বাংলাদেশ দলিত ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠী অধিকার আন্দোলন (বিডিইআরএম), সাতক্ষীরা জেলা শাখার কমিটি গঠনের লক্ষ্যে এক সভা ১৩ অক্টোবর (সোমবার) দুপুর ১.৪০ টায় সাতক্ষীরা সরকারী কলেজ সংলগ্ন রাজারবাগান দাসপাড়া কালী মন্দির প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সংগঠনের জেলা শাখার সাবেক সভাপতি মন্টু কুমার দাস এর সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শিপন কুমার রবিদাস।
সংগঠনের জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক দুলাল চন্দ্র দাশ এর সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন বিডিইআরএম এর তালা উপজেলা শাখার সভাপতি সরস্বতী দাস, সাতক্ষীরা পৌর কমিটির সভাপতি কার্তিক দাশ, সাধারণ সম্পাদক অসীম দাস, সাংগঠনিক সম্পাদক গোপাল দাস, খুলনা বিভাগীয় দলিত যুব ফোরামের সভাপতি বিধান দাস, রাজারবাগান দাসপাড়া কালী মন্দির কমিটির সভাপতি প্রকাশ দাস, দলিতনেতা গোবিন্দ দাস, দিলিপ দাস, চরণ দাস, দলিতনেত্রী রিনা দাস, রত্না রানী দাস, বৃষ্টি দাস প্রমুখ।
বক্তব্য প্রদানকালে সংগঠনের তালা উপজেলা শাখার সভাপতি সরস্বতী দাস বলেন, “বিগত সময়ে দলিতরা সরকারী সুযোগ-সুবিধা তেমন একটা পেত না। কিন্তু এখন অনেকটাই অগ্রগতি হয়েছে। আমি ২০০৮ সাল থেকে দলিতদের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আগামীতেও কাজ করবো। অধিকার কেউ কাউকে হাতে তুলে দেয়না, আদায় করে নিতে হয়। তাই আমাদের সচেতনভাবে আন্দোলনকে এগিয়ে যেতে হবে। ”
বিডিইআরএম-সাতক্ষীরা পৌর শাখার সভাপতি কার্তিক দাশ বলেন, “আমি পেশায় একজন ভ্যান চালক। কিন্তু পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য সর্বোচ্চ আন্তরিকতা দিয়ে কাজ করার চেষ্টা করি। এরইমধ্যে ১৩০ জনকে নিয়ে রাজারবাগান ঋষিপাড়া শ্রমজীবি সমবায় সমিতি নামে একটি নিবন্ধন পেয়েছি। সমিতির মাধ্যমে পাড়ার মানুষের কল্যাণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। একইসাথে বিডিইআরএম ও নাগরিক উদ্যোগ এর মাধ্যমে আমরা অফিস-আদালতে গিয়ে কথা বলতে সাহস পেয়েছি।”
সংগঠনের জেলা সাধারণ সম্পাদক দুলাল চন্দ্র দাশ বলেন, “জন্ম থেকেই আমরা নানান কায়দায় বৈষম্যের শিকার হয়েছি, হচ্ছি। মুসলিম কেউ মাংস কাটার কাজ করলে কসাই অথচ একই কাজ একজন ঋষি সম্প্রদায়ের কেউ করলে তাকে মুচি বলে মর্যাদাহীন দেখানো হচ্ছে। অনুরূপভাবে জুতার কাজ মুসলিম কেউ করলে তাকে তুলনামূলকভাবে সম্মান দিয়ে সু-মেকার ডাকা হয়। যারা এমন চর্চা করেন তাদের কাছে যুক্তিসঙ্গত কোন ব্যাখ্যা নেই। দলিতরা সামাজিকভাবে পিছিয়ে আর অর্থনৈতিকভাবে অস্বচ্ছল বিধায় এমনটা হয়ে থাকে। তাই আমাদের নূতন প্রজন্মকে সুশিক্ষিত করে প্রতিষ্ঠিত করার বিকল্প নেই। একমাত্র শিক্ষাই পারে আমাদের প্রতি চলমান বৈষম্যের অবসান ঘটাতে। আমাদের সেদিকে মনযোগী হতে হবে”
প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদানকালে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শিপন কুমার রবিদাস বলেন, “বিডিইআরএম এর একটি সক্রিয় জেলা হিসেবে সাতক্ষীরা জেলা কমিটি নিরলসভাবে দীর্ঘদিন অত্র অঞ্চলের দলিত জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন ও মানবাধিকার সুরক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে। আমরা আগামী দিনেও এর ধারাবাহিকতা দেখতে চাই। বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার যে লড়াই আমরা করে যাচ্ছি, তা এগিয়ে নিতে সমমনা সকলকেই বন্ধু হিসেবে চাই। তবেই আমরা বৈষম্যমুক্ত, বৈচিত্র্যময় এক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ পেতে পারি। বিডিইআরএম এমন একটি সংগঠন যেটির মাধ্যমে দেশ ও দশের উপকারে আসা যায়। অধিকারহীন সমাজের পিছিয়েপড়া মানুষের জন্য কাজ করতে ইচ্ছুকদের জন্য এটি একটি যথোপযুক্ত প্ল্যাটফর্ম।”
আলোচনা শেষে চলমান কমিটি বিলুপ্তপূর্বক সর্বসম্মতিক্রমে দুলাল চন্দ্র দাশ কে সভাপতি, কার্তিক দাশ কে সাধারণ সম্পাদক ও বিধান দাস কে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ১৭ সদস্যবিশিষ্ট বিডিইআরএম-সাতক্ষীরা জেলা কমিটি চূড়ান্ত করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন: সহ সভাপতি সরস্বতী দাস ও গোবিন্দ দাস, সহ সাধারণ সম্পাদক রত্না দাস ও মিলন দাস, কোষাধ্যক্ষ চরণ দাস, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক প্রকাশ দাস, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক উত্তরা দাস, আইন বিষয়ক সম্পাদক মানিক দাস, নারী বিষয়ক সম্পাদক রিনা দাস, সাংস্কৃতিক সম্পাদক গোপাল দাস, কার্যকরী সদস্য কিরণ মন্ডল, পার্বতী রানী দাস, চন্দন ডোম এবং ভবতোষ বৈরাগী।
একইসাথে জেলা কমিটির সদ্য সাবেক সভাপতি দিলিপ দাস, সাবেক সভাপতি মন্টু কুমার দাস, বেহারা জনগোষ্ঠীর নেতা ইমদাদুল সরদার, সাতক্ষীরা জজকোর্টের আইনজীবি এডভোকেট মঈনুল ইসলাম এবং সাংবাদিক রঘুনাথ খাঁ কে সম্মানিত উপদেষ্টা হিসেবে মনোনিত করা হয়।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]