিত থাকেননি মোদি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল মঙ্গলবার রাতেই এক্সে লেখেন, ‘সৌদি সফর সংক্ষিপ্ত করে ভারতের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী।’
হামলার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মোদি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে ফোন করে পরিস্থিতি জানার নির্দেশ দেন। পাশাপাশি দ্রুত কাশ্মীরে পৌঁছে স্থানীয় প্রশাসন ও বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে ব্যবস্থা নিতে বলেন। মোদির নির্দেশ পেয়েই শাহ রাতেই পৌঁছান শ্রীনগরে এবং বৈঠক করেন সেনাবাহিনী, আধাসামরিক বাহিনী ও পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে।
এর আগে সৌদি আরব থেকেই এক্সে মোদি লেখেন, ‘কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। যারা প্রিয়জন হারিয়েছেন, তাদের প্রতি গভীর সমবেদনা। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করি।’ পাশাপাশি তিনি জানান, 'এই জঘন্য হামলার নেপথ্যে যারা রয়েছে, তাদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের লড়াই আরও জোরদার হবে।'
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার বিকেলে পর্যটননগরী পেহেলগামের বৈসরনে বন্দুকধারীদের হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত হন। এদের মধ্যে দুইজন বিদেশি নাগরিক ছিলেন—একজন সংযুক্ত আরব আমিরাতের, অন্যজন নেপালের। বহু মানুষ আহত অবস্থায় স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
হামলাটি ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর কাশ্মীর উপত্যকায় সবচেয়ে বড় হামলা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]