জলবায়ু পরিবর্তন বর্তমান বিশ্বের অন্যতম গুরুতর সমস্যা, যা পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য, এবং মানবজীবনের ওপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলছে। এই সমস্যা মোকাবিলায় বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার মধ্যে রসায়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। রসায়নের সহায়তায় জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ শনাক্ত করা, এর ক্ষতিকর প্রভাব কমানো এবং টেকসই সমাধান তৈরি করা সম্ভব হয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম গ্রিনহাউস গ্যাসের অতিরিক্ত নিঃসরণ। রসায়নবিদরা এই গ্যাসগুলোর (যেমন: কার্বন ডাই অক্সাইড, মিথেন, এবং নাইট্রাস অক্সাইড) রাসায়নিক গঠন ও প্রভাব বিশ্লেষণ করে তাদের বায়ুমণ্ডলে উপস্থিতি এবং ভূমিকা নির্ধারণ করেন। এই গবেষণার ফলে গ্রিনহাউস প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো সম্ভব হয়েছে।
জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের প্রধান উৎস। রসায়নবিদরা টেকসই জ্বালানির বিকাশে কাজ করছেন।
হাইড্রোজেন জ্বালানি: রসায়নবিদ্যা পানি থেকে হাইড্রোজেন আলাদা করে তা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার উপযোগী করেছে।
বায়োফুয়েল: পুনর্নবীকরণযোগ্য জৈব পদার্থ থেকে জ্বালানি উৎপাদনে রসায়নের অবদান গুরুত্বপূর্ণ।
সৌর শক্তি: সৌর প্যানেল তৈরিতে ব্যবহৃত সিলিকন ও অন্যান্য উপকরণের উন্নয়ন রসায়নের মাধ্যমেই সম্ভব হয়েছে।
রসায়ন বিজ্ঞান এমন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে যা বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড সরিয়ে ভূগর্ভে সংরক্ষণ করতে পারে। কার্বন ক্যাপচার অ্যান্ড স্টোরেজ (CCS) প্রযুক্তি এই ক্ষেত্রে একটি বড় উদাহরণ। পাশাপাশি, কার্বন ডাই অক্সাইডকে পুনর্ব্যবহারযোগ্য পণ্য হিসেবে রূপান্তর করার জন্য নতুন রাসায়নিক প্রক্রিয়াও উন্নত করা হয়েছে।
রসায়ন শিল্পে গ্রিন কেমিস্ট্রি ধারণা প্রচলিত হয়েছে, যার মাধ্যমে পরিবেশে কম ক্ষতিকর রাসায়নিক উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে। এছাড়া, প্লাস্টিক দূষণ কমাতে বায়োপ্লাস্টিক এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্য পলিমারের ব্যবহার বাড়ছে।
বায়ু, পানি এবং মাটি দূষণ নিয়ন্ত্রণে রসায়নের বিশেষ অবদান রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ক্যাটালিটিক কনভার্টার গাড়ির নির্গমিত গ্যাসের রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটিয়ে দূষণ কমায়। পানিতে ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ নির্ধারণ ও তা অপসারণে রসায়নের ব্যবহার অপরিহার্য।
রসায়নের মাধ্যমে তাপমাত্রা পরিবর্তন সহ্য করতে সক্ষম উন্নত উপকরণ উদ্ভাবন সম্ভব হয়েছে। যেমন, শক্তি-সাশ্রয়ী গ্লাস, উন্নত নিরোধক (ইনসুলেটর) এবং সৌরশক্তি সঞ্চয়কারী উপকরণ।
রসায়ন বিজ্ঞানের সহায়তায় জলবায়ু পরিবর্তনের মডেল তৈরি করা হয়, যা বিভিন্ন রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া বিশ্লেষণ করে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেয়। এর ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের ভবিষ্যৎ প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি পায়।
জলবায়ু পরিবর্তন একটি বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ, যার সমাধানে রসায়ন অপরিসীম ভূমিকা পালন করছে। এটি কেবল সমস্যার কারণ চিহ্নিত করতেই নয়, বরং তার টেকসই সমাধান দিতেও সক্ষম। শক্তি উৎপাদন থেকে দূষণ নিয়ন্ত্রণ, গ্রিন কেমিস্ট্রি থেকে কার্বন ক্যাপচার—প্রতিটি ক্ষেত্রে রসায়ন ভবিষ্যতের জন্য একটি টেকসই পৃথিবী গড়তে সহায়ক। অতএব, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় রসায়নের এই ভূমিকা আরও বিস্তৃত এবং কার্যকর করার জন্য গবেষণা এবং উন্নয়নে বিনিয়োগ বাড়ানো প্রয়োজন।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]