মিঠুন সরকার : আমি নারী কি-না পারি। ইন্টারনেটের কল্যাণে অনেক অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলছেন নারীরা। ঘরে বসেই পণ্য বিক্রি করছেন দেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে। একদিকে কমেছে আনুষঙ্গিক ব্যয় অন্যদিকে বেড়েছে বিক্রয়। আজকে জানবো যশোরের ঝিকরগাছার কুমড়ো বড়িতে সফল নারী উদ্যোক্তা ফারজানা আক্তার তুলি’র ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প।
পরিসংখ্যান যা বলছে
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে, বর্তমানে ১ কোটি ৬৮ লাখ নারী কৃষি, শিল্প ও সেবা—অর্থনীতির বৃহত্তর এই তিন খাতে কাজ করছেন। অর্থনীতিতে নারীর আরেকটি বড় সাফল্য হলো, উৎপাদনব্যবস্থায় নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। প্রতিবছর গড়ে দুই লাখ নারী কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে যুক্ত হচ্ছেন। বর্তমানে কৃষি খাতে নিয়োজিত আছেন ৯০ লাখ ১১ হাজার নারী।
নারী হিসাবে উদ্যোক্তা যেভাবে
যশোরের ঝিকরগাছা পৌরসভাধীন পারবাজার বহিলা পাড়ার জাহাঙ্গীর হোসেন ও শাহনাজ বেগম দম্পতির কন্যা ও শার্শা থানার নাভারন ইউনিয়নের জিরানগাছা গ্রামের আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী ফারজানা আক্তার তুলি ।
তুলি জানান, ঝিকরগাছা পারবাজা বাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এস এস সি ও মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেছেন তিনি।
তিনি জানান, মধ্যবিত্ত পরিবারে মানুষ আমি। যখন বুঝতে শিখলাম তখন দেখলাম আমার আম্মু জাগরণী চক্র একটা ফাউন্ডেশন কাজ করতো এটা হস্তশিল্প ছিল সেখানে হাতের কাজের সেলাই হত আমার আম্মু দশ বছর চাকরি করল ছোটবেলা থেকে ভাবতাম আমি নিজে একটা কিছু করব কিন্তু হলো না আমার বিয়ে হয়ে গেল। বিয়ের পরে অনেক ঝড়-ঝাপটা আসলো তারপর আমার হাজব্যান্ড বিদেশ চলে গেল। তখন আফসোস একটা থেকেই গেল নিজে কিছু করতে পারলাম না ।পরে হাসবেন্ড বাসায় আসলো সংসার হল একটা ছেলে দুইটা মেয়ে হল তবুও মনের ভিতর একটা কষ্ট থেকে গেল কারণ যখন কিছু মনে চায় তো স্বামীর কাছে টাকা চাওয়া লাগতো অনেকবার জিজ্ঞাসা করতো কি করবা কি কাজে খরচ করবা অনেক কথা বলা লাগত । একদিন ভাবলাম কেন নয় নিজে যদি একটা কিছু করতে পারি মন্দ হয় না ।তখন আমি অনলাইনে উদ্যোক্ত হবার চিন্তা মাথায় নিলাম। উদ্যোক্ত হবার গল্প সব সময় মেয়েদের কিন্তু পরিবার থেকে সাপোর্ট দেয় না জোর করে সাপোর্টটা আদায় করে নিতে হয়।
পারিবারিক সহযোগিতা যেমন ছিল :
তুলি জানান, শ্বশুরবাড়ি থেকে আমাকে বলা হতো লোকে কি বলবে? আমাদের ফ্যামিলিতে এরকম চলে না। ছেলে মেয়ে রেখে কিভাবে কাজ করবা? রান্নাবাড়া আছে মেয়েদের স্কুল আমার সংসার এগুলো আগে তারপর চারবারের মাথায় অনেক বুঝিয়ে আমি উদ্যোক্তা হতে সফল হয়েছি।
কিন্তু একটা কথা না বললে নয় আমার হাজব্যান্ড খুবই সহযোগিতা করেছে আমার এই অনলাইনে ব্যাপারে ।তিনি অমায়িক(স্থানীয় ভাষা যার অর্থ ভালো মানুষ) একজন মানুষ সৎ এবং আমার যত যুক্তি পরামর্শ আমি তার কাছ থেকে পেয়েছি ।অনলাইন বিজনেসে তার অবদান টাই বেশি আমার কাছে এবং আমার সব মতামতের সেই গুরুত্ব দেয়।
সমাজ যেভাবে দেখেছিলো
তুলি জানান, শ্বশুরবাড়ি থেকে বাধা আশেপাশের লোক নানা খারাপ কথা বলেছে নিজে ডেলিভারি দেই সেই সময় অনেক লোক অনেক কথা বলেছে মেয়ে লোক আবার চাকরি করে তবু অনলাইনে।
মূলধন জোগাড় হলো যেভাবে
তুলি জানান, আমার স্বামী ম‚ল্ধন হিসাবে ৫ হাজার টাকা আমাকে দেন। ঐ টাকা গুলোই আমার জীবনের টার্নিং পয়েন্ট হয়ে আসে।
এখন আয় যেমন
তুলি জানান, এখন মাসে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা ইনকাম হয় কারো কাছে আমার টাকা চাওয়া লাগে না নিজের ইচ্ছা মত বাবার বাড়ির লোকেদের কিছু দিতে পারি। শ্বশুর বাড়ির লোকদের কিছু দিতে পারি এবং নিজের ছেলে মেয়ের জন্য কিনতে পারি। নিজের জন্যও পারি। নিজের টাকা খরচ করার মতো আনন্দ পৃথিবীতে আর নাই।
যেসব পণ্য নিয়ে কাজ করছেন
কৃষি পণ্যের মধ্য কুমড়ো বড়ি, গুঁড়, পাটালী, বুটিক ও হাতের তৈরি পোষাক, কাঁথা ও গার্মেন্টস এর পণ্য আছে বলে জানান তুলি।
পণ্য পৌঁছান যেভাবে
তুলি জানান, আমি অনেক কষ্ট করি নিজেই ডেলিভারি দেই নিজেই প্রোডাক্ট বেশি বেছে নিয়ে আসি এবং নিজেই সবকিছু মেন্টেন করে চলার চেষ্টা করি। ঘর-সংসার সামলে আমাকে অনেক কষ্ট করে সবাইকে ম্যানেজ করে চলতে হয় ।শেষ পর্যন্ত আমি সমাধান পেয়েছি। এখন অনইলাইনে আমার প্রচুর বিক্রি হয় এবং দিনে দিনে পণ্যের চাহিদা বাড়ছে।
পণ্যের গুণগত মান যেভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়
তুলি জানান, আমার পণ্যগুলো যখন আনি তখন আমি নিজে আগে ব্যবহার করি এর গুনাগুন নিজে ঠিক করে পরে কাস্টমারদের দেই এবং আমার কিছু পণ্য আমার নিজ হাতে তৈরি করা এবং আমার পণ্যের মান গুনাগুন ঠিক থাকায় আজ আমি অনেক রিপিট কাস্টমারের কাছে বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছি। হ্যাঁ আমি এখন নিজেকে পুরোটাই অনলাইনের উপর নির্ভর করি অনলাইন উপার্জন থেকে আমার নিজের খরচ চলে যায়। উদ্যোক্তা হয়ে এখন আমার একটাই আশা আছে যে আমি নিজে বড় একটা শোরুমের মালিক হব এবং আমি আরো দশটা মেয়েকে যাতে স্বাবলম্বী করতে পারি আমার খুব ইচ্ছা এক কথায় আমাকে সবাই চিনবে আমার কাজের উপর ভিত্তি করে সবাই আমাকে জানবে আমার একটা নতুন পরিচিত হবে।
দেশ ও জাতির সামগ্রিক উন্নয়নের স্বার্থে কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণের যথাযথ ম‚ল্যায়ন অপরিহার্য, কেননা তা না হলে দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠীকে যেমন অবম‚ল্যায়িত করা হবে, তেমনি অনেক সম্ভাবনার দ্বার রয়ে যাবে র“ব্ধ। জাতীয় আয়ে নারীর অবদানকে পরিসংখ্যানভুক্ত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, নিয়োগকারী সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাা, দাতাগোষ্ঠী, নীতিনির্ধারক, গবেষক, উদ্যোক্তা, সমাজকর্মী- সর্বোপরি জনগণকে আরও সচেতনভাবে এগিয়ে আসতে হবে। আর তা হলেই অনেক প্রতিবন্ধকতাকে যথাযথভাবে চিহ্নিত করে তা দ‚র করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা সম্ভব হবে। আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতিতে তা নিশ্চিতভাবে সুদ‚রপ্রসারী ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]