নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের সেজান জুস ফ্যাক্টরিতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় এখনো সেখানে হাহাকার চলছে। ওই কারাখানার প্রতি ফ্লোরে ছিলো কার্টন, তেল, কেমিকেলসহ দাহ্য পদার্থ। আগুন লাগলে মুহুর্তেই ছড়িয়ে যেতে পারে এমন বহু সরঞ্জমাদী ছিলো বলেই অগ্নিকান্ডের রূপ এতো ভয়াবহ হয়ে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
ভবনের ছয় তলায় ছিল কার্টনের গুদাম। কিছু কার্টন ছিল জুস তৈরির রাসায়নিক কাঁচামাল। আর পঞ্চম তলায় রাখা হতো বিভিন্ন রাসায়নিক ও প্লাস্টিক মোড়ক। চতুর্থ ও তৃতীয় তলায় উৎপাদিত হতো সেজান জুসের বিভিন্ন পণ্য। তবে পণ্য উৎপাদনের পাশাপাশি পাশেই সারি সারি রাখা ছিল পণ্য ভর্তি কার্টন। তৃতীয় তলায় ক্যান্ডি লাইন নসিলা উৎপাদনের প্লান্ট। এ ফ্লোরে ছিল যাবতীয় ফ্লেভার, সুগার ও গ্লুকোজ কার্টন এবং মোড়ক উৎপাদনের পলিথিন।
চতুর্থ তলায় স্টোরসহ লাচ্ছা সেমাই, চানাচুর, আচার, ঝাল মুড়ি তৈরি হতো। তবে এই ফ্লোরে বিপুল পরিমাণ সয়াবিন তেলের ড্রাম ছিল। ইলেকট্রিক চুলায় বড় সাইজের ৪/৫ টি কড়াই ছিল।
ঘটনার সময় কড়াইয়ে আচার তৈরির কাজ চলছিল। অগ্নিকান্ডের পর ফুটন্ত তেল ও ড্রাম ভর্তি তেল জ্বলে গিয়ে ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করেছি। এসব কয়েক ঘণ্টা ধরে জ্বলে পুড়ে লাচ্ছা সেমাই, চানাচুর, আচার, ঝাল মুড়ি ছাই হয়ে গেছে।
নিচ তলায় ছিল কার্টন এলডিপি বা প্লাস্টিকের পলি উৎপাদন প্লান্ট। এখানে আরেকটি স্থানে প্রসেস করা হতো ময়দা। ছিল কম্প্রেসার মেশিন। রাখা ছিল ফয়েল পেপারের বড় বড় রোল। যা আগুন ধরে যাওয়ার পর কালো ধোঁয়া বের হত। পাশেই ছিল আঠা জাতীয় রাসায়নিক উপাদানের প্লাস্টিকের কয়েকটি ড্রাম। দ্বিতীয় তলায় লিচু ড্রিঙ্কস ও লাচ্ছি তৈরি হতো। তৈরি হতো এসব পণ্যের প্লাস্টিক বোতলও। ছিল প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদনের কাঁচামাল রেজিনের মতো দাহ্য পদার্থ। এসব কেমিকেল ভর্তি অর্ধশত প্লাস্টিকের ড্রাম দেয়াল দিয়ে সাজানো ছিল। নিচতলা ছিল সব ড্রিঙ্কস ও বিস্কুট উৎপাদন প্লান্ট। এখানে বিপুল পরিমাণ দাহ্য পদার্থ মজুদ ছিল। মূলত পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলার দুটি ফ্লোরে গুদাম হিসেবে রাখা হলেও সবকটি ফ্লোরেই ছিল রাসায়নিক উপাদান ভর্তি কার্টন, প্লাস্টিকের ড্রাম দিয়ে ঠাসা।
শনিবার বেলা আড়াইটার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘সারা দেশ এ ঘটনায় স্তব্ধ। একসঙ্গে এতজনের প্রাণহানি খুবই দুঃখজনক। ঘটনায় সামান্যতম জড়িত, গাফিলতি কিংবা কারো অজান্তে ত্রুটি করে থাকলে কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। তিনি আরও বলেন, আগুনের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
শনিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ২০৩ ও ২০৪ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ৩ নারী শ্রমিককে ৫০ হাজার টাকার চেক প্রদান করেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব একেএম আব্দুস সালাম।
আহত শ্রমিকরা হলেন, আমেনা বেগম, মাজেদা বেগম ও হালিমা আক্তার।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব একেএম আব্দুস সালাম বলেন, ‘যারা জীবন বাঁচাতে উপর থেকে লাফ দিয়ে পড়ে মারা গেছেন তাদের পরিবারকে ২ লাখ টাকার চেক প্রদান করেছি। পর্যায়ক্রমে আহত সবাইকে ৫০ হাজার টাকা করে শ্রমিক কল্যাণ তহবিল থেকে সহায়তা করা হবে।’
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]