ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা পৌরসভা নির্বাচনে ভূমিধস জয় পেয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। এবার সেই পৌরসভার নতুন মেয়র কে হচ্ছেন তা নিয়ে জল্পনা কল্পনা শুরু হয়েছে।
এ নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম নিউজ এইটিন।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, কলকাতার নতুন মেয়র হিসেবে যাদের নাম নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে, তার মধ্যে অন্যতম ফিরহাদ হাকিম। যদিও সব চর্চা দূরে সরিয়ে রেখে, নাতনি, পরিবার নিয়েই ব্যস্ত চেতলার 'ববি'।
কলকাতা জয়ের পর বর্তমান মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, ‘এই জয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জয়। মানুষ মমতা’দির উন্নয়নের উপর ভরসা রেখেছেন। এই জয় মানুষের বিশ্বাসের জয়।’’
সদ্য শেষ হওয়া পুরভোটে ফিরহাদ হাকিম প্রার্থী হবেন কি না, তা নিয়েই একটা জল্পনা তৈরি হয়েছিল। মনে করা হয়েছিল, পৌর নির্বাচনে প্রার্থীদের তালিকায় ‘এক ব্যক্তি, এক পদ’ নীতি দেখা যেতে পারে তৃণমূলে। যদিও কলকাতার ছয় বিধায়ক এবং এক সাংসদকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। তারা প্রত্যেকেই জিতে এসেছেন। এমন কী দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সক্রিয়ভাবে একাধিক বিধায়ক-সাংসদদের পুরভোটে বিশেষ দায়িত্ব দিয়েছিলেন। কলকাতার ১৪৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে যেগুলিতে জয় নিয়ে তৃণমূলের কোনও দ্বিধা ছিল না, তার মধ্যে অবশ্যই ছিল ৮২ নম্বর। ভবানীপুর বিধানসভার এই ওয়ার্ডের জয় নিয়ে কোনও সংশয় ছিল না। এ ছাড়া ফিরহাদ হাকিমের কেন্দ্র বন্দর বিধানসভা এলাকার সাতটি ওয়ার্ডে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। এখানেও সাতে-সাত পেয়ে ফিরহাদ হাকিম বুঝিয়ে দিয়েছেন, বন্দর নামক ‘দুর্গ’টি অক্ষত রয়ে গেছে তৃণমূলের।
আনন্দবাজার পত্রিকার খবরে বলা হয়, কলকাতার পরবর্তী মেয়র হিসাবে এখনও পর্যন্ত এগিয়ে রয়েছে বিদায়ী মেয়র তথা পৌরপ্রশাসক ফিরহাদ হাকিম। অন্য একটা অংশের মতে আবার, মেয়র হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন ৮৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ষষ্ঠবার জয়ী তৃণমূল সংসদ সদস্য মালা রায়। যদি তিনি মেয়র পদে মনোনীত হন, তাহলে মালাই হবেন কলকাতার প্রথম নারী মেয়র। তবে ফিরহাদ-মালার মধ্যে মেয়রের দৌড়ে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছেন কলকাতা বন্দরের বিধায়ক।
তৃণমূলের একটি সূত্রের মতে, মালাকে ফের চেয়ারপার্সন করা হতে পারে। কে ডেপুটি মেয়র হবেন? কারা হবেন মেয়র পরিষদ? এমন প্রশ্নও ঘোরাফেরা করছে কলকাতার রাজনীতির অন্দরমহলে।
হিন্দুস্তান টাইমসের খবরে বলা হয়, স্বচ্ছ ভাবমূর্তি তুলে ধরতে চান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কোনও বিতর্ক আর হোক চান না তিনি। আগে শোভন চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল। একই বিতর্কে জড়িয়েছেন ফিরহাদ হাকিম। তাই এবার অপরাজেয় মালা রায়কে মেয়র করতে পারেন।
নিউজ এইটিনের খবরে বলা হয়, গত বিধানসভা নির্বাচনে ৬৮ হাজার ৫৫৪ ভোটে জিতে বিধায়ক হন ফিরহাদ হাকিম। কিন্তু ২০১৫ সালের কলকাতা পুরভোটে ৭৬, ৭৮, ৭৯, ৮০, ১৩৩, ১৩৪ এবং ১৩৫ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল জয় পেলেও ৭৫ নম্বর ওয়ার্ডটি দখল করেছিল সিপিএম। এ বার সেই ওয়ার্ডেও জয় ছিনিয়ে নিয়েছে তৃণমূল।কলকাতার মেয়র হলেও গত পুরভোট প্রার্থী ছিলেন না ফিরহাদ হাকিম। তখন তিনি বিধায়ক এবং মন্ত্রী ছিলেন। ২০১৮ সালের নভেম্বরে শোভন চট্টোপাধ্যায় মেয়র পদ ছেড়ে দেওয়ায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় দায়িত্ব দেন ফিরহাদ হাকিমকে। তার জন্য কলকাতা পুরসভা আইনেও বদল আনে শাসক তৃণমূল।
এর আগে কোনও কাউন্সিলর ছাড়া কেউ মেয়র হতে পারতেন না। কিন্তু ববি'কে ওই মেয়রের পদ দিতেই আইন বদলায়। এখন মেয়র হওয়ার পরে ছ’মাসের মধ্যে যে কেউ কলকাতার যে কোনও ওয়ার্ড থেকে জিতে আসতে পারেন। ঠিক যে ভাবে ৮২ থেকে জিতেছিলেন ফিরহাদ। আট মাসের মধ্যে তিনি ৩ বার ভোটের দায়িত্ব সামলালেন৷ তার দায়িত্বে থাকা ওয়ার্ডগুলিতে দলকে জেতালেনও। এই নির্বাচনে ফিরহাদকে ‘মেয়র পদপ্রার্থী’ বলে আগে ঘোষণা করেনি তৃণমূল কংগ্রেস। তবে মেয়র হিসাবে তার কাজের অভিজ্ঞতা বিশেষ করে কোভিড পরিস্থিতি ও আমফান ঝড়ের পরেও তিনি যেভাবে দায়িত্ব সামলেছেন। এই অবস্থায় মনে করা হচ্ছে, মেয়র হিসাবে ''ববি"র নাম আজ ঘোষণা হবে।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]