জেলা প্রতিনিধি, নড়াইল : নড়াইলে বাঁশ আর বেতকেই জীবিকার প্রধান বাহক হিসাবে আঁকড়ে রেখেছে প্রায় দুই শতাধিক নারী কারিগররা। বাঁশ আর বেতকেই জীবিকার প্রধান বাহক হিসাবে আঁকড়ে রেখেছে প্রায় দুই শতাধিক নারী কারিগররা। বংশ পরম্পরায় এই বাঁশ-বেতই তাদের প্রধান জীবিকার উৎস। কিন্তু দিন দিন বাঁশ-বেতের তৈরি বিভিন্ন পণ্যের চাহিদা কমেছে। যার ফলে ভালো নেই এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত নড়াইল সদর উপজেলার আউড়িয়া গ্রামের ঋষি পল্লীর প্রায় ২ শতাধিক নারী। জীবন জীবিকার তাগিদে তবুও বাবা-দাদার এই পেশাকে এখনও ধরে রেখেছেন তারা।
সরেজমিনে ঋষি পল্লীতে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি বাড়িতে নারীরা তাদের নিপুণ হাতের শৈল্পিক ছোঁয়ায় হরেক রকম বাঁশ ও বেত দিয়ে তৈরি করছেন খোল, চাঙ্গই, চাটাই, খোলুই, মোড়া, দোলনা, কুলাসহ নানান পণ্য। এক পাড়ায় সারি সারি বসা এই নারী কারিগররা সুখ-দুঃখের কথা আলাপচারিতার মধ্যে দিয়ে শেষ করছে এক একটি পণ্য তৈরির কাজ। তাদের সঙ্গে কোনো কোনো পরিবারে পুরুষরাও সহযোগিতা কাজের ফাঁকে গীতা রানী বলেন, আমরা দুই তিনশ পরিবার এখানে বসত করি। এই, চালন, কুলো, খালোই, ডোল, ঝুঁড়ি বানায় বিক্রি করি। আমাদের বিটারা (পুরুষ) এগুলো হাটে নিয়ে যায়। হাটে নিয়ে বিক্রি করে যে টাকা হয় তাই দিয়ে ছেলে-পেলেকে খাওয়াই, নিজেরা খাই, লেখাপড়া করায়, তাদের খাওয়ায়, কোনো রকম কষ্টে আমাদের জীবন যাপন করতে হচ্ছে।
সন্ধ্যা রানী বলেন, মা-বাবা এই কাজ শিখাইয়াছে। বাঁশ কিনে প্রথমে আমরা ছেদাই। তারপর বেতি বানায়, হিত তুলি, তার কেনাকাটা করি। চাক দিয়ে ডালি বানায় বান্দি। তারপর চালন, কুলা, ধামা বানাই। পরে জয়পুর, ওড়াকান্দি, হিজলডাঙ্গা, কালিয়া, কাটাগড়া, ইতি কান্দিসহ বিভিন্ন মেলায় এই নিয়ে যায়। সরকার যদি বিনা সুদে টাকা দিত তাহলে ভালোভাবে কাজ করতে পারতাম।
ঋষি পল্লীর দীলিপ কুমার বিশ্বাস বলেন, বর্তমানে স্বল্প দামে হাতের নাগালে প্লাস্টিক সামগ্রী পাওয়ায় কুটির শিল্পের চাহিদা আর তেমন নেই। তাছাড়াও দুষ্প্রাপ্য হয়ে পড়েছে এ শিল্পের কাঁচামাল বাঁশ ও বেত। এখন আর আগের মতো বাড়ির আশপাশে বাঁশ ও বেত গাছ রাখছে না কেউ। সেগুলো কেটে বিভিন্ন চাষাবাদসহ ঘরবাড়ি তৈরি করছে মানুষ। তাই কাঁচামাল আর আগের মতো সহজেই পাওয়া যায় না। এখন আর যেখানে সেখানে দেখা মেলে না বাঁশ ও বেত ঝাঁড়। তাছাড়াও প্লাস্টিক ও অন্যান্য দ্রব্যের পণ্য টেকসই ও স্বল্পমূল্যে পাওয়ায় সাধারণ মানুষের চোখ এখন সেগুলোর ওপর।
ভদ্রবিলা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান সজিবুর রহমান বলেন, বেত শিল্পের দুর্দিনে আউড়িয়ার ঋষি পল্লীর দুই থেকে তিনশ নারী কারিগর বাঁশ ও বেতশিল্পকে আঁকড়ে ধরে আছেন। অনেকে এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় গেলেও পূর্ব পুরুষের হাতেখড়ি এই পেশাকে কিছুতেই ছাড়তে পারেননি তারা। বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের দাম বেশি হওয়ায় স্বল্প আয়ের এ পেশায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। তাদের এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সহযোগিতা করা হবে।
এ বিষয়ে নড়াইল জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের উপ-পরিচালক মৌসুমী রানী মজুমদার বলেন, বাংলার ঐতিহ্য বাঁশ ও বেতের সামগ্রী টিকিয়ে রাখতে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের আর্থিক সহযোগিতা করা হবে।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]