জাহাঙ্গীর হোসেন, (কলারোয়া): সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌর এলাকার গোপিনাথপুরের ঈমান আলী সরদারের ছেলে মেহেদী হাসান পানি ফল চাষ করে এলাকায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। দীর্ঘ ১০ বছর ধরে তিনি এই চাষের সঙ্গে যুক্ত থেকে নিজের ভাগ্য পরিবর্তনের পাশাপাশি আশপাশের বহু বেকারের কর্মসংস্থানের সুযোগও তৈরি করেছেন।
বর্তমানে তিনি প্রায় ৮ বিঘা জমিতে পানি ফল চাষ করছেন। মৌসুমজুড়ে প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ জন শ্রমিক এ কাজে নিয়োজিত থাকেন। এবছর তার খরচ হয়েছে প্রায় ১ লাখ টাকা। তবে তিনি আশাবাদী, পানি ফল বিক্রি করে এবার তার আয় হবে ৮ লাখ টাকারও বেশি।
ইতোমধ্যে যশোর–সাতক্ষীরা মহাসড়কের কলারোয়া পৌরসভার গোপিনাথপুর এলাকায় সড়কের দুই পাশে বসেছে অস্থায়ী পানি ফলের দোকান। মিষ্টি ও রসালো পানি ফল প্রতি কেজি ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। চলতি পথে যাত্রীরা গাড়ি থামিয়ে কিনে খাচ্ছেন, আবার অনেকে পরিবারের জন্য নিয়ে যাচ্ছেন।
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পাইকাররাও প্রতিদিন এখান থেকে পানি ফল সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছেন। এতে একদিকে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে, অন্যদিকে ক্রেতারাও পাচ্ছেন মৌসুমি এই ফলের স্বাদ।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সাতক্ষীরার দক্ষিণাঞ্চলের কালীগঞ্জ থেকে পানি ফল চাষের সূচনা হয়। ধীরে ধীরে কলারোয়া উপজেলাসহ আশপাশের এলাকায় এর জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। বর্তমানে শুধু কলারোয়া পৌর এলাকাতেই প্রায় ১০ জন কৃষক পানি ফল চাষ করছেন। এতে নারী-পুরুষ উভয়েরই নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে।
চাষী মেহেদী হাসান বলেন “পানি ফল চাষ লাভজনক হলেও ধৈর্য ও যত্নের প্রয়োজন। আমি দীর্ঘদিন ধরে এই চাষ করছি। নিজের পরিবারের পাশাপাশি অনেকের জীবিকার সুযোগ তৈরি হয়েছে এতে। সরকারিভাবে যদি সহযোগিতা ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, তবে আরও অনেকে পানি ফল চাষে আগ্রহী হবে।”
কলারোয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এস. এম. এনামুল বলেন, “বর্ষার মৌসুমে জলাবদ্ধ জমিতে অন্য ফসল হয় না। সেখানে পানি ফল চাষ করে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। এতে খরচ তুলনামূলকভাবে কম হলেও বাজারে চাহিদা বেশি। আমরা সবসময় পানি ফল চাষীদের নানা ধরনের পরামর্শ দিচ্ছি।
এই চাষের একটি ভালো দিক শুষ্ক মৌসুমে একই জমিতে ধানসহ অন্যান্য ফসল চাষ করলে তেমন সার প্রয়োগেরও প্রয়োজন হয় না। নতুন করে কেউ এই চাষ শুরু করতে চাইলে আমরা সার্বিক সহযোগিতা করবো।”
স্থানীয় কৃষকদের মতে, সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ নিলে পানি ফল চাষ শুধু কলারোয়া নয়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। এতে শুধু কৃষক নয়, স্থানীয় ফল বিক্রেতা, পরিবহন শ্রমিক থেকে শুরু করে সাধারণ খুচরা ব্যবসায়ী—সবাই উপকৃত হবেন। সচেতন মহলের ধারণা, কৃষি অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে পানি ফল চাষ এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিতে পারে।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]