জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান ঘিরে জুলাই যোদ্ধাদের নিয়ে বক্তব্য এনসিপি আংশিক কাট করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।
রোববার (১৯ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানী গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে সালাহউদ্দিন আহমদ এ কথা বলেন।
গত শুক্রবার জুলাই সনদ সইয়ের দিনে দাবি আদায়ে বিক্ষোভ করেন ‘জুলাই যোদ্ধারা’। তাদের নিয়ে বক্তব্যের জন্য সালাহউদ্দিন আহমদকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। বিষয়টি স্পষ্ট করতে সংবাদ সম্মেলনে আসেন সালাহউদ্দিন আহমদ।
জবাবে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে এখন পর্যন্ত তাদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিএনপির ৪২২ জন নিহত হয়েছেন। তারা ছবিসহ তাদের নেতা-কর্মীদের তালিকা প্রকাশ করেছেন। এই সংখ্যা আরও বেশি হবে, যারা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নিজেদের প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন। শহীদ হয়েছেন।
দীর্ঘ ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিএনপির যে ভূমিকা, যে সংগ্রাম, যে ত্যাগ, সেই রক্তের সিঁড়ি বেয়ে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে। এখানে শুধু বিএনপি নয়, বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর অবিরাম সংগ্রাম-আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে রক্তের সোপান তৈরি হয়েছে।
শাপলা চত্বরের যে নৃশংস হত্যাকাণ্ড, সেটা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। সেটা মনে রাখতে হবে। যেকোনো একটি রাজনৈতিক দল নয়, সব রাজনৈতিক দল, যারা ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক সংগ্রামে অবদান রেখেছে, অবিরাম সংগ্রাম করেছে, তাদের সবার অবদানে গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে।
মাত্র ৩৬ দিনের আন্দোলনে একটা ফ্যাসিবাদী শাসকের পতন হয়েছে বলে যদি মনে করা হয়, তবে তা সঠিক নয়। এটা হচ্ছে ১৬ বছরের ধারাবাহিক আন্দোলন-সংগ্রামের ফসল। সুতরাং বিএনপিকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বিপরীতে দাঁড় করানোর অপচেষ্টা সফল হবে না বলেই তার মনে হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, গতকাল শনিবার একটি রাজনৈতিক দলের সংবাদ সম্মেলনে তার একটি বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে আনা হয়েছে। তাকে ক্ষমা চাওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছে। তিনি এটাকে স্বাগত জানান। এভাবেই রাজনৈতিক চর্চা হওয়া উচিত। গণতান্ত্রিক চর্চা হওয়া উচিত। যথেষ্ট সম্মানের সঙ্গেই তারা কথাগুলো বলেছে। তিনি মনে করছেন, বিষয়টি পরিষ্কার করা দরকার।
সালাহউদ্দিন বলেন, জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের পূর্বে সংঘর্ষের ঘটনায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আমি বলেছিলাম, জুলাই যোদ্ধা নামে একটি সংগঠন আমাদের সাথেও কথা বলেছিল, ঐকমত্য কমিশনের সাথেও কথা বলেছে। তাদের একটা যৌক্তিক দাবি ছিল। সেই যৌক্তিক দাবি পূরণের জন্য আমি নিজেও স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম।
কথা বলেছিলাম এবং সেটা ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি প্রফেসর আলী রীয়াজ সঠিকভাবে অ্যাড্রেস করেছেন। সেটা প্রেসে বলেছেন এবং সংশোধন করেছেন। এরপর তাদের অসন্তোষ থাকার কথা নয়। যেসব বিশৃঙ্খলা হয়েছে আমরা খোঁজ নিয়েছি এটা তদন্তনাধীন আছে।
দেখা গেছে এখানে জুলাই যোদ্ধাদের নামে কিছু সংখ্যক ছাত্র নামধারী, সেটা ইন্টারভিউতে আমি দেখেছি, কিছু উশৃঙ্খল লোক ঢুকেছে সেটা ফ্যাসিস্ট সরকারের ফ্যাসিস্ট বাহিনী বলে আমি মনে করি এবং আওয়ামী ফ্যাসিস্ট বাহিনী যে এখনো সমস্ত জায়গায় বিভিন্ন ফাঁক-ফোকরে করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে।
সেটা দৃশ্যমান হয়েছে। এখানে কোনো জুলাই যোদ্ধা সঠিক কোনোজুলাই অভ্যুত্থানের সাথে জড়িত কোনো সংগঠন অথবা কোনো ব্যক্তি জড়িত থাকতে পারে না। এটা ছিল আমার সুস্পষ্ট বক্তব্য। এই কথার মধ্য দিয়ে প্রকৃতপক্ষে আমি জুলাই অভ্যুত্থানের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি সংগঠন এবং শক্তিদের সম্মানিত করার চেষ্টা করেছি। যাতে কোনোক্রমে কেউ যেন জুলাই যোদ্ধাদের এ সমস্ত কর্মকাণ্ডের জন্য অশৃঙ্খল কর্মকাণ্ডের জন্য অভিযুক্ত না করতে পারে এবং তাদের সম্মানহানি না হয়।
তিনি বলেন, আমি মনে করি না আমার বক্তব্যে বিকৃত করা হয়েছে। তবে আংশিক বক্তব্যটা কাট করে তারা (এনসিপি) কথা বলেছে বলে আমার মনে হয়। কারণ আমি আমার বক্তব্যের শেষ লাইনে বলেছি যে ওখানে কোনো জুলাই যোদ্ধা সঠিক কোনো জুলাই অভ্যুত্থানের সাথে জড়িত কোনো সংগঠন অথবা ব্যক্তি ওই বিশৃঙ্খল ঘটনার সাথে জড়িত থাকতে পারে না। জড়িত থাকতে পারে বলে আমি বিশ্বাস করি না।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]