শনিবার, ফেব্রুয়ারি ১, ২০২৫

কলারোয়া নিউজ

প্রধান ম্যেনু

সাতক্ষীরা, দেশ ও বিশ্বের সকল সংবাদ, সবার আগে

ইত্তেফাকের প্রতিবেদন

ধানের গোলায় লুকিয়ে রাখা হয় বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের ফিল্ম

সাভার উপজেলার গেন্ডা বাসস্ট্যান্ডের ডান দিকে সরু রাস্তা ধরে শেষ মাথায় ভোলা মিয়ার দোকানের পেছনে আমজাদ আলী খন্দকারের বাড়িটি খুঁজে পেতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। জরাজীর্ণ রাস্তা পেরিয়ে তার বাড়িটিতে যখন পৌঁছাই তখন নাস্তার টেবিলে বসার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। গত বৃহস্পতিবার তার বিবর্ণ বাড়িতে বসেই কথা হয় স্বাধীনতা সংগ্রাম নিয়ে। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চে দেওয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণটির ভিডিও ধারণ করার দায়িত্বে ছিলেন আমজাদ আলী খন্দকার।

ভাষণটি তৎকালীন সরকারের চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরে পরিচালক মহিবুর রহমান খানের (অভিনেতা আবুল খায়ের) নির্দেশে আমজাদসহ বেশ কয়েকজন ভাষণের ভিডিও ধারণ ও সংরক্ষণের কাজ করেন। ৭ মার্চের জনসমুদ্রে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে ভিডিওচিত্র ধারণের কাজ করেন চলচ্চিত্র বিভাগের কর্মীরা। এক ভাগের দায়িত্ব ছিল মূল ভাষণ ধারণ করা আর অন্য ভাগের দায়িত্ব ছিল সেখানকার সার্বিক পরিবেশ তুলে ধরা।

এই দুই দলে ছিলেন ক্যামেরাম্যান জেড এম এ মবিন, ক্যামেরাম্যান এম এ রউফ, ক্যামেরা সহকারী আমজাদ আলী খন্দকার, ক্যামেরা সহকারী এস এম তৌহিদ, ক্যামেরা সহকারী সৈয়দ মইনুল আহসান, ক্যামেরা সহকারী জোনায়েদ আলী ও এমএলএসএস খলিলুর রহমান। মূল ভাষণের ভিডিও ধারণের দায়িত্বে ছিলেন ক্যামেরা সহকারী আমজাদ আলী খন্দকার। ৭৮ বছর বয়সী আমজাদ আলী খন্দকার এখন বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছেন। কর্মজীবনে বেশ কয়েকবার আহত হওয়া আমজাদের শরীরের বাঁ দিক ১১ বছর ধরে পক্ষাঘাতগ্রস্ত। কথা বলতে পারেন না ঠিক ভাবে। তবুও ৭ মার্চের ভাষণের প্রসঙ্গ উঠতেই আমজাদ আলী খন্দকারের মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।

স্বাধীনতার ৫০ বছর উপলক্ষে ৭ মার্চ নিয়ে সাক্ষাৎকারে আমজাদ আলী খন্দকার জানান, আমরা যখন রেসকোর্স ময়দানে যাই তখন সকাল ৭টা বাজে। সকাল থেকে লোকজনে মাঠ পূর্ণ ছিল। তার মধ্যে আমরা গিয়ে ক্যামেরা বসালাম। ভাষণ রেকর্ড করার দায়িত্বে ছিলাম আমি ও মবিন সাহেব। রউফ সাব ও তৌহিদ ঘুরে ঘুরে শট নেন।

আমজাদ আলী খন্দকার জানান, ১৯৬৯ সাল থেকে বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড গোপনে ধারণ করে সংরক্ষণ করতেন চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের বাঙালি কর্মীরা। এরই ধারাবাহিকতায় ৭ মার্চের ভাষণ রেকর্ড ও সংরক্ষণ করা হয়।

আমজাদ আলী বলেন, ভাষণ রেকর্ডের পর সেটা সংরক্ষণের জন্য তৎকালীন সরকারের চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের পরিচালক মহিবুর রহমান খানের কাছে যাই আমরা। পরে সেই ভাষণের ফিল্ম ডেভেলপ করতে গিয়ে ধরা পড়তে পারি সেই ভয়ে ট্যাগ লাইনে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ সংশ্লিষ্ট কিছু না লিখে কৌশলে সেখানে লেখলাম সাইক্লোন-১, সাইক্লোন-২, সাইক্লোন-৩ এভাবে। যাতে অন্যরা মনে করে, ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড় সংশ্লিষ্ট ফিল্ম এগুলো। বঙ্গবন্ধুর ভাষণের ফিল্ম ডেভেলপ করে নিয়ে আসব সেই ব্যবস্থা আমাদের ছিল না। এটা করা হতো এফডিসি ল্যাবে। বঙ্গবন্ধুর নাম দেখলে ফিল্ম নষ্ট করে ফেলবে সেজন্য আমরা কৌশল করে ‘সাইক্লোন’চিহ্ন দিয়ে এফডিসি থেকে ডেভেলপ করে নিয়ে আসি। ২৫ মার্চ ক্র্যাকডাউনের পর বিভিন্ন অফিস-আদালতের দায়িত্ব নেওয়া শুরু করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। চলচ্চিত্র বিভাগের মুক্তিকামী কর্মীরা ধারণা করলেন, পাকিস্তানি সেনারা যদি হানা দেয় তাহলে এসব ধ্বংস করে দেবে। সে কারণে কীভাবে এগুলো সচিবালয়ের আর্কাইভ থেকে সরানো যায় সেই পরিকল্পনা করলেন বিভাগের প্রধান মহিবুর রহমান। তখন তিনি আমাকে বলেন, আমজাদ তোমাকে একটা দায়িত্ব দেব। আমি বলছি, কী দায়িত্ব স্যার? উনি বললেন, তোমাকে এই মুহূর্তে ফিল্মগুলো নিয়ে ঢাকার বাইরে যেতে হবে। এ কথার পর স্যার সদরঘাট থেকে বড় একটি ট্রাঙ্ক কিনে নিয়ে আসার জন্য আমকে টাকা দেন। আমি সঙ্গে সঙ্গে সদরঘাট থেকে বড় একটি ট্রাঙ্ক কিনে নিয়ে আসি। ট্রাঙ্ক আনার পর মহিবুর রহমান নিজে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ, কাজী নজরুল ইসলামের উপর করা ডকুমেন্টারি ফিল্ম ও বঙ্গবন্ধুর আরও ছবি ঢুকিয়ে দেন। এরপর আমি স্যারকে বলি, স্যার, আমি একটু আমার বাবার সঙ্গে দেখা করে আসি? বললেন, যাও। আমার বাবা বিজি প্রেসে চাকরি করতেন। আমি বাবাকে বললাম, আমি ঢাকার বাইরে যাইতেছি। চিন্তা কইরেন না।

আমজাদ আলী বলেন, সেখান থেকে সোজা সচিবালয়ে কার্যালয়েই ফিরলাম। বাসায় স্ত্রী ও দুই সন্তান থাকলেও তাদের সঙ্গে দেখা করিনি। কারণ, তাদের সঙ্গে দেখা করলে কান্নাকাটি শুরু করবে তারা। সন্তানের মায়া লেগে যেতে পারে বলেই যাইনি বাসায়। কার্যালয়ে আসার পর আমাকে ট্রাঙ্ক নিয়ে পালানোর পরিকল্পনা বুঝিয়ে দেন স্যার। এর পর খায়ের সাহেব আমাকে রুমের ভেতর নিয়ে গেল। আমাকে রুমের ভেতর নিয়ে বিদায় দিলেন। আমার হাত ধরে বললেন, আমজাদ আল্লাহ হাফেজ। ওনার চোখ বড় বড় হয়ে গেল। কারণ উনি জানতেন যদি ধরা পড়ি তাহলে আর বাঁচবো না।

সচিবালয় থেকে বের হতে হবে, কিন্তু বাইরে বিভিন্ন জায়গায় পাকিস্তানি সেনাদের সতর্ক পাহারা ও টহল। সচিবালয়ে ঢোকার ফটক সেকেন্ড গেট দিয়ে বেরোনোর পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু সেই গেইট দিয়ে কোন গাড়ি বের করা যায় না। কি করা যায় পরিকল্পনা করা শুরু করলাম। ওই ফটকের দায়িত্বে থাকা বাঙালি পুলিশ সার্জেন্ট ফরিদ ভাইকে বিষয়টি জানালাম। তিনিও যুক্ত হলেন পরিকল্পনায়। পরে তিনি পল্টনের দিক থেকে আসা গাড়ি বন্ধ করে দেন। সংকেত দেন আমকে বেরিয়ে যেতে। আমিও বেবি ট্যাক্সিতে করে বড় আকারের ট্রাঙ্ক নিয়ে রওনা হই।

তিনি বলেন, দিনটি ছিল ১৯৭১ সালের ৯ এপ্রিল। সচিবালয়ের টিনশেড থেকে ট্রাঙ্ক নিয়ে বের হয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সেনাবাহিনীর সতর্ক প্রহরায় কিছুটা ভয় পেলেও লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে থাকি। প্রেসক্লাবের সামনে এসে দেখি, আর্মির জিপ। মেশিনগান নিয়ে মানুষের দিকে তাক করে বসে আছে। ওইখান দিয়ে আমার ট্যাক্সি সোজা চলে আসলো। আর আমি তো জানি ট্রাঙ্কে কি আছে- বললেই তো আমি শেষ। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের পাশ দিয়ে চাঁনখারপুল ও চকবাজার হয়ে সোয়ারিঘাটে পৌঁছায়। সোয়ারিঘাটে যাওয়ার পর কুলিরা দৌড়ে আসল। বলল, স্যার কী এটা? আমি বললাম, এটা অনেক ওজন, তোরা পারবি না। বড়দের পাঠিয়ে দে তাড়াতাড়ি উঠাতে হবে। তার পর নৌকায় উঠানো হলো। নৌকায় করে জিনজিরায় গেলাম। নৌকায় বুড়িগঙ্গা পাড়ি দেওয়ার পর দেখি শয়ে শয়ে লোক ঢাকা ছাড়ার জন্য বাসের অপেক্ষায়। যে যেভাবে পারছে ঢাকা ছাড়ছে। দেখি, একটা বাস ছাইড়া যাইতেছে। বাসের পেছনে জোরে একটা থাপ্পড় মারলাম। থাপ্পড় দেওয়ার পরে ড্রাইভার পেছনের দিকে তাকাল। বাসের ভেতরে জায়গা না থাকায় ছাদের উপরে ট্রাঙ্ক নিয়ে উঠে বসলাম। পাক সেনারা যদি দেখে পেলে সেই ভয়ে মাথা নিচু করে বসে ছিলাম। এর পর নবাবগঞ্জের বক্সনগরে পৌঁছায় বাসটি। কিন্তু বক্সনগর থেকে যেতে হবে হেঁটে বা ঘোড়ায় করে। ট্রাঙ্কটি ঘোড়ার পিঠে উঠিয়ে গাড়োয়ান একদিকে ধরলো আর আমি একদিকে। চার-পাঁচ কিলোমিটার গিয়ে আমরা জয়পাড়ায় মজিদ দারোগার বাড়িতে পৌঁছালাম। ওইখানে গিয়ে তাদের বাড়িতে ওটা রাখলাম।

এরই মধ্যে মহিবুর রহমানও পৌঁছে যান সেই এলাকায়। কারণ তিনি ভয় পাচ্ছিলেন- আমি ঠিকভাবে পৌঁছাতে পারবো কিনা। কিন্তু দারোগা বাড়ির অবস্থান থানার কাছাকাছি হওয়ায় সেখান থেকে ট্রাঙ্কটি সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন মহিবুর রহমান। তখন ওখান থেকে চর কুসাই নামে একটা গ্রাম আছে। ওই গ্রামের উমেদ খাঁর বাড়িতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। পরে উমেদ খাঁর বাড়িতে ধানের গোলার ভেতরে ট্রাঙ্কটি লুকিয়ে রাখা হয়। ধানের গোলায় মাসখানেক রাখার পর মুক্তি বাহিনীর সহায়তায় ট্রাঙ্কটি ভারতে নিয়ে যান মহিবুর রহমান। বিজয়ের পরপরই দেশে ফিরিয়ে আনা হয় সেই ভিডিও ফুটেজগুলো।

কিছুটা কষ্ট নিয়েই তিনি বললেন, আমরা যতজন বেঁচে আছি, ৭ই মার্চের এই ঘটনা নিয়েই বেঁচে আছি। কিন্তু জাতির কাছ থেকে আমরা তো কিছু পেলাম না। সরকার কতজনকে কত কিছু করে দিল। অনেকে প্লট পেল, বাড়ি পেল। আমাদের কেউ খোঁজও নিল না।’

১৯৭৫–এর ১৫ আগস্টের কথাও তুললেন আমজাদ আলী খন্দকার। তিনি বলেন, সকালে রেডি হচ্ছিলাম বের হবো। এমন সময় শুনি রেডিওতে মেজর ডালিমের ঘোষণাটি। ২২ দিন টানা বিছানায় ছিলাম। শুয়ে শুয়ে শুধু নীরবে কেঁদেছি।

আমজাদ আলী বলেন, ডিএফপির ক্যামেরা সহকারী হিসেবে যোগ দিই ১৯৬৮ সালে। এর পর ক্যামেরাম্যান হয়ে ১৯৭৪ সালে পদন্নোতি পাই। এর পর ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে যোগ দিয়ে ২০০৪ সালে বিটিভির কন্ট্রোলার-চিফ ক্যামেরাম্যান হিসাবে অবসরে যাই।

তিনি বলেন, ক্যামেরাম্যান হিসেবে ১৯৭৪ সালে পদোন্নতি পেলেও বঙ্গবন্ধু হত্যার পর আবার বিপদ নেমে আসে আমার উপর। ১৯৭৯ সালে আমাকে চক্রান্ত করে ফিফথ গ্রেড থেকে ক্লাস থ্রিতে নামানো হয়। বলেন, তখন আমি আর জয়েন করলাম না। ছুটি নিয়ে রইলাম ৯ মাস। এরপর টেলিভিশনে জয়েন করলাম। সেখানে গিয়ে ২৬ মাস বেতন পাইলাম না।
সৌজন্যে: ইত্তেফাক

একই রকম সংবাদ সমূহ

ইতালি নেওয়ার কথা বলে লিবিয়ায় নিয়ে দুই যুবককে গু*লি করে হ*ত্যা

ইতালি নেওয়ার কথা বলে লিবিয়ায় নিয়ে হৃদয় হাওলাদার (২৬) ও রাসেল হাওলাদারবিস্তারিত পড়ুন

জ্বালানি তেলের দাম বাড়লো

বাড়লো জ্বালানি তেলের দাম। পেট্রল, অকটেন, ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে বেড়েছেবিস্তারিত পড়ুন

সামরিক শক্তিতে মিয়ানমার-ইরাকের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ

বিশ্বে সামরিক দিক থেকে শক্তিশালী দেশের তালিকা প্রকাশ করেছে গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার।বিস্তারিত পড়ুন

  • রাজনৈতিক দল গঠন ও পদত্যাগের ব্যাপারে যা বললেন উপদেষ্টা নাহিদ
  • বাংলাদেশকে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি জাপানের
  • দেশের সবচেয়ে ধনী ও দরিদ্র জেলা
  • ১৪ ফেব্রুয়ারি শবে বরাত
  • সাত কলেজ নিয়ে ‘জুলাই ৩৬ বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব
  • দেশে দারিদ্র্যসীমার নিচে ১৯ শতাংশ মানুষ
  • নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ করবে ইসি, প্রাধান্য ৩টি বিষয়ে
  • রক্ত দিয়ে ছাত্ররা যা অর্জন করেছে, তা তাদেরই রক্ষা করতে হবে : ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে ড. ইউনূস
  • ছুটিতে পাঠানো বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিনের পদত্যাগ
  • বাংলা একাডেমি পুরস্কার : আলোচনা-সমালোচনায় শেষ হলো ঘোষণা
  • ভারতীয় ভিসা বন্ধে ফাঁকা বেনাপোল ইমিগ্রেশন, আয় বন্ধ দুই দেশেই
  • ‘ফেব্রুয়ারিতে সংস্কার প্রতিবেদনের পরই জানা যাবে নির্বাচনের তারিখ’