মিঠুন সরকারঃ দেশে পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হয়েছে। ছাড়িয়েছে বিগত কয়েক বছরের রেকর্ড। কৃষি যান্ত্রিকীকরণ, প্রযুক্তি স¤প্রসারণ, উন্নত মানের বীজ, সার ও সেচের সহজলভ্যতার কারণে উৎপাদন বাড়ানো গেছে কয়েকগুণ।
কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, দেশে গত তিন বছরে পেঁয়াজের উৎপাদন বেড়েছে ৪০ শতাংশের বেশি। পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা ২৫ লাখ টন। ২০১৭-১৮ সালে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছিলো ২ দশমিক ১২ লাখ হেক্টর জমিতে এবং উৎপাদন হয়েছিলো ২৪ লাখ টন। ২০১৮-১৯ সালে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছিলো ২ দশমিক ০৭ লাখ হেক্টর জমিতে এবং উৎপাদন হয়েছিলো ২৪ লাখ টন। ২০১৯-২০ সালে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছিলো ২ দশমিক ৩৮ লাখ হেক্টর জমিতে এবং উৎপাদন হয়েছিলো ২৬ লাখ টন । ২০২০-২১ সালে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছিলো ২ দশমিক ৫৩ লাখ হেক্টর জমিতে এবং উৎপাদন হয়েছিলো ৩৪ লাখ টন। ২০২১-২২ সালে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছিলো ২ দশমিক ৫৯ লাখ হেক্টর জমিতে এবং উৎপাদন হয়েছিলো ৩৭ লাখ টন।
বাংলাদেশ কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্য মতে, সারা বিশ্বে মশলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত পেঁয়াজ ফসলের বৈশ্বিক আবাদ হয় ২২ লক্ষ হেক্টর জমিতে। বৈশ্বিক উৎপাদন ২২.৯৬ বিলিয়ন মে.টন এবং সর্বো”চ উৎপাদন হয় চীন এবং ভারতে। পেঁয়াজের দেশজ চাহিদা প্রায় ২৬.২৫ লক্ষ মে.টন এবং এর এক-তৃতীয়াংশ আমদানি দ্বারা মেটাতে হয় এবং ম‚ল আমদানি হয় ভারত থেকে যা আমদানিকৃত পেঁয়াজের ৭৫-৮০%। ২০২০ সালে দেশিয় উৎপাদন ২.৫৩ লক্ষ হেক্টর জমিতে ৩৩.৬২ লক্ষ মে.টন এবং গড় ফলনের পরিমাণ হেক্টর প্রতি ১৩.২৪ মে.টন। রবি ও খরিপ উভয় মৌসুমে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। শীতকালে উৎপাদিত পেঁয়াজ সারা বছর খাওয়া যায়। রাজশাহী বিভাগে উৎপাদনের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি ১২.৫৮ লক্ষ মে.টন। সর্বাধিক পেঁয়াজ উৎপাদনকারী জেলা পাবনায় উৎপাদনের পরিমাণ ৭.১৯ লক্ষ মে.টন। সর্বো”চ আবাদ হয়েছে ঢাকা বিভাগে ৯৬৩২৬ হেক্টর জমিতে। সংগ্রহোত্তর ক্ষতি প্রায় ২৫-৩০%। ২০২০-২০২১ সালে পেঁয়াজের গড় উৎপাদন খরচ প্রতি কেজি ১৯.২৪ টাকা যা, গত ২০১৮-২০১৯ সালে ছিল ১৬ টাকা। ২০২০ সালে দেশি পেঁয়াজের জাতীয় গড় বাজারদর ছিল কৃষক পর্যায়ে ৫০ টাকা/ কেজি, পাইকারি পর্যায়ে ৫৮ টাকা/কেজি এবং খুচরা পর্যায়ে ৬৫ টাকা/কেজি, যা তার আগের বছরের চেয়ে যথাক্রমে ৪৭.১%, ৫৬.৭৬% এবং ৫১.১৬% বেশী।
দৈনিক রূপান্তর প্রতিদিন্ দেশের বেশ কয়েকজন পেঁয়াজ চাষী, পাইকারী আড়ৎদার, খুচরা বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানতে পেরেছে যে, বর্তমান সময়ে পেঁয়াজ উৎপাদনে ক্ষৃকের কেজি প্রতি খরচ হয় ২০-২৬ টাকা । বাজারে বিক্রি করতে চাইলে তা নানা ওজুহাতে ২৭-২৮ টাকা বা বেশি জোরাজোরিতে ৩০ টাকা পর্যন্ত দেন মধ্যসত্বভোগীরা। অধিকাংশ এলাকায় স্থানীয় ভাবে বড় মোকাম না থাকায় কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা।
এদিকে পাইকারী আড়ৎদার বলছে কমিশন ভিত্তিতে সামান্য কমিশনের বিনিময়ে আমরা পেঁয়াজ গুলো বিক্রেতাদের হাতে তুলে দেই। এখানে যেমন যোগান আসে তেমন ভাবেই দাম নির্ধারণ হয়। অনেকসময় তাঁদের ইচ্ছা অনুযায়ী আমাদের দাম নির্ধারন করতে হয়। না হলে পেঁয়াজ অবিক্রিত থেকে যায়।
খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, বিভিন্ন ধরনের ভাঁড়া, রাস্তায় চাঁদা ও আনুসঙ্গীক খরচ বাদ দিয়ে অনেক বেশি দামে না বিক্রি করলে আমাদের কিছুই থাকেনা।
কৃষি পণ্যের বাজার বিশ্লেষকদের মতে, বাজারে সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ, স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্যের নির্দিষ্ট স্থানে ক্রেতা বিক্রেতাদের সমন্বয়ে বাজার সৃষ্টি, বাজার নিয়মিত মনিটরিং, সরকারী ভাবে পণ্যের ম‚ল্য তালিকা স্থানীয় বাজার গুলোতে দেওয়া যেন সচেতনতা বাড়ে ইত্যাদি কাজের মাধ্যমে কৃষি পণ্যের সঠিক দাম নির্ধারণ ও বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]