বিশ্বকাপের জন্য ১২ বছর ধরে প্রস্তুত হলো মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতার। ইতিহাসের অন্যতম সেরা আসর আয়োজন করলো তারা। ২৮ দিন ধরে চলা বিশ্বকাপের আমেজে উৎসবমুখর ছিল দেশেটি। ওয়ার্ল্ডকাপ শেষে কেমন আছে কাতার? বিশ্বকাপ চলাকালে ১.২ মিলিয়ন বিদেশি দর্শক কাতার সফর করেছেন। ফুটবলপ্রেমীদের বিশ্বকাপ ভ্রমণে জমজমাট হয়ে গিয়েছিল কাতার। ৮টি ফুটবল স্টেডিয়ামকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল নানা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। তৈরি হয়েছিল নতুন কর্মসংস্থান। বিদেশি দর্শকদের সমাগমে কাতারের রাজধানী দোহার সওক ওয়াকিফ মার্কেটে খুব বেচা-কেনা হয়েছে। বাজারের এক দোকানির নাম আহমেদ সালাম। বিশ্বকাপ শেষ হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন তিনি।
সংবাদ সংস্থা আল জাজিরাকে তিনি বলেন, ‘(ফাইনালের পরের দিন) সকালে উঠে দেখলাম পুরো মার্কেট ফাঁকা। আমি অনেক কষ্ট পেলাম। এই এলাকায় অনেক জীবিকার উপায় তৈরি হয়েছিল। বসে বিশ্রাম নেয়ারও সুযোগ ছিল না আমাদের। অবিশ্বাস্য পরিবেশ তৈরি হয়েছিল।’ প্রত্যেক বছর কোনো বড় টুর্নামেন্ট যেন কাতারে আয়োজন হয়, সেই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন কাতার প্রবাসী সালাম নামের এক ভারতীয়।
তিনি বলেন, ‘বাইরের দেশের মধ্যে শুধু কাতারেই ভ্রমণ করেছি আমি। বিশ্বের নানা প্রান্তের মানুষের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার একটি অসাধারণ সুযোগ ছিল এটি।’ বিশ্বকাপের সময় মরুভূমিতে উটের ব্যবসাও বেড়ে গিয়েছিল ব্যাপকভাবে। আলি জাবের নামের একজন ব্যবসায়ী জানান, সাধারণ দিনগুলোতে সর্বোচ্চ ২০ জন আরোহী পেতেন তারা। সপ্তাহে মোটে ৫০ জন দর্শনার্থী উটে চড়তে আসতেন। কিন্তু বিশ্বকাপের সময় ফুটবলপ্রেমীদের ভিড়ে তাদের ব্যস্ততা বেড়ে গিয়েছিল। ব্যবসার ব্যাপক উন্নতি হয়েছিল। সারাদিনে ১ হাজার আরোহীও পেতো আলি জাবেরের উট ট্রাভেলস।
বিশ্বকাপ শেষ হওয়ায় ব্যস্ততা কমে গেছে উট ব্যবসায়ীদের। একইসঙ্গে কমে গেছে উপার্জনও। আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, গ্রেটেস্ট শো শেষ হওয়ায় কাতারের পরিষ্কার কর্মীরা বিভিন্ন স্থানে উড়ানো নানা দেশের পতাকা, ব্যানার, ফেস্টুন সরাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। মেট্রোস্টেশনগুলো ফাঁকা পড়ে আছে। তবে এখনো কিছু বিদেশি দর্শক নিজ দেশে ফেরেননি। বিশ্বকাপ পরবর্তী কাতার উপভোগ করছেন তারা। ইয়ামিনা উসমান নামের এক পাকিস্তানি আল জাজিরাকে বলেন, ‘ফাঁকা লাগছে সবকিছু। মনে হচ্ছে সব শেষ।
আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, পরিবারসহ আরো কিছুদিন কাতারে অবস্থান করবো। বাচ্চাদের ছুটি চলছে এখনো। আমরা কাতারের বিভিন্ন স্থানে ঘুরব, মানুষের সঙ্গে পরিচিত হব। যদিও বিশ্বকাপের পরিবেশ পাব না এখন।’ ইয়ামিনা উসমান বলেন, ‘তুলনামূলকভাবে শান্ত হয়ে গেছে। (বিশ্বকাপের সময়) খুব ব্যস্ত ছিল এই শহর... তবে বিশৃঙ্খল ছিল না। বিশ্বকাপ ইতিহাসের সেরা আসর আয়োজিত হয়েছে কাতারে।’ বিশ্বকাপের জন্য নতুন করে ৭টি স্টেডিয়াম তৈরি করেছিল কাতার। ফুটবলারদের অনুশীলনের জন্য আলাদা মাঠেরও ব্যবস্থা করা হয়। তৈরি হয়েছে অসংখ্য হোটেল। কিন্তু বিশ্বকাপ শেষে এগুলোর ভবিষ্যত কী? ইউরোপিয়ান গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, ইতোমধ্যেই কাতারের ৮৭৪ স্টেডিয়ামটি ভেঙে ফেলার কাজ শুরু হয়েছে। খুলে ফেলা হয়েছে মডিউলার স্টেডিয়ামের একাংশ। অন্যান্য স্টেডিয়ামগুলোর ব্যাপারে কাতারের প্রশাসন জানায়, লুসাইল স্টেডিয়ামে একটি স্কুল এবং অনেকগুলো দোকান-ক্যাফে তৈরি করা হবে। খেলাধুলার জন্যও প্রচুর জায়গা থাকবে নতুন অবকাঠামোটিতে।
পাশাপাশি একটি হাসপাতাল এবং একটি কমিউনিটি হলও স্টেডিয়ামের জায়গায় তৈরি করা হবে। ফুটবল বিশ্বকাপের স্মৃতিতে একটি মিউজিয়াম তৈরিরও পরিকল্পনা চলছে বলে জানিয়েছে কাতার। আল বাইত স্টেডিয়ামে খোলা হবে একটি বিলাসবহুল হোটেল, একটি শপিং মল এবং ওষুধের দোকান। ২টি স্টেডিয়াম ব্যবহার করবে স্থানীয় দুটি ফুটবল ক্লাব। এফসি আল রাইয়ান খেলবে আহমেদ বিন আলি স্টেডিয়ামে এবং আল ওয়াকরাহ খেলবে আল জানুবে। খলিফা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়াম ব্যবহার করবে কাতার ফুটবল জাতীয় দল। ২০২৪ সালে এশিয়ান কাপের জন্য বাকি স্টেডিয়ামগুলো কাজে লাগানো হতে পারে।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]