পবিত্র হজ পালনের জন্য বাংলাদেশের মুসল্লিরা সৌদি আরবে গেছেন। সৌদি আরবে যাওয়া মুসল্লিদের জন্য অনন্য সুবিধা দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। এদের মধ্যেই এক সৌদি কোম্পানি জানিয়েছে, হজ মৌসুমে হাজিদের মধ্যে তারা আব-এ-জমজমের চার কোটি বোতল বিতরণের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। বহুগুণে সমৃদ্ধ মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে পাওয়া বরকতময় নেয়ামতের পানি জমজম। জমজমের এক ফোঁটা পানির যে নিজস্ব খনিজ গুণাগুণ আছে, তা পৃথিবীর অন্য কোনো পানিতে নেই। জমজমের পানির গুণাগুণ ও উপকারিতার বিষয়টি চিকিৎসাবিজ্ঞানে প্রমাণিত।
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, সৌদি আরবের মক্কায় মসজিদুল হারামের ভেতরে জমজম কূপটি অবস্থিত। মুসলিমদের কাছে পবিত্র হিসেবে বিবেচিত কাবাঘরের মাত্র ২০ মিটার দূরে এর অবস্থান।
প্রতি বছর যে লাখ লাখ মুসলিম হজ বা ওমরাহ পালন করতে সৌদি আরবে যান, তাদের বেশিরভাগই জমজম কূপের পানি নিয়ে দেশে ফেরেন।
হজ পালন করে এসেছেন অথচ জমজম কূপের পানি আনেননি এমন মানুষ বেশ বিরল।
শুধু তাই নয়, পরিবারের সদস্য এবং আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে এই পানি বিতরণের রেওয়াজ দেখা যায়। তাদের প্রত্যাশা— এই ‘পবিত্র পানি’ পান করলে বিপদ, রোগ কিংবা যে কোনো অমঙ্গল দূর হবে।
কিন্তু মুসলিমদের কাছে কেন জমজম কূপের পানি এতে গুরুত্বপূর্ণ? সেটির কিছু ঐতিহাসিক দিক রয়েছে।
মুসলিমদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ কেন: ইসলামের ইতিহাসবিদরা বলছেন, আল্লাহর নির্দেশে অনুর্বর মরুভূমিতে ইব্রাহিম শিশুপুত্রসহ মা হাজেরাকে রেখে আসেন। এর উদ্দেশ্য হলো— এর মাধ্যমে মক্কা জায়গাটা আবাদ হবে, কাবাঘর পুনর্নির্মাণ হবে, জমজম চালু হবে, কাবাঘরে মানুষ হজ করতে আসবে। মূলত এই কৌশলের অংশ হিসেবে জমজম কূপের সৃষ্টি হয়।
তবে এটি এত গুরুত্বপূর্ণ কেন মুসলিমদের কাছে?
বাংলাদেশের ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ বলেন, ‘কাবাঘর পুনর্নির্মাণের পর আল্লাহর আদেশে বিশ্ববাসীকে হজের দাওয়াত দিয়েছিলেন ইব্রাহিম। এই হজের ইতিহাসের সঙ্গে জমজমের ইতিহাস অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত’।
‘তবে হজের সময় জমজম কুয়ার কাছে উপস্থিত হওয়া বা পানি পান করা হজের আহকাম, আরকান বা ফরজ– ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত নয়। হজের অংশ হিসেবে তাওয়াফের পরে সাঈর আগে হাজিরা মহানবীর সুন্নত হিসেবে পানি পান করেন’।
মুসলিম ইতিহাসবিদ ইমাম তাবারানির ‘আল মুজামুল কাবির’ গ্রন্থে বলা হয়েছে— মুসলিমদের নবী মুহাম্মদ নিজেই জমজমের পানিকে শ্রেষ্ঠ পানি হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন- ‘জমজম পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ পানি। এতে রয়েছে খাদ্য ও রোগ থেকে মুক্তি’।
রশীদ বলেন, ‘এটি আল্লাহ প্রদত্ত একমাত্র কুয়া পৃথিবীতে, আর নেই। ফলে মুসলিমরা বিশ্বাস করে আল্লাহর রহমতের এ পানি খেলে রোগ-বালাই, বিপদ-আপদ মুক্ত হবে। তাই এটি হাজিরা নিয়ে আসেন ও বিশ্বাস থেকে পান করেন। এসব কারণে জমজমের গুরুত্ব এত বেশি। এমনকি হাদিসেও এর ফজিলত বর্ণনা করা হয়েছে’।
কূপটির বৈশিষ্ট্য ও রক্ষণাবেক্ষণ
‘সৌদি গেজেট’ সংবাদপত্র অনুযায়ী, জমজমের কূপটিকে বিশ্বের ‘প্রাচীনতম কূপ’ বলে ধারণা করা হয়। কারণ গত পাঁচ হাজার বছর ধরে এখান থেকে একটানা পানি পাওয়া যাচ্ছে।
সৌদি আরবের জিওলজিক্যাল সার্ভের জমজম স্টাডিজ অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার এই পানির কুয়োর মান, গভীরতা, অম্লতার মাত্রা বা তাপমাত্রার দিকে নিয়মিত নজর রাখে।
জমজম স্টাডিজ অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার এই কূপের পানি সরবরাহ ও বণ্টন ব্যবস্থা পরিচালনা করে।
এটি মক্কা ও মদিনায় ফিল্টারিং ও স্টোরেজ প্ল্যান্টের পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের গুণমানের নিশ্চয়তা বিধান করে।
এটি ৩০ মিটার গভীর। তারপরও এটি প্রতি সেকেন্ডে সাড়ে আঠারো লিটার পানি পাম্প করতে পারে।
আরব নিউজ সংবাদপত্রে বলা হয়েছে, ২০১৩ সালে ৭০০ মিলিয়ন সৌদি মুদ্রা ব্যয় করে জমজম কূপের পানি উত্তোলন, তদারকি ও বিতরণ (কেপিজেড ডব্লিউ) প্রকল্প করেছে।
মসজিদুল হারামের পাঁচ কিলোমিটার দক্ষিণে কুদাই এর কেপিজেড ডব্লিউ প্ল্যান্টে ভূগর্ভস্থ পাইপের সাহায্যে পানি সরবরাহ করা হয়। এখানে পানি পরিশোধন করে জীবাণুমুক্ত করা হয়।
পরে দুটি জলাধারে পানি সরবরাহ করা হয়। প্রথমটি কুদাইতে যার ধারণক্ষমতা ১০ হাজার ঘনমিটার। একই সঙ্গে মক্কার মসজিদে পানির ফোয়ারাগুলোতে সরবরাহ করা হয়।
কুদাই থেকে মদিনার বাদশাহ আবদুল আজিজ সাবিল জলাধারে প্রতিদিন ট্যাংকার ট্রাকের একটি বহর চার লাখ লিটার পর্যন্ত পানি পরিবহণ করা হয়। এর ধারণক্ষমতা ১৬ হাজার ঘনমিটার। এখান থেকে নবীর মসজিদে পানি সরবরাহ করা হয়।
পরিবহণের সময় পানি যাতে কোনোভাবে দূষিত না হয়, সেদিকেও লক্ষ্য রাখা হয়।
জমজম কূপ সৃষ্টির পর থেকে বালু ও পাথর দিয়ে ঘেরা ছিল। দড়ি ও বালতি দিয়ে এই কূপ থেকে পানি সংগ্রহ করা হতো।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]