গরু বা খাসির মাংস দিয়ে তৈরি বিভিন্ন খাবার খুবই মজাদার হয়ে থাকে। আর মাত্র কয়েকদিন পরেই আসছে কোরবানি ঈদ। এই ঈদে সবাই কমবেশি লাল মাংস খেয়ে থাকবেন। তবে অনেকেরই হয়তো জানা নেয়, দিনে কতটুকু মাংস খাওয়া উচিত সে সম্পর্কে। আর এ কারণে অতিরিক্ত মাংস খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, লাল মাংস স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। তবে সঠিক পরিমাণ অনুযায়ী খেলে শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার(হু) তথ্য অনুযায়ী, প্রক্রিয়াজাত মাংস ও লাল মাংস আপনার ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। তাই মাংস পরিমাপ অনুযায়ী খাওয়া উচিত।
মাংসের উপকারিতা
মাংস প্রোটিনের একটি দুর্দান্ত উৎস, তা সবারই জানা। এ ছাড়াও অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান থাকে মাংসে। যা আমাদের দেহের বিকাশ ঘটাতে কাজ করে। ভেড়া, গরুর মাংস, খাসির মাংস অর্থাৎ লাল মাংস আয়রনের একটি উৎস। এটি রক্তাল্পতা প্রতিরোধ করে।
সপ্তাহে একবার বা দুইবার লাল মাংস ডায়েটে রাখতেই পারেন। এতে শরীরের কোনো ক্ষতি হবে না। মাংসে থাকা উচ্চ প্রোটিন ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। যার ফলে দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা থাকে। গরু ও খাসির মাংসে আরও থাকে জিঙ্ক, ভিটামিন বি ১২, সেলেনিয়াম, ফসফরাস, নায়াসিন, ভিটামিন বি ৬, আয়রন এবং রিবোফ্লেভিন।
জিঙ্ক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, ফসফরাস দাঁত ও হাড়ের শক্তি বাড়ায়, আয়রন শরীরের পেশিগুলোতে অক্সিজেন প্রবাহে সহায়তা করেন এবং ভিটামিন বি১২ খাদ্য থেকে শক্তি যোগান দেয়।
প্রক্রিয়াজাত মাংস কী?
মাংস বিভিন্নভাবে প্রক্রিয়াজত করা হয়ে থাকে। যেমন- ধূমায়িতকরণ, লবণাক্তকরণসহ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে যখন এর সঙ্গে বিভিন্ন উপকরণ মেশানো হয়ে থাকে। বেকন, সসেজসহ মাংসের বিভিন্ন খাবার প্যাকজাত অবস্থায় কেনা হয়ে থাকে।
এসব প্যাকেটজাত মাংস প্রক্রিয়াজাত করা হয়ে থাকে। এই খাবারগুলোতে স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং লবণ উভয়ই বেশি থাকে। এ ছাড়াও ভিটামিন এবং খনিজও অনেক কম থাকে।
মাংস কতটুকু খাওয়া নিরাপদ?
গবেষণায় দেখা গেছে, যারা প্রতিদিন প্রায় ২১ গ্রাম লাল মাংস খান; তাদের তুলনায় যারা দিনে প্রায় ৭৬ গ্রাম লাল এবং প্রক্রিয়াজাত মাংস খান, তাদের অন্ত্রের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (এনএইচএস) এর নির্দেশনা অনুযায়ী, যারা নিয়মিত ৯০ এর বেশি লাল বা প্রক্রিয়াজাত মাংস খায়; তাদের কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকাংশেই বেড়ে যায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দৈনিক গরুর মাংস খাওয়ার নিরাপদ মাত্রা হলো, ৩ আউন্স বা ৮৫ গ্রাম। আনুমানিক একটা কম্পিউটারের মাউস বা একটি তাসের বান্ডিলের সমান টুকরো এই পরিমাণ মাংস খেতে পারবেন।
সেইসঙ্গে চর্বি ছাড়া মাংস খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞরা। যেমন- গরুর শরীরের ২টি অংশ আছে যাতে পাবেন চর্বি ছাড়া মাংস এবং এই অংশগুলোতে চর্বির পরিমাণ চামড়া ছড়ানো মুরগির থানের মাংসের চেয়েও কম। এই ২টি অংশ হলো রাউন্ড এবং সিরলইন।
এই অংশগুলোর মাংসে চর্বির পরিমাণ থাকে সর্বনিম্ন ৪.২ গ্রাম থেকে সর্বোচ্চ ৮.২ গ্রাম। যেখানে মুরগির থানের মাংসে অভ্যন্তরীণ চর্বির পরিমাণ থাকে ৯.২ গ্রাম। তাই আপনি গরু, খাসি বা মুরগি যে মাংসই খান না কেন তার থেকে দৃশ্যমান চর্বি আলাদা করে সলিড মাংস খেতে হবে। তাহলে সুস্থ থাকবেন।
প্রতিদিন মাংস খাওযার পরামর্শ কখনোই দেন না বিশেষজ্ঞরা। পুষ্টিবিদদের মতে, সপ্তাহে একবার বা দুইবার লাল মাংস রাখুন। পাশাপাশি শরীরে প্রোটিনের অভাব পূরণ করতে মাসের বিকল্প হিসেবে ডায়েটে রাখুন- মসুর, ছোলা, কিডনি বিন, মটর, মাখন, মটরশুটি, বেকড বিনস ইত্যাদি। পাশাপাশি প্রক্রিয়াজাত মাংস খাওয়া বাদ দিন। তাহলে শরীর থাকবে সুস্থ।
সূত্র: বিবিসি
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]