গ্রামীণফোন কাস্টমার ম্যানেজারের প্রতারণা, ভাড়া থাকেন লাখ টাকার ফ্ল্যাটে


ওরা ভিআইপি প্রতারক। ধনাঢ্য ব্যবসায়ী, শিল্পপতিদের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে প্রতারণা শুরু করে। প্রথমেই গ্রামীণফোনের তেজগাঁও নাবিস্কো মোড়ে কাস্টমার কেয়ার সেন্টারের ম্যানেজার অনিক মাহমুদ রুবেল মোবাইল ফোনের গ্রাহকের গোপন তথ্য বিশেষ করে ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্র ও স্থায়ী-অস্থায়ী ঠিকানা সংগ্রহ করে।
এরপর কখনো সমাজকর্মী, কখনো সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের জন্য তহবিল সংগ্রহে নিয়োজিত কর্মী, কখনো চাকরিপ্রার্থী কিংবা প্রেমের অভিনয় দিয়ে শুরু করে ফোনালাপ। কখনো প্রয়োজন দেখিয়ে সাক্ষাৎ। সামান্য হৃদ্যতা হয়ে গেলে তো কথাই নেই। ব্যক্তিগত স্পর্শকাতর বা গোপন কথার রেকর্ড জমায় মুঠোফোনে। এরপর শুরু হয় ব্ল্যাকমেইল। কেউ ২ লাখ, কেউবা ২০ লাখ টাকা দিয়ে নিস্তার পান।
এভাবে গ্রামীণফোনের কাস্টমার কেয়ার সেন্টার থেকে গ্রাহকের তথ্য চুরি করে পরিকল্পিতভাবে মানুষকে ফাঁদে ফেলে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার একটি চক্রকে গ্রেফতার করেছে হাতিরঝিল থানা পুলিশ।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- গ্রামীণফোন কোম্পানির কাস্টমার সার্ভিস ম্যানেজার রুবেল মাহমুদ অনিক (২৭), পারভীন আক্তার নুপুর (২৮), তার বড় বোন শেফালী বেগম (৪০) ও মতিঝিলের পারফেক্ট ট্রাভেল এজেন্সির কর্মচারী শামসুদ্দোহা খান ওরফে বাবু (৪০)।
গ্রেফতারকৃত গ্রামীণফোনের কাস্টমার কেয়ারের ম্যানেজার অনিক মাহমুদ রুবেল ২০-২৫ জনকে ব্ল্যাকমেইল করার কথা স্বীকার করেছেন। এই চক্রের শিকারের মধ্যে আছেন চিকিৎসক, প্রকৌশলী, রাজনীতিবিদ, অবসরপ্রাপ্ত সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা, ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি। পাশাপাশি সিএনজি চালক, দর্জি, ফলমূল বিক্রেতার মতো পেশার লোকজনও আছে।
পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, দৃশ্যমান কোনও পেশা না থাকলেও সপ্তম শ্রেণি পাস নূপুর থাকেন গুলশানের নিকেতনে। তার ফ্ল্যাট ভাড়া মাসে লাখ টাকা। তার মেয়ের স্কুলের বেতন প্রতিমাসে প্রায় ১০ হাজার টাকা। তিনি বনানীর ১১নং রোডের ই-ব্লকের গ্রিন ডিলাক্স হাউজ নামের একটি জিমে নিয়মিত যান। সেখানে প্রতিমাসে ৩০ হাজার টাকা বিল দেন। গুলশান থানায় তিনি একবার অভিযোগ করেছিলেন যে তার ৬টি লিপস্টিক চুরি হয়েছে, যেগুলোর দাম ৯০ হাজার টাকা।
তিনি বলেন, চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন ব্যক্তিকে টার্গেট করে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ব্ল্যাকমেইল করেন। তাদের টার্গেট ছিল মূলত ষাটোর্ধ ব্যক্তিরা। টার্গেট করা ব্যক্তির সব ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে পরিবারের সব সদস্যকে জানিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে পাঁচ লাখ থেকে শুরু করে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত আদায় করেন তারা।
পুলিশ জানায়, ভুয়া আইনজীবীর মাধ্যমে ফোন করে নারী নির্যাতন এবং ধর্ষণ মামলার হুমকি দিয়ে ভয় দেখানো হয়। এই চক্রকে টার্গেট করা ব্যক্তির ব্যক্তিগত তথ্য সরবরাহ করে গ্রামীণফোনের কাস্টমার সার্ভিস সেন্টারের ম্যানেজার রুবেল মাহমুদ অনিক।
বৃহস্পতিবারের রাজধানীর মোহাম্মদপুর, হাতিরঝিল ও বাড্ডা এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করে হাতিরঝিল থানা পুলিশ। হাতিরঝিল থানায় দায়ের করা প্রতারণা এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের দুই মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখায় পুলিশ।আইনজীবী পরিচয়দানকারী ইসা নামে চক্রের এক সদস্য এখনও পলাতক।
যেভাবে ব্ল্যাকমেইল করা হয়: টার্গেট করা ব্যক্তির মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে নূপুরকে গ্রামীণফোন সার্ভিস সেন্টারে কর্মরত অনিক তাদের ব্যক্তিগত তথ্য সরবরাহ করে। বিস্তারিত এসব তথ্য নিয়ে নূপুর ওইসব ব্যক্তিকে হুমকি দিতে থাকে। নূপুরের চাহিদা অনুযায়ী টাকা না দিলে এমন হুমকি অব্যাহত থাকে। এমনকি তার সঙ্গে বিয়ে হয়েছে এমন কথা পরিবারের সদস্যদের জানানোর হুমকি দেওয়া হয়।
দাবীকৃত টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে নূপুরের বড়বোন শেফালী টার্গেট করা ব্যক্তিকে ফোন করে মামলার হুমকি দেয়। অনেকেই সম্মানের ভয়ে দাবীকৃত টাকা দিয়ে দেন। তবে কেউ টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে আইনজীবী পরিচয় দিয়ে ইসা নামে অপর এক সদস্য ওই ব্যক্তিকে ফোন করে মিথ্যা ও বানোয়াট ধর্ষণ মামলা বা নারী নির্যাতন মামলা করার হুমকি দেয়।
ইসা বিভিন্ন মিথ্যা ও বানোয়াট বিল ভাউচার তৈরি করার কথাও জানায়। এমনকি শারীরিক অসুস্থতার অজুহাতে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী টার্গেট করা ব্যক্তিকে ফাঁসানোর জন্য নামকরা চিকিৎসকদের কাছে গিয়ে প্রেসক্রিপশনে স্বামীর নাম অপশনে ওই ব্যক্তির (টার্গেট) নাম লিখে আনে নূপুর।
নূপুরের বোন শেফালী ক্লাস থ্রি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। তিনি চাঁদনী চক মার্কেটে স্কার্ফ, হিজাব ও বোরকার ব্যবসা করেন। শামসুদ্দোহা মতিঝিল দৈনিক বাংলা মোড়ে পারফেক্ট ট্রাভেল এজেন্সিতে ১৫ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করেন। অবিবাহিত শামসুদ্দোহা মোহাম্মদপুরে শেফালীর ফ্ল্যাটেই থাকতেন।
অনিক তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানাধীন নাবিস্কো মোড়ে অবস্থিত গ্রামীণফোন কাস্টমার সার্ভিস সেন্টারে ম্যানেজার হিসাবে কর্মরত। ইসা নিজেকে আইনজীবী ও একটি ল’ ফার্মে কাজ করে বলে পরিচয় দিয়েছেন।

কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
