আর নয় জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ, নবায়নযোগ্য জ্বালানি হোক সবার জন্য। গ্যাস-কয়লা-তেল ভিত্তিক জ্বালানীতে বিনিয়োগ না করে, বাংলাদেশের জন্য সুবিধাজনক নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে নিয়োগ করো; দারিদ্রকরণের নীতি বর্জন করো, সক্ষমতা বাড়িয়ে তোলো। AIIB' তোমাদের বিনিয়োগ আমাদের জীবনকে ধ্বংস করছে, তোমাদের উপর তথা পরনির্ভরশীলতা বাড়িয়ে তুলছে। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে তোমাদের বিনিয়োগ প্রত্যাহার করো, কার্বন নির্গমন বন্ধে অর্থায়ন করো এই দাবি জানান সাতক্ষীরার সুশীল সমাজ।
শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সকালে সাতক্ষীরা শহরের ম্যানগ্রোভ সভাঘরে স্বদেশ, ক্লিন ও বিডব্লিউজিইডি আয়োজিত জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ করো বিষয়ক গোলটেবিল আলোচনায় সাতক্ষীরা সুশীল সমাজের বক্তারা তাদের বক্তব্যে এসব দাবি তুলে ধরেন।
স্বদেশের নির্বাহী পরিচালক মাদব চন্দ্র দত্তের সঞ্চালনায় ও শিক্ষাবিদ প্রফেসর মো. আব্দুল হামিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গোলটেবিল আলোচনা সভায় বক্তারা আরো বলেন, এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (AIIB) হল একটি বহুপাক্ষিক উন্নয়ন ব্যাংক তথা বেইজিং ভিত্তিক আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান, এটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম বহু-পার্শ্বিক উন্নয়ন সংস্থা। যার লক্ষ্য এশিয়ার অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা সম্মিলিতভাবে উন্নত করা। এই ব্যাংক প্রতিষ্ঠার প্রথম তিন বছরের মধ্যে যত বিনিয়োগ করেছে তার মধ্যে ২০ শতাংশ বিনিয়োগই জীবাশ্ম (বিশেষ করে কয়লা এবং এলএনজি) জ্বালানি প্রকল্পে।
দ্রুতগতি পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য এই জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহারই অন্যতম দায়ি বলে মনে করেন সাতক্ষীরা সুশীল সমাজের বক্তারা।
তারা আরও বলেন, AIIB ২০১৭ সাল থেকে আমাদের দেশে জ্বালানী খাতে বিনিয়োগ অব্যহত রেখেছে। ২০২২ অব্দি ৫১০ মিলিয়ন ডলার শুধু মাত্র জ্বালানি খাতেই বিনিয়োগ করেছে। এরা শুধু বিনিয়োগ করে না, আমাদেরকে পারামর্শও দিয়ে থাকে। এই পরামর্শ আবার তাদের লাভের স্বার্থেই দেয়। ২০২৩ জানুয়ারিতে এসে বিদ্যুৎ খাতে দুটি প্রকল্পে ২৭৫ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। ৫৮৪ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন কম্বাইন্ড-সাইকেল গ্যাস টারবাইন (CCGT) এবং বাংলাদেশে বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা সংস্কার ও সম্প্রসারণের জন্য ১৬৫ মিলিয়ন
ঋণ অনুমোদন করে। যার একটি হলো উচ্চ-ক্ষমতা সম্পন্ন গ্যাস বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের ক্ষমতার সম্প্রসারণ, এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনে দূষণকারী এবং ব্যয়বহুল উৎসের ব্যবহার হ্রাস করার একটি প্রকল্প। এছাড়াও আমাদের দেশ বিভিন্ন বিদ্যুৎ প্রকল্পের নামে বিনিয়োগ অব্যহত রেখেছে। এআইআইবি এর জ্বালানি খাতে (গ্যাস ও কয়লা) এই বিনিয়োগের ফলে আমাদের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত নানা মুখি সমস্যার সম্মুখিন হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞ এবং পরিবেশ কর্মীদের মতে, এআইআইবি ব্যাংক গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশে বিদুৎ জ্বালানি খাতে যত বিনিয়োগ করেছে তার একটিও নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পে বিনিয়োগ করেনি। বাংলাদেশ ওয়ার্কিং গ্রুপ অন এক্সটার্নাল(বিডব্লিউজিইডি) এবং কোস্টাল লাইভলিহুড অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল অ্যাকশন নেটওয়ার্ক (ক্লিন), এর এক প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয় যে, “জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগের প্রভাবে আমাদের জ্বালানি খাত ব্যার্থ হবার উপক্রম দেখা দিয়ে এআইআইবি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলি বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি এবং পরিবর্তে বাংলাদেশে জীবাশ্ম জ্বালান বিনিয়োগ করে সমস্যাটিকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ করো এআইআইবির কাছে গোলটেবিল আলোচনায় বক্তব্য রাখেন সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির আহবায়ক এ্যাড. আজাদ হোসেন বেলাল, রাজনৈতিক ও নাগরিক নেতা সাবেক অধ্যক্ষ আশেক ই এলাহী, সাবেক অধ্যক্ষ এস এ এম আবদুল ওয়াহেদ, জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক শেখ হারুন উর রশীদ, অধ্যাপক পবিত্র মোহন দাস, সিডোর শ্যামল কুমার বিশ্বাস, অধ্যাপক ইদ্রিস আলী, জেলা নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহবায়ক আলী নুর খান বাবুল, বাসদ নেতা নিত্যানন্দ সরকার, হেড'র নির্বাহী পরিচালক লুইস রানা গাইন, উদীচীর সভাপতি শেখ সিদ্দিকুর রহমান, কবি স ম তুহিন, রাজনৈতিক কর্মী মুনসুর রহমান, নারীনেত্রী ফরিদা আক্তার বিউটি, উন্মনয়নকর্মী মহুয়া মঞ্জুরী, সিরাজুন সনজু, যুব সংগঠক এস এম হাবিবুল হাসান, যুবনেতা রুবেল হোসেন, সরদার গিয়াসউদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]