চুক্তিভঙ্গ করে সশস্ত্র কার্যক্রম অব্যাহত রাখায় পার্বত্য বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সঙ্গে সব ধরনের আলোচনা স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি।
বান্দরবানের রুমা ও থানচিতে সরকারি দুই ব্যাংকের তিন শাখায় ডাকাতি, অস্ত্র লুট ও ব্যাংক কর্মকর্তাকে অপহরণের প্রেক্ষাপটে বৃহস্পতিবার এ ঘোষণা দিয়েছেন শান্তি স্থাপন কমিটির কমিটির আহ্বায়ক ও বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা।
জেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, কেএনএফ সদস্যদের ব্যাংক ডাকাতি, অস্ত্র ও অর্থ লুটপাট এবং পথচারীদের জিম্মি করে হামলা, থানচি উপজেলায় স্থানীয়দের জিম্মি করার মতো ‘হীন কার্যক্রমের নিন্দা জানিই আমরা।
‘কেএনএফের সঙ্গে সব ধরনের আলোচনা স্থগিত করা হয়েছে। অপহৃত ব্যাংক ম্যানেজারকে মুক্তি ও লুট করা সকল অস্ত্র ফিরিয়ে দেওয়া হলে, পরবর্তী কার্যক্রমের বিষয় বিবেচনা করবে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি,’ বলেন ক্য শৈ হ্লা।
কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের সদস্যদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য গত বছরের ২৯ মে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর নেতাদের উপস্থিতিতে মতবিনিময় সভা হয়। ৯ জুন গঠিত হয় ১৮ সদস্য বিশিষ্ট শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি।
পরে এই কমিটি ও কেএনএফ সদস্যদের মধ্যে কয়েক দফা ভার্চুয়াল বৈঠকের পর দুই পক্ষের সম্মতিতে সরাসরি সংলাপে বসার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
গত পাঁচ মার্চ শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সদস্যদের সঙ্গে কেএনএফের সরাসরি সংলাপ এবং সব ধরনের সশস্ত্র কার্যক্রম থেকে কেএনএফ সদস্যরা বিরত থাকবে বলে এক সমঝোতা স্মারকও সই করা হয়।
কমিটির আহ্বায়ক ক্য শৈ হ্লা বলেন, কিন্তু তারা সম্পূর্ণভাবে চুক্তি ভঙ্গ করে বিভিন্ন সময়ে সশস্ত্র কার্যক্রম অব্যাহত রাখে। কমিটির তরফ থেকে এ বিষয়ে তাদেরকে বারবার অবহিত করা হলেও তারা কর্ণপাত করেনি।
‘উপরন্তু বিক্ষিপ্তভাবে বিভিন্ন সময়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের উপর হামলা, অপহরণ ও চাঁদাবাজি চালিয়ে যায়।’
ক্য শৈ হ্লা বলেন, অতি সম্প্রতি ব্যাংক ডাকাতির ও অপহরণের ঘটনায় আমরা শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি তীব্রভাবে মর্মাহত ও ক্ষুব্ধ। এ ঘটনায় শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির চলমান সব ধরনের প্রচেষ্টা পদানত ও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
‘এ অবস্থায় কমিটি মনে করে যে, এসব ঘটনার মধ্য দিয়ে কেএনএফ শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সাথে সংলাপ করার সব পথ বন্ধ করে দিয়েছে। তাই আগামীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির পক্ষে সংলাপ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না,’ সাফ জানিয়ে দেন বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান।
আর সাধারণ জনগণের নিরাপত্তা, রাষ্ট্রের সম্পত্তির সুরক্ষা, অপহৃত সোনালী ব্যাংক ম্যানেজারকে নিঃশর্তভাবে সুস্থ ও নিরাপদে ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বান্দরবান জেলা পরিষদ সদস্য ও শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির মুখপাত্র কানঞ্চ জয় তংচগ্যা, বম সোসাইল কমিটির সভাপতি ও শান্তি প্রতিষ্ঠা লিয়াজু কমিটির সদস্য লাল জার বমসহ শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির ১৩ সদস্য।
মঙ্গলবার রাত রাত নয়টার দিকে ৭০ থেকে ৮০ জনের একটি সশস্ত্র দল সোনালী ব্যাংকের রুমা শাখায় হামলা চালায়। সন্ত্রাসীরা ব্যাংকের পাহারায় থাকা পুলিশ ও আনসারদের আটটি চায়নিজ রাইফেল, দুটি এসএমজি, চারটি শটগান ও ৪১৫ট রাউন্ড গুলি ছিনিয়ে নেয়।
এরপর কাছের মসজিদেই প্রবেশ করে কেএনএফে সন্ত্রাসীরা। সেখান থেকে তারাবির নামাজে থাকা ব্যবস্থাপক নেজাম উদ্দিনকে অপহরণ করে নিয়ে যায়।
এরপর বুধবার দুপুরে থানচি উপজেলায় সোনালী ও কৃষি ব্যাংকের দুটি শাখায় হামলা চালিয়ে ডাকাতি করে সন্ত্রাসীরা।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]