দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৪১ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। এ ফলাফলে কারও সন্দেহ থাকলে চ্যালেঞ্জের আহ্বান দিয়েছেন তিনি।
সোমবার (৮ জানুয়ারি) দুপুরে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে এ আহ্বান জানান সিইসি। ভোটপড়ার চূড়ান্ত হার জানিয়ে তিনি বলেন, এখন যে ফলাফল দাঁড়িয়েছে সেটা হচ্ছে ৪১ দশমিক ৮ শতাংশ। কারও যদি সন্দেহ-দ্বিধা থাকে, ইউ ক্যান চ্যালেঞ্জ ইটএবং এটা পরীক্ষা করে দেখতে পারেন।
সিইসি বলেন, রেজাল্টগুলো আসছে যদি মনে করেন বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, তাহলে ইউ আর মোস্ট ওয়েলকাম; ওটাকে চ্যালেঞ্জ করে আমাদের অসততা আপনারা পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। এখন ফাইনাল যে পারসেন্টেজটা হচ্ছে ৪১ দশমিক ৮ শতাংশ।
রোববার (৭ জানুয়ারি) ভোটগ্রহণ শেষে বিকেল সাড়ে ৫টার ব্রিফিংয়ে সিইসি বলেছিলেন, নির্বাচনে ৪০ শতাংশেরে মতো ভোট পড়েছে। তবে এটা নিশ্চিত নয়, প্রকৃত হিসাব এখন বলা যাবে না। ভোটের হারের এই হিসাবে কিছুটা ব্যত্যয় হতে পারে, সব গণণার পর ভোটের হার বাড়তে পারে, বাড়তে নাও পারে। তার আগে বিকেল ৩টায় ইসি সচিব জানান, ভোট পড়েছে ২৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ।
এক ঘণ্টায় ভোটের ব্যবধান বাড়লো কীভাবে- এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, বিকেল ৩টা না। সেটা ২টা পর্যন্ত রেজাল্ট ছিল।
ইসি সচিব ৩টার তথ্য জানিয়েছেন- এমন বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, এটা আপনারা একটা কাজ করতে পারেন। টোটাল রেজাল্টটা যখন চলে আসে। আসার পরে কে কতটা ভোট পেলো। ২৯৮ সংসদীয় আসনের একজন দুইজন তিনজন চারজন ওটাকে যোগ করলে একটা যোগফল বের হয়। এটা কিন্তু খুব কঠিন নয়। লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি নয় এটাকে যোগ করে এক্সেলে ফেলে দিলে পার্সেন্টেজটা টিপ দিলেই বেরিয়ে আসে।
তিনি বলেন, যখন আমি ২টার সময় বলি তখন কোনোভাবেই এটা সঠিক পুরোপুরি সঠিক হওয়ার কথা নয়। যখন ৪টার সময় বলি এটা কোনোভাবেই সঠিক হওয়ার কথা নয়। যখন রাতের ১০টায় বলি যদি সব চলে আসে। এখন যদি বলি সব চলে আসছে তাহলে দেখা যাবে। এখন যে রেজাল্টটা দাঁড়িয়েছে ৪১.৮ শতাংশ।
এর আগে দুপুর পৌনে ১টার দিকে জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল সিইসির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। প্রতিনিধিদলে দেশটির নির্বাচনী পর্যবেক্ষকরাও ছিলেন।
সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, জাপানের নির্বাচনী পর্যবেক্ষকদল আমাদের সঙ্গে সৌজন্যে সাক্ষাৎ করেছেন। তাদের মূল উদ্দেশ্য আমাদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা, তারা ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছেন। একটা রিপোর্ট দেবেন। তাদের ভাষ্য তারা অত্যন্ত সন্তুষ্ট।
তিনি আরও বলেন, তাদের একজন ১৫-১৬টা কেন্দ্রে গিয়েছেন। আরেকজন ৪-৫টা কেন্দ্রে গিয়েছেন। সব জায়গায় আমাদের যে পোলিংয়ের দায়িত্ব ছিলেন তাদের সুনাম করেছেন, সুশৃঙ্খল পদ্ধতিতে যে নির্বাচন হয়েছে তার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। তারা সুশৃঙ্খল দেখতে পেয়েছেন এবং জানান এই নির্বাচনটা বাংলাদেশের জন্য দৃষ্টান্তস্বরূপ।
সিইসি আরও বলেন, বাংলাদেশের ভবিষ্যতের নির্বাচনের জন্য যদি অধিকতর কোনো সহযোগিতা কামনা করি তাহলে তারা আমাদের সহযোগিতা করতেও রাজি, টেকনিক্যালি কোনো কিছু লাগলে সেটা আমরা বসে সিদ্ধান্ত নেবো। প্রয়োজন হলে আমরা তাদের সহযোগিতা নেবো। আমার কাছে বেশ ভালো লেগেছে তারা উদারভাবে মন্তব্য করেছেন এবং ভবিষ্যতে সহযোগিতা করার যে প্রত্যাশা করেছেন এটা তাদের উদারতার বহিঃপ্রকাশ।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রায় শতভাগ আসনের ফলাফল ঘোষণা শেষে নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ। এর মাধ্যমে দলটি টানা চতুর্থবার ক্ষমতায় আসতে যাচ্ছে।
রোববার দিনগত রাত ৪টা পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন থেকে বেসরকারিভাবে ঘোষিত ২৯৮টি আসনের ফলাফলে আওয়ামী লীগ পেয়েছে ২২৩টি আসন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসন পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা, যাদের প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা। এ পর্যন্ত ৬১টি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে।
গত দুই সংসদে প্রধান বিরোধী দলের আসনে বসা জাতীয় পার্টি এবার পেয়েছে মাত্র ১১টি আসন। যে ২৬টি আসনে তারা আওয়ামী লীগের কাছে ছাড় পেয়েছিল তার অনেকগুলোতেই জামানত হারিয়েছে।
এর বাইরে আওয়ামী লীগেরই নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিকদের মধ্যে জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টি একটি করে আসন পেয়েছে। এছাড়া বিএনপি জোট থেকে বেরিয়ে আসা কল্যাণ পার্টি জয় পেয়েছে একটি আসনে।
বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর বর্জন, তুলনামূলক কম ভোটারের উপস্থিতি হলেও রোববার মোটাদাগে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয়েছে। এক প্রার্থীর মৃত্যুতে একটি আসনের ভোট পিছিয়ে যাওয়ায় এদিন ভোট হয় ২৯৯ আসনে।
বিকেল ৪টায় ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পরপরই কেন্দ্রেগুলোতে গণনা শুরু হয়। কেন্দ্রে গণনার ফলাফল প্রিজাইডিং কর্মকর্তারা পাঠান রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে। এরই মধ্যে বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল গণমাধ্যমকে জানান, প্রায় ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছে এবারের জাতীয় নির্বাচনে।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]