প্রিয় স্কুল, বন্ধু, শিক্ষকদের মুখ কতদিন দেখিনা। জানি না আবার কবে দেখা হবে সবার সঙ্গে। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও দ্রুত ছড়িয়ে পড়া কোভিড -১৯ এর কারণে সেই ১৮ মার্চ থেকে শুরু হয়েছে আমার ঘর বন্দী জীবন।
শুরুর দিকে আইইডিসিআর এর সংবাদ সম্মেলনে দেখতাম বাংলাদেশে ৩ জন, কোনোদিন ৫ জন আবার কোনোদিন কেউ আক্রান্ত হননি। ধীরে ধীরে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। বর্তমান বাংলাদেশে আক্রান্তের সংখ্যা দুই লক্ষ ছাড়িয়েছে। আর মৃত্যু হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৮০০ জনের। করোনাভাইরাসের দিনগুলো আমি বিভিন্নভাবে কাটাচ্ছি। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর আমি ব্রাশ করি। তারপর হালকা নাস্তা খাই। এরপর পড়তে বসি।
করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উপদেশ দিনে ১৫-২০ বার হাত ধোয়া, গরম পানি পান করা, লেবুজল খাওয়া পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকা ইত্যাদি পালন করছি। মাস্ক ব্যবহার করছি ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলার চেষ্টা করছি। সকালে বইপড়ার পর বাবা-মা’র সাথে গল্প করি। তারপর নাস্তাা খেয়ে, একটু মোবইল দেখি। সব কাজ শেষে দুপুরে খেয়ে একটু বিশ্রাম নেয়। তারপর আবার সন্ধ্যায় পড়তে বসি। পড়া শেষে একটু ইউটিউব দেখি। এখানে বলা প্রয়োজন প্রতিদিন সকালে আমি সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক কর্তৃক আয়োজিত অনলাইন ক্লাসে ক্লাস দেখি। আমার বাবা মায়ের সাথে হাসি ঠাট্টা করেও দিনের অনেকটা সময় কাটছে।
এরমধ্যেও একটা ক্ষোভ আছে। এই পাঁচ মাস বাসার জীবনটাকে বালতির মাছ মনে হচ্ছে। প্রতিদিন বিশ্বে অনেক মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে, মরছেও প্রায় ৫/৬ হাজার মানুষ। এটি একটি ‘পরোক্ষ যুদ্ধ’।
যে যুদ্ধে কেউ সরাসরি যুদ্ধ করতে পারে না কিন্তু মানুষের ক্ষতি হয় সেটাই ‘পরোক্ষ যুদ্ধ’। অথচ সারা বিশ্ব এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। এরমধ্যেও আমরা কিছু ভালো খবর পাচ্ছি। করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে মানুষ যখন নাজেহাল তখন সবচেয়ে উপকৃত হয়েছে প্রকৃতি। আমাদের কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দেখা গেছে শিল্পায়নপূর্ব যুগের পরিবর্তন। দূষিত পানির নদী এখন স্বর্গীয় জলাধার। বহুদিন পর বিশ্ব আবার দেখল স্বচ্ছ নীলাকাশ; শুনল পাখির কলকাকলি।
তবে একটা প্রশ্ন আমার মনে জাগে- পৃথিবী কি কোনোদিন জঞ্জালমুক্ত হবে? এটা নির্ভর করবে মানুষের আচরণের উপর। করোনা ভাইরাস আমাদের অনেক শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছে। আগামী পৃথিবীর মানুষের উপর নির্ভর করবে শিক্ষাটা কিভাবে কাজে লাগাবে। এখন আমার ভয় করছে। প্রতিদিন বাংলাদেশে ৩/৪ হাজার মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে ও ৪০-৫০ হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে। কিন্তু কেউ সরকারি নীতিমালা মানছে না। ভইরাসের পর মানুষ কিভাবে বসবাস করবে বা চলাচল করবে সে এক অষ্টম আশ্চর্যের বিষয়। সচেতন হলে ভালো, তা না হলে আর কী, দূষনেই বসবাস। সচেতন হওয়া আমাদের নিজেদের দায়িত্ব। নিজে সচেতন না হলে সুস্থভাবে বেঁচে থাকা ভার। আমার শুধু একটাই কামনা পৃথিবী যেন সুস্থভাবে চলে। আবার যেনো সব স্বাভাবিক হয়। পৃথিবী যেনো দ্রুত আরোগ্য লাভ করে। সামনেই ঈদ এবার হয়তো ঈদ বা দূর্গোৎসব এমনকি কোনো উৎসবই পালন করা যাবে না। যেমন করে আমরা ২৬ শে মার্চ ও পহেলা বৈশাখ পালন করতে পারলাম না। আর সবার কাছে আমার একটাই অনুরোধ সবাই সরকারী নির্দেশনা মেনে চলুন, ঘরে থাকুন, লোকসমাগম এড়িয়ে চলুন, মাস্ক ব্যবহার করুন। সুস্থ থাকুন, নিরাপদে থাকুন।
অর্ঘ্য ঘোষ- শিক্ষার্থী, ৭ম শ্রেণি, তালা বি,দে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]