নতুন কারিকুলামে নবম শ্রেণির ‘জীবন ও জীবিকা’ বই নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। এ বইয়ে উদ্যোক্তা হিসেবে ব্যবসা শুরু করা নিয়ে থাকা একটি অধ্যায়ে কিউআর কোড ব্যবহার করা হয়েছে, যেটি স্ক্যান করলেই চলে আসছে অন্তর্বাস বিক্রির একটি ওয়েবসাইট।
শিক্ষক ও অভিভাবকরা এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। পাঠ্যবইয়ে এমন কিউআর কোড ব্যবহারে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।
তবে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) বলছে, যখন কিউআর কোডটি বসানো হয়েছিল, তখন ওই ওয়েবসাইটে খেলাধুলার বিভিন্ন সামগ্রী পাওয়া যেত। এখন সেখানে অন্তর্বাসের ছবি দেয়ায় এ বিপত্তি।
পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ‘জীবন ও জীবিকা’ বইয়ের ৩৮ নম্বর পৃষ্ঠায় ‘ধাপ-৬: ব্যবসার ব্র্যান্ডিং, মার্কেটিং বা বিপণন পরিকল্পনা’ নামক অধ্যায়ে উদ্যোক্তা হিসেবে যাত্রার জন্য কীভাবে ব্যবসা শুরু করতে হবে, সেটি উল্লেখ করা হয়েছে। এ পৃষ্ঠায় ‘চিত্র ২.১: বিভিন্ন মাধ্যমে পণ্যের বিজ্ঞাপনের নমুনা’র চিত্র তুলে ধরে সেখানে স্টোরের একটি ছবি দেওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি সেখানে ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, গুগল প্লাস, ভাইবার, লিংকডইন এবং পিনটারেস্টের লোগো দেওয়া হয়েছে। এ লোগো এবং নিত্যদিন স্টোরের মাঝখানে একটি কিউআর কোড সংযুক্ত করা হয়েছে, যা স্ক্যান করলে ট্রাক্স (Trucss) নামক পর্তুগিজ একটি নারীদের অন্তর্বাস বিক্রির ওয়েবসাইটে নিয়ে যাচ্ছে। যেখানে অন্তর্বাস পরা নারী মডেলদের বিজ্ঞাপন দেওয়া আছে।
‘জীবন ও জীবিকা’ বইটি রচনা এবং সম্পাদনা করেছেন মো. মুরশীদ আকতার, মোসাম্মৎ খাদিজা ইয়াসমিন, হাসান তারেক খাঁন, মোহাম্মদ কবীর হোসেন, মো. সিফাতুল ইসলাম, মো. রুহুল আমিন, মো. তৌহিদুর রহমান, মো. মুস্তাফিজুর রহমান, মোহাম্মদ আবুল খায়ের ভূঁঞা।
বইটির শিল্পনির্দেশনায় ছিলেন মঞ্জুর আহমদ, চিত্রণ সুবীর মণ্ডল, প্রচ্ছদ পরিকল্পনা মঞ্জুর আহমদ, প্রচ্ছদ প্রথমেশ দাশ পুলক, গ্রাফিক্স নূর-ই-ইলাহী ও কে. এম. ইউসুফ আলী।
মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক শিক্ষার্থীর মা বলেন, ‘আমার ছেলের হাতে স্মার্টফোন দিয়েছি এ নতুন কারিকুলামের জন্য। সে একদিন হঠাৎ এটা স্ক্যান করেছিল। তখন আজেবাজে ছবি আসছিল। আমি তখন ছেলেকে নিষেধ করেছিলাম, আর যেন কিউআর কোড স্ক্যান না করে। বিষয়টি এখন আলোচনায় আসছে। এ ধরনের ভুল মেনে নেওয়ার মতো নয়। জড়িতদের শাস্তি হওয়া উচিত।
এনসিটিবির চেয়ারম্যান (রুটিন দায়িত্ব) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি খুব বেশি কিছু জানি না। তবে এমন ঘটনা ঘটেছে, শুনেছি। এটা সব বইয়ে ছাপা হয়েছে। সরানোর উপায় নেই। শিক্ষকদের মাধ্যমে বইয়ের এ অংশ কোনোভাবে বিলুপ্ত করা যায় কি না, তা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
যখন বইগুলো ছাপা এবং বিতরণ হয়, তখন এনসিটিবির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম। তিনি বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমরা অবগত। যখন আমরা এটি বসানোর কাজ করেছিলাম, তখন এ কোড স্ক্যান করলে খেলাধুলার সামগ্রীর ছবি আসতো। হয়তো এখন এটা পরিবর্তন করেছে ওই প্রতিষ্ঠান।
এখন করণীয় কী এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমাদের হাতে এখন করার কিছু নেই। আগামী বছর এটা বাদ দেওয়া যাবে। বর্তমানে শিক্ষকদের মাধ্যমে নির্দেশনা দিয়ে বিষয়টি বিলুপ্ত বা অকেজো করা যেতে পারে।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]