রাজধানীর বাড্ডায় ছেলেধরা গুজবে তাসলিমা বেগম রেনু (৪০) নামের এক নারীকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় করা মামলার তদন্ত এক বছরেও শেষ হয়নি। তদন্ত কর্মকর্তা বলছেন, করোনা পরিস্থিতিতে মামলার তদন্তকাজ এগোয়নি।
গত বছরের এই দিনে তাসলিমা চার বছরের মেয়ের ভর্তির বিষয়ে খোঁজ নিতে উত্তর-পূর্ব বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যান। সে সময় ছেলেধরা সন্দেহে লোকজন তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করে। এই ঘটনায় তাঁর ভাগনে সৈয়দ নাসির উদ্দিন অজ্ঞাতনামা ৪০০-৫০০ ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা করেন।
মামলার তদন্ত নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে তাসলিমার স্বজনেরা বলছেন, মামলাটি যে অবস্থায় ছিল, এখনো সেই অবস্থায় আছে। নতুন কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
তাসলিমা হত্যা মামলার তদন্ত কোন পর্যায়ে আছে, তা জানতে চাইলে গত শনিবার রাতে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) প্রধান মো. আবদুল বাতেন বলেন, এ বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। তিনি এ ব্যাপারে মামলার তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক আবদুল হক বলেন, করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর মামলার তদন্ত নিয়ে কাজ করতে পারেননি। ঈদুল আজহার পর জোরেশোরে মামলার তদন্ত নিয়ে নামবেন।
গত বছরের নভেম্বরে ডিবি তাসলিমা হত্যা মামলার তদন্তের দায়িত্ব পায়। সে সময় তদন্তসংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা বলেছিলেন, ভিডিও ফুটেজ ও স্থিরচিত্র বিশ্লেষণ করে তাসলিমা হত্যায় অন্তত ৫০ জন নারী-পুরুষের জড়িত থাকার তথ্য পেয়েছেন তাঁরা। তবে গত শনিবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, সেদিনের ভিডিও ফুটেজ ও স্থিরচিত্রে ঘটনাস্থলে অনেককেই দেখা গেছে। কিন্তু এতে সবার জড়িত থাকার তথ্য-প্রমাণ মেলেনি। ওই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৮ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা গেছে। মামলার বাদী সৈয়দ নাসির উদ্দিন বলেন, তদন্ত নিয়ে তাঁরা হতাশ। বাড্ডা থানা মামলাটি তদন্তের সময় ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছিল। তাঁদের মধ্যে পাঁচজন জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।
এখনো মায়ের অপেক্ষায় তুবা
তাসলিমার মেয়ে তাসমিন মাহিরা তুবার বয়স এখন পাঁচ বছর। সে এবার শিশু শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে। আর ছেলে তাহসিন আল মাহির পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। দুজনই থাকে বড় খালা জয়নব বেগমের মহাখালীর বাসায়। জয়নব বেগম বলেন, ছোট্ট তুবাকে তার মায়ের মৃত্যুর খবর এখনো জানানো হয়নি। মায়ের জন্য তার কান্না থামে না। প্রতিরাতেই ঘুমাতে গেলে সে মায়ের জন্য বিলাপ করে বলে, ‘মা আমার জন্য কেন জামা নিয়ে আসছে না। মাকে ছাড়া আমি ঘুমাব না।’ তখন তাকে বলা হয়, তার মা তার মামার সঙ্গে আমেরিকায় আছেন। সেখান থেকে তাঁরা শিগগির ফিরে আসবেন। মায়ের জন্য মাহিরও মনমরা হয়ে থাকে।
সুত্র প্রথম আলো
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]