শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ করে হত্যার ষড়যন্ত্রের মামলায় খালাস পেয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও জুলাই বিপ্লবীদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন সাংবাদিক শফিক রেহমান।
মঙ্গলবার (২৭ মে) ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ তারিক এজাজের আদালত এ রায় দেন। রায় ঘোষণার সময় শফিক রেহমান এজলাসে উপস্থিত ছিলেন।
রায় ঘোষণার পর আদালত চত্বরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আজ আমি বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাতে চাই ম্যাডাম খালেদা জিয়াকে। তিনি বহু সভা-সমিতিতে আমার মুক্তি দাবি করেছিলেন। আমাকে গ্রেফতার করার পর তিনি দেশের আইনজীবীদের আমার পক্ষে দাঁড়াতে আহ্বান জানিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, এই মুহূর্তে স্মরণ করছি প্রয়াত আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী এবং প্রয়াত আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়াকে। এদের সঙ্গে নিরলসভাবে কাজ করেন অ্যাডভোকেট মো. আসাদুজ্জামান, জয়নুল আবেদিন মেজবাহ, মাসুদ তালুকদার, ব্যারিস্টার আনোয়ার হোসেন, ব্যারিস্টার ফারজানা শারমিন পুতুল, অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম, রাজীব আহসান চৌধুরী পাপ্পু, কামরুজ্জামান সুমন, শাকিল আহমেদ রিপন। তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এ সময় সহধর্মিণী তালেয়া ও ছেলে সুমিতের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন যায়যায়দিন সম্পাদক।
শফিক রেহমান বলেন, তিনি (তালেয়া রেহমান) এখন লন্ডনে চিকিৎসাধীন। আমার গ্রেফতারের দিন থেকে তার ওপরও অনেক ঝড়ঝাপটা গেছে। ধন্যবাদ জানাতে চাই- আমার ছেলে সুমিত রেহমানকে, যিনি আমার মুক্তির দাবিতে লন্ডনে কয়েক হাজার ব্রিটিশ ভোটারের স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছিলেন।
শফিক রেহমান বলেন, সুদীর্ঘ ৯ বছর পরে সত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমি আন্তরিক ধন্যবাদ ও প্রশংসা করছি বিচারকদের। তারা এটাও প্রতিষ্ঠা করলেন, এখন বিচার বিভাগ স্বাধীন।
শফিক রেহমান বলেন, আমি সর্বোপরি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানাই জুলাই বিপ্লবীদের, যারা নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন ও জীবিত আছেন তাদের সবাইকে। তাদের আত্মত্যাগের ফলেই আজ সত্যটা প্রতিষ্ঠিত হলো।
মামলা সূত্রে জানা যায়, সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ এবং হত্যাচেষ্টার ষড়যন্ত্রের মামলায় গত বছরের ১৭ আগস্ট ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আসাদুজ্জামান নূরের আদালত আমার দেশ পত্রিকার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ও সাংবাদিক শফিক রেহমানসহ পাঁচজনের পৃথক দুই ধারায় সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন। দণ্ডপ্রাপ্ত অপর তিন আসামি হলেন- জাসাস নেতা মোহাম্মদ উল্লাহ, রিজভী আহমেদ সিজার ও মিজানুর রহমান ভূঁইয়া।
আসামিদের দণ্ডবিধির ৩৬৫ ধারায় (অপহরণ) পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেন আদালত। জরিমানার টাকা অনাদায়ে তাদের আরও একমাসের কারাভোগের আদেশ দেওয়া হয়। এছাড়া একই আইনে ১২০-খ ধারায় (অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র) দুই বছরের কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক মাসের কারাদণ্ড দেন আদালত। দুই ধারার সাজা একসাথে চলবে বলে বিচারক রায়ে উল্লেখ করেন।
এ মামলায় গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর এ মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি সাংবাদিক শফিক রেহমান ও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান ভূঁইয়ার সাজা এক বছরের জন্য স্থগিত করে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মাহমুদুর রহমান কারাগারে যাওয়ার পরদিন ৩০ সেপ্টেম্বর ঢাকার আদালতে এ মামলায় সাজার বিরুদ্ধে আপিল দায়েরের শর্তে আত্মসমর্পণ করে জামিন পান শফিক রেহমান। পরে গত ১০ ফেব্রুয়ারি এ মামলায় খালাস পান দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে বিএনপির সাংস্কৃতিক সংগঠন জাসাসের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ মামুনসহ বিএনপি ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটভুক্ত অন্যান্য দলের উচ্চপর্যায়ের নেতারা রাজধানীর পল্টনের জাসাস কার্যালয়ে, আমেরিকার নিউ ইয়র্ক শহরে, যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার আসামিরা একত্রিত হয়ে যোগসাজশে প্রধানমন্ত্রীর ছেলে ও তার তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে আমেরিকায় অপহরণ করে হত্যার ষড়যন্ত্র করেন। ওই ঘটনায় ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ফজলুর রহমান ২০১৫ সালের ৩ আগস্ট বাদী হয়ে পল্টন মডেল থানায় মামলাটি করেন। ২০১৮ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি এই পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। এ মামলায় সজীব ওয়াজেদ জয়সহ ১২ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]