দেবহাটা প্রতিনিধি: দেবহাটার পারুলিয়ায় গৃহবধুকে শ্বাসরোধে হত্যা মামলায় স্বামীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতকাল শুক্রবার গভীর রাতে পারুলিয়া এলাকার শ্বশুরবাড়ি থেকে ওই নারীর মরদেহ উদ্ধার ও তাঁর স্বামীকে আটক করে পুলিশ। শনিবার (৯ মার্চ) এ ঘটনায় নিহতের মা রাবেয়া খাতুন বাদী হয়ে দেবহাটা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
জানা গেছে, নিহত নারীর নাম সায়মা খাতুন (১৮)। তিনি কালীগঞ্জ উপজেলার মৌখালী গ্রামের হারুন অর রশিদের মেয়ে। আর তাঁকে হত্যার অভিযোগে আটক স্বামীর নাম তানজিম আহম্মেদ। ছেলের বাবার নাম আব্দুস সবুর। দেবহাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেখ মাহমুদ হোসেন এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
নিহত সাইমা খাতুনের মা রাবেয়া খাতুন বলেন, ‘আমার মেয়ে দক্ষিণ পারুলিয়া মদিনাতুল উলুম মহিলা মাদ্রাসায় পড়াশোনা করত। সে প্রায় ৮ মাসের মধ্যে কোরআনের হাফেজা হয়। এরপর গত পাঁচ মাস আগে ওই মাদ্রাসার পরিচালক মুফতি আব্দুস সবুর তাঁর ছেলের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেন।
এরপর উভয় পরিবারের সম্মতিতে বিয়ে হয়। পরে আমরা জানতে পারি, আমাদের দুই পরিবার তাবলিগের দুই গ্রæপের অনুসারী। এতে ঝামেলার সৃষ্টি হয়। তবে বিষয়টি পরে সমাধান হয়।’
সাইমা খাতুনের চাচা কবির হোসেন বলেন, ‘গতকাল রাত ১২টার পরে ছেলের বাবা ফোন করে মৃত্যুর বিষয় আমাদের জানান। মৃত্যুর কারণ জানতে চাইলে ডায়রিয়া রোগে মারা গেছে বলে জানায়। আমরা ওই রাতে ছেলের বাড়িতে চলে আসি। এসে মৃত্যুর কারণ নিয়ে সন্দেহ হয়।
তার আগে স্থানীয় একজন জাতীয় পরিষেবা ৯৯৯-এ কল দেওয়ায় সেখানে দ্রুত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।’ পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নিহতের লাশ উদ্ধার করে এবং তার স্বামী তানজিমকে গ্রেফতার করে।
দেবহাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেখ মাহমুদ হোসেন জানান, স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগে স্বামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গলা টিপে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেছে বলে তিনি জানান। ওসি আরো জানান, লাশ ময়না তদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এঘটনায় মেয়ের মা বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছে।
এদিকে শনিবার বাদ আসর পারুলিয়া বাসস্টান্ডে সচেতন এলাকাবাসীদের পক্ষ থেকে ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন করা হয়েছে। এতে বক্তব্য দেন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান সবুজ, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান মিন্নুর, খেদমতে খালাক ফাউন্ডেশনের দেবহাটা শাখার সভাপতি হাফেজ কারী ফজলুল হক আমিনী, হফেজ মাওলানা কামরুজ্জামান প্রমুখ।
মানববন্ধনে বক্তরা ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়ে বলেন, মাদ্রসার পরিচালক মুফতি আব্দুস সবুরকে পদ থেকে অপসরণ করতে হবে। মাদ্রসার আয়-ব্যায়ের হিসাব প্রকাশ করতে হবে। বক্তারা আরো বলেন, মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠার পর পরিচালক বহু প্রতিশ্রæতি দিয়েছিলেন কিন্তু তিনি কোন কিছু বাস্তবায়ন না করে উল্টো অর্থ আতœসাৎ করে চলেয়েছেন।
তিনি মাদ্রাসাটিতে কোন ম্যানেজিং কমিটি রাখেন না যাতে তার এসব কাজে বাধা হয়। তাছাড়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের একের পর এক নির্যাতন করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। তিনি হাফেজা সায়মাকে পুত্রবধু বানিয়ে তাকে দিয়ে বাড়ির কাজ এবং মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের রান্নার বাবুর্চির পরিবর্তে তাকে দিয়ে রান্না করাতো।
গরীব পরিবারের সন্তান হওয়ায় সায়মা সব কিছু মুখবুজে সয্য করে যাচ্ছিল। সেটি তার মরদেহের নির্যাতনের আলামতে প্রমাণিত হয়েছে। তাকে নির্যাতনের পর হত্যার বিষয়টি ধামাচাপা দিতে ওই রাতেই দ্রæত দাফন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেটি পারেননি। এমনকি গোসলের জন্য যে সব নারীরা গিয়েছিলেন তারা যাতে কোন বিষয়ে প্রশাসনকে না বলে সে জন্য তাদেরকে ভয় দেখানো হয়।
এমনকি তার অপরাধ প্রকাশ করায় হাফেজ ফজলুল হক আমিনীকে হত্যার জন্য লোক ভাড়া করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করা হয় মানববন্ধনে। ওই মাদ্রাসার পরিচালক অনেক প্রভাবশালী হওয়ায় তিনি এঘটনা আড়াল করতে ষড়যন্ত্র করছেন।
আমরা চাই প্রশাসন বিষয়টি সঠিক তদন্ত করে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেফতার পূর্বক সর্বচ্চো শাস্তি ফাঁসি কার্যকর করুক। তা না হলে পরবর্তীতে বৃহৎ কর্মসূচির ঘোষনা করা হবে বলেও হুশিয়ারী দেওয়া হয় মানববন্ধনে।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]