নৌকার পক্ষে ভোট করায় যুব মহিলালীগ নেত্রীর পরিবারকে নির্যাতনের অভিযোগ
নৌকার পক্ষে ভোট করায় সাতক্ষীরায় যুব মহিলা লীগের এক নেত্রীকে স্বপরিবারে ভিটে ছাড়া করার চেষ্টা করছেন ছাত্রদলের সাবেক এক নেতা ও জামাত-শিবির কর্মীরা। গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রতাপনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জাকির হোসেনের পক্ষে ভোট করায় ৯ নং ওয়ার্ড যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমার ওপর নেমে এসেছে ভয়াবহ নির্মমতা। নির্বাচনের পর নাজমার নাবালক ছেলে প্রকাশ্যে রাস্তায় মারপিট করা হয় এবং গ্রামে এক ঘরে করার চেষ্টা করে।
ভুক্তভুগী যুব মহিলালীগ নেত্রী নাজমা জানান, গত নির্বাচনের গোকুলনগর গ্রাম থেকে একমাত্র আমি ও আমার পরিবার নৌকা প্রতীকের পক্ষে কাজ করি। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জাকির হোসেনকে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। কিন্তু নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রাথী বিজয়ী হয়। এর পর থেকে আমাদের সম্পত্তি দখলের জন্য নৌকা প্রতীকের পক্ষে কাজ করাকে পুজি করে চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও একাধিক মামলার আসামীরা আমাকে স্বপরিবারে ভিটে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করার চেষ্টা করছে।
নির্বাচনের দু’দিন পর আমার নাবালক ছেলে ইখতিয়ার উদ্দিন বিথারকে গ্রামে প্রকাশ্যে মারপিট করে। এই মারপিটে সরাসরি নেতৃত্বে দেয় চিহৃত সন্ত্রাসী ফারুক আল-মামুন ও তার ভাতিজা আল-আমিন। প্রায় দুই মাস ধরে তারা তাদের কয়েকজন আত্মীয় ও গ্রামের জামাত সমর্থকদের নিয়ে নিয়মিত আমার বাড়ির সামনে পাহারা বসায়। ফলে ওই দুই মাস আমি বাড়ির বাহিরে বের হতে পারিনি।
ফারুকের এসব অপকর্মের অন্যতম সহযোগী তার ভাতিজা আল আমিন। সে ২০০৩ সালে প্রতাপনগর মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাশ করে। এ সময় যে প্রতাপনগর মাদ্রাসা শাখা ছাত্র শিবিরের সভাপতি নির্বাচিত হয়। ২০১৩ জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদির মুক্তির জন্য সাঈদি মুক্তি মঞ্চের প্রতাপনগর ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের আহ্বায়ক হয় আল আমিন। ওই সময় আল আমিনের সঙ্গে জামায়াতের সক্রিয় সদস্য হিসেবে আল আমিনের পিতা আবুল হোসেন গাজী এবং চাচা সওকত হোসেন গ্রামে সাঈদি মুক্তি মঞ্চের স্টেজ বানিয়ে সেখানে নেতাকর্মীদের নিয়ে বিক্ষোভ করে।
নাজমা বলেন, আমার স্বামীরা ছয় ভাই। এর মধ্যে তিন ভাই ঢাকায় ও এক ভাই কয়রায় স্থায়ীভাবে বসবাস করে। গোকুল নগরে আমার স্বামী ও দেবর দুই ভাই বসবাস করে। আমরা সংখ্যা কম থাকায় ইতিমধ্যে ফারুক আল-মামুন ও আল আমিন তাদের সহযোগিদের নিয়ে আমাদের প্রায় ১৬ বিঘা সম্পত্তি দখলে নিয়েছে। এখন ওই সম্পত্তি যেন আমরা ফেরত পেতে না পারি এজন্য আমাদের ভিটে বাড়ি থেকে উচ্ছেদের চেষ্টা করছে। কয়েক মাস ধরে আমাদের দুটি ঘরের চারপাশ কাঠের ঘেরা দিয়ে রেখেছে। তাদের সম্পত্তি জবর দখলকে গ্রামে বৈধতা দিতে আমি নৌকার পক্ষে ভোট করেছি সেটাকে পুজি করছে।
গত ঈদুল ফিতরের দিন ফারুক আল-মামুন ও আল আমিন তাদের সঙ্গীদের নিয়ে আমার নাবালক ছেলে, স্বামী ও দেবরকে কুপিয়ে গুরুত্বর জখম করে। যে ঘটনায় থানায় মামলা করা হয়েছে। সব শেষ গত শনিবার ফারুক আল-মামুন, আবুল হোসেন, সওকত হাসেন, আল আমিন ও এমদাদ কয়েকজন বহিরাগত সন্ত্রাসী আমার বাড়িতে গিয়ে হুমকি দেয়। আমি যে মামলা করেছি তা তুলে না নিলে আমার ছেলেকে হত্যা করা হবে বলে আমাকে শাসানো হয়। একই সঙ্গে আমার ও আমার পরিবারের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ করে হয়রানি করার হুমকি দেয়।
জানা যায়, নাজমাকে উচ্ছেদ করার চেষ্টার মূলে রয়েছে ফারুক আল মামুন। সে ১৯৯৮ সালে বিএল কলেজ শাখা ছাত্রদলের ১১ নং যুগ্ম-সম্পাদক ছিল। সেই সময় গোকুলনগর গ্রামের গনি গাজীর পুত্র টুকুকে খুলনায় অপহরণ করে প্রায় চার লাখ টাকা চাঁদা নেন। ওই ঘটনায় খুলনা সদর থানায় মামলা হয়। মামলা নং: ৬৮/৯৮। ওই মামলায় ফারুক ১ নং আসামী হলেও বিএনপি নেতাদের মাধ্যমে বাদী পক্ষকে চাপ প্রয়োগ করে টাকা ফেরত দিয়ে ও ক্ষমা চেয়ে পার পেয়ে যায়। তবে ওই ঘটনায় দল থেকে বহিষ্কার হন।
পরবর্তীতে দলে আর পদ না পেলেও খুলনায় বিএনপি নেতাদের লাঠিয়াল হিসেবে কাজ করতে থাকেন। বিএনপির ক্যাডার হিসেবে তার অপরাধমূলক কার্যক্রম থামেনি। ২০১৪ সালে বিএনপির আন্দোলনের সময় খুলনায় অগ্রগণি ভুমিকা রাখা ক্যাডারদের মধ্যে ফারুক ছিল অন্যতম। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে খুলনা জ্বালাও-পোড়াও, ভাঙচুর ও রাষ্ট্রদ্রোহী একাধিক মামলায় অজ্ঞাত আসামী হিসেবে তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা করে পুলিশ।
১৯৯৯ সালে ছাত্রদলে পদ পাওয়ার পর থেকে নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে আলোচনায় এসেছেন ফারুক। ওই বছর শহরের টুটপাড়া এলাকার এক ব্যক্তির স্ত্রীকে (দুই সন্তানের মা) অপহরণ করে বিয়ে করেন। বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে দুই সন্তানকে হত্যা করা হবে হুমকি দেন তাদের বাবাকে। ফলে ফারুকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেননি তিনি। ২০১৫ সালে একইভাবে অপর এক ব্যাক্তির স্ত্রীকে অপহরণ করে বিষয়ে করেন ফারুক। বর্তমানে অপহৃত দুই নারীই ফারুকের কব্জায় রয়েছে।
২০০৬ সাল পর্যন্ত ফারুক খুলনার গল্লামারী এলাকায় নিয়মিত বসবাস করে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসলে ফারুক খুলনা থেকে পালিয়ে গ্রামের বাড়ি গোকুলনগর আশ্রয় নেয়। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর গ্রাম থেকেও পালিয়ে সুন্দরবনে জলদস্যু গঠন করেন। জলদস্যু দলে নিজের তিন ভাগনাকে ও ভাতিজা আল আমিন এবং এমদাদকেও নিয়ে যায় ফারুক। এর মধ্যে ২০১৩ সালে সুন্দরবে তার আপন ভাগনা আব্দুস সালাম কোস্ট গার্ডের সঙ্গে বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়।
ওই ঘটনার পর ডাকাতি বাদ দিয়ে আবার গোকুলনগর ফিরে আসে ফারুক। সেখানে অবস্থান করলেও ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে বিএনপির হয়ে ভোট নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে খুলনায় সক্রিয় হয় ফারুক গ্রুপ। ওই সময় তাকে একাধিকবার গ্রেফতারের চেষ্টা করে পুলিশ।
এব্যাপারে অভিযুক্ত আল আমিন ও ফারুকের সাথে একাধিকবার কল দিলেও তারা কল রিসিভ করেননি।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)