উজ্জ্বল রায়, নড়াইল: নড়াইলের নবগঙ্গা নদীর তীরে সারিবদ্ধভাবে এভাবেই গড়ে উঠেছে ১৭টি ভাটায় চলছে কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরি। ইট ও মাটি দিয়ে তৈরি হয়েছে গোলাকার ঢিবি। ওপরটা গম্বুজ প্রকৃতির। ভেতরে বড় আকারের ফাঁকা জায়গা। নিচের দিকে তিন হাত উঁচু ও দেড় হাত চওড়া মুখ। এই মুখ দিয়ে ভেতরে দেওয়া হয় কাঠ। সারিবদ্ধভাবে সাজিয়ে রাখা হয়। পরে আগুনে পুড়িয়ে বানানো হয় কয়লা। তাই এর নাম হয়েছে কয়লা ভাটা। অনেকে বলেন কাঠ-কয়লার ভাটা।
নড়াইলের কালিয়া উপজেলার হামিদপুর ইউনিয়নের বিঞ্চুপুর গ্রামের নবগঙ্গা নদীর তীরে সারিবদ্ধভাবে এভাবেই গড়ে উঠেছে ১৭টি ভাটা। কোনো রকম অনুমোদন ছাড়া যেখানে প্রতিদিন কয়েক হাজার মণ কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরি করা হচ্ছে। কাঠ পোড়ানোর ধোঁয়ায় নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ, বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে এলাকা।
এমন ভাটার খবর আছে উপজেলা প্রশাসনের কাছেও। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলা শহর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বিঞ্চুপুর গ্রাম। গ্রামের কোল ঘেঁষে বয়ে চলা নবগঙ্গা নদীর তীরে গড়ে উঠেছে ১৭টি কয়লা ভাটা। এর মধ্যে ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মো. আসলাম মোল্লার ৫টি, তরিকুল মোল্লার ৯টি এবং পাচকাউনিয়া গ্রামের তৈয়বুর রহমানের তিনটি। নদীর তীর ঘেঁষা এই এলাকাটি এখন স্থায়ীভাবে কয়লা ভাটার আড়ত হিসেবে পরিচিত। খুলনা শহরের একটি বড় পরিমাণ কয়লার চাহিদা মিটে এই এলাকা থেকে। পাশাপাশি এলাকার কয়লা যাচ্ছে যশোরের অভয়নগর, খুলনার ফুতলাসহ বিভিন্ন এলাকায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, একের পর এক কাঠ বোঝাই ট্রলার আসছে। নদীর তীরেই নোঙর ফেলা হয়েছে ট্রলারের। ভাটায় আগুন ধরিয়ে দিলে নদীর বাতাসেই ভেতরের কাঠ পুড়তে থাকে। বাড়তি বাতাসের প্রয়োজন হয় না। ভাটার চারপাশের ছিদ্র দিয়ে কাঠের ধোঁয়া বের হয়। ভাটার উল্টো দিকে যাদের বসবাস, তাদের বাড়িতে ধোঁয়া প্রতিরোধে টানানো হয়েছে বিশাল পর্দা।
এলাকাবাসী দুর্ভোগের কথা জানালেও কেউ পরিচয় প্রকাশ করতে চাননি।
অন্তত ১৫ জনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইতোমধ্যে এলাকার পরিবেশে বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। শীতকাল আসার পরই এলাকার মানুষের শ্বাসজনিত সমস্যার মাত্রা বেড়েছে। ভাটাশ্রমিক গ্রামের জব্বার মোল্লা (৬৬) ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন। ভাটার পাশের বাসিন্দা আসমত শেখ বাড়িঘর বিক্রি করে অন্যত্র চলে গেছেন।
ভাটা মালিক ও ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য আসলাম মোল্লা ও তরিকুল মোল্লা বলেন, ‘ভাটার কোনো নিবন্ধন এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো ছাড়পত্র নেই। বেশ কয়েক বছর ধরে জ্বালানি কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরি করছি। কেউ তো বাধা দেয়নি। অনেক সাংবাদিক আসে। কিছু টাকা দিলে চলে যায়। প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ভাটা চালাই।
হামিদপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পলি বেগম বলেন, ‘ভাটায় যখন আগুন দেয়া হয়, তখন এলাকার মানুষ কাঠের ধোঁয়ায় অস্বস্তিতে পড়ে। ভাটার পাশের স্কুলের ছেলেমেয়েরা কাশতে থাকে। এলাকার অনেকেই এ ব্যাপারে অভিযোগ করেছেন।
উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ভাটা চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন ইউপি চেয়ারম্যান।
কালিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুনু সাহা বলেন, ‘কয়লা ভাটার কথা শুনেছি। তবে কেউ এ ব্যাপারে কোনো অভিযোগ করেনি।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]