বাংলাদেশের মানুষের প্রধান খাদ্য ভাত, তাই আবাদি জমির প্রায় ৭০ শতাংশ ধান চাষ করা হয়। এমতাবস্থায়, অবশিষ্ট স্বল্প জমিতে বাড়তি মানুষের মুখে পুষ্টিকর সুষম খাবার পৌঁছানো একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমাদের স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি মুগ ডাল শারীরিক ও মানসিক বিকাশে আমিষ, আয়রন, ফাইবার, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়ামের ভাল উৎস হিসেবে কাজ করে।
তাছাড়া মুগডাল বায়ুমন্ডল থেকে নাইট্রোজেন নিয়ে নডিউল তৈরী করে এবং গাছের অবশিষ্টাংশ জমিতে মিশিয়ে দিলে জৈব রাসায়নিক সার তৈরী করে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে। বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট (বিনা) কর্তৃক উদ্ভাবিত বিনামুগ-৮ উচ্চ ফলনশীল ও স্বল্প-জীবনকাল সম্পন্ন হওয়ায় আমন-সরিষা-মুগ-আউশ শস্যবিন্যাসে সরিষা চাষের পরে এবং আউশ ধান চাষের পূর্বেই কৃষকেরা বাড়তি ফসল হিসেবে চাষ করতে পারে। তাছাড়া বিনামুগ-৮ এর প্রায় ৮০% পড একসাথে পাকে এবং হলুদ মোজাইক ভাইরাস সহনশীল। তাই কীটনাশক কম লাগে, ফলন খুব ভালো হয়।
বিনা উপকেন্দ্র, সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার আড়ংপাড়া গ্রামে কৃষকদের মাঝে প্রায় ১২০ কেজি বিনামুগ-৮ এর বীজ বিতরণ করা হয়েছিল এবং ফলন পেয়ে কৃষক খুশি। এই অঞ্চলের কৃষকদের সফলতা দেখে, অনেকেই বিনামুগ-৮ চাষে আগ্রহ প্রকাশ
করেছেন।
বিনামুগ-৮ এর চাষী আমিনুর রহমান জানান, আগে তার জমি এই সময়ে পতিত থাকতো বিনা উপকেন্দ্র, সাতক্ষীরার মাধ্যমে তিনি বিনামুগ-৮ এর চাষ শুরু করেন, জাতটিতে রোগ বালাই এর আক্রমণ কম এবং ফলন অনেক বেশী হবার ফলে সে আর্থিক ভাবে অনেক লাভবান হয়েছেন। তার সাফল্যে আশেপাশের জমির কৃষকেরা তাদের পতিত জমিতে বিনামুগ-৮ চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
বিনা উপকেন্দ্র সাতক্ষীরার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ড. মোঃ বাবুল আকতার বলেন, বিনামুগ-৮ জাতটি স্বল্প জীবনকাল, উচ্চ ফলনশীল ও হলুদ মোজাইক ভাইরাস
সহনশীল হওয়ায় ফলন ভাল হয়, কীটনাশক কম লাগে এবং চাষাবাদ খরচ অনেক কম।
তাছাড়া বিনামুগ-৮ মাটির জৈব গুনাগুন বৃদ্ধি করে। তাই কৃষক ভাইয়েরা এই জাত চাষ করে অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হবে। সভাপতি বিনার মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম বলেন, এই অঞ্চলের পতিত
জমি চাষের আওতায় নিয়ে আসতে যত বীজ সহায়তা লাগে বিনা তার জন্য সর্বাধিক সহযোগিতা করবে।
বৃহস্পতিবার (১৮ মে) সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার আড়ংপাড়া গ্রামে শস্য আহরণ উপলক্ষ্যে ডালক্ষেতের পাশেই অনুষ্ঠিত মাঠ দিবসে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম। বিনা উপকেন্দ্র্র, সাতক্ষীরার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ড. মোঃ বাবুল আকতারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিনার ময়মনসিংহ প্রধান কার্যালয়ের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও গবেষনা সমন্বয়ক ড. মোঃ সিদ্দিকুর রহমান, উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও প্রধান গবেষক ড.
শামসুন্নাহার বেগম, জৈব ছত্রাকনাশক সম্প্রসারণ কর্মসূচির কর্মসূচি-পরিচালক ড. মাহবুবা কানিজ হাসনা, সদর উপজেলার উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ মনির হোসেন প্রমুখ।
সমগ্র অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিনার বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মিলন কবীর।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]