সকালের শুরুতে ভ্যানের চাকা না ঘুরলে পেটে ভাত জোটে না প্রতিবিন্ধ মাসুদের পরিবারের।নড়াইলের লোহাগড়া থানার চাচই গ্রামে ৪ শতক জমির ওপর পাটখড়ি ও পলিথিনে মোড়ানো একটি ছোট নসিমন ঘরে বসবাস করেন প্রতিবন্ধি মাসুদের পরিবার।
অতি প্রত্যুষে না খেয়ে তিন চাকার একটি ভাড়ার ভ্যান নিয়ে যাত্রীর খোঁজে বেড়িয়ে পড়েন প্রতিবন্ধি মাসুদ। অনেক সময় যাত্রীরা তাকে দেখে তাহার ভ্যানে যাত্রী হতে চায়না। কারন, মাসুদের দুটি পা ই বিকলাঙ্গ। যখন যাত্রীরা চলে যেতে চায় সে বিনীতভাবে বলে ‘আমি ভালো ভ্যান চালাতে পারি আপনাদের কোন সমস্যা হবেনা। আপনাদেরকে সুন্দরভাবে আপনাদের গন্তব্যে পৌছে দেব। আপনাদের ইচ্ছামত আমাকে ভাড়া দিয়েন। জানেন স্যার আপনাদের টাকা দিয়েই আমার সংসার চলবে এবং ছেলের লেখাপড়ার খরচ চালাতে হবে। এভাবে সারাদিন ভ্যান চালিয়ে প্রতিবন্ধি মাসুদ তিন থেকে চারশ টাকা উপার্জন করে তার তিন সদস্যের সংসারের খরচ ও একমাত্র ছেলের লেখাপড়ার খরচ চালান।
দিন শেষে ভ্যান মালিককে ভাড়া বাবদ দিতে হয় ১৬০ টাকা। প্রতিবন্ধি মাসুদ শত প্রতিবন্ধকতার ভেতরেও একমাত্র ছেলে রাজু আহম্মেদের পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন।
তার ছেলে বর্তমানে লোহাগড়া সরকারি কলেজে এইচএসসি-তে অধ্যয়নরত। প্রতিবন্ধি মাসুদের স্বপ্ন তার ছেলে লেখাপড়া শিখে একদিন অনেক বড় হবে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাসুদের ঘরটি জসিমউদ্দিনের আসমানি কবিতার সেই আসমানিদের ঘরের মত। কালের বিবর্তনে বেন্না পাতা হাঁরিয়ে যাওয়ায় পাটখড়ি ও পলিথিন দিয়ে একটি নসিমন ঘর তৈরি করে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন।
প্রতিবন্ধি মাসুদের সাথে কথা বললে, মাসুদ আবেগাপ্লুত হয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার ছেলে যখন আমার কাছে লেখাপড়ার খরচের টাকা চায় তখন নিজেকে বড় অসহায় মনে হয়। মনে হয় আমি যেন জগতের একমাত্র ব্যর্থ পিতা। প্রতিবেদক ভিক্ষাবৃত্তির কথা জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, যতদিন আমার দেহে প্রাণ আছে ততদিন আমি যেকোন কর্ম করেই হোক সংসারের খরচ জোগাড় করব কিন্তু ভিক্ষাবৃত্তি কখনোই করবনা। জানেন, আমার বয়স যখন চার বছর তখন আমার কালো জ্বর হয়েছিল।
আমার বাবা মায়ের চিকিৎসার টাকা না থাকায় আমাকে চিকিৎসা না দেওয়ার কারনে আমার পা দুটি বিকলাঙ্গ হয়ে যায়। চার বছর বয়স থেকেই প্রতিবন্ধি খোঁড়া মাসুদ নামে অনেক ঘাত-প্রতিঘাতের মাঝে জীবনের ছত্রিশটি বছর পার করেছি।
ছত্রিশটি বছর পাইনি কারো দয়া অনুগ্রহের পরশ। আমার দিকে হাত বাড়ায়নি কোন দানবীর। প্রতিবন্ধিদের বিষয়ে বর্তমান সরকারের সুযোগ সুবিধার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি আফসোস করে বলেন, ছত্রিশ বছর ধরে আমি প্রতিবন্ধি অথচ মাত্র আড়াই বছর পূর্বে একটি প্রতিবন্ধি কার্ড পেয়েছি এবং তাতে যে ভাতার টাকা পাই সেটা আমার চাহিদার তুলনায় খুবই নগন্য।
আমি একজন প্রতিবন্ধি ভ্যান চালক। আমি হালাল উপার্জন করে আমার সংসার চালাই। তিনি জানান ভাড়ার ভ্যান চালিয়ে যা উপার্জন করি তাতে সংসার ও ছেলের লেখাপড়ার খরচ চালানো খুবই কষ্টসাধ্য আবার আমার নিজেরও সামর্থ্য নেই যে একটি ব্যাটারী চালিত ভ্যান কিনবো। সর্বশেষ তিনি বলেন, যদি কেউ আমাকে একটি ব্যাটারী চালিত ভ্যান উপহার দিত তাহলে হয়তো আমার সংসার আরেকটু ভালো ভাবে চলতো।
এ বিষয়ে তিনি সরকার ও সমাজের ধনাঢ্য ব্যক্তিদের কাছে সহযোগিতা কামনা করেছেন। প্রতিবন্ধি মাসুদের সহযোগিতায় সরকারসহ সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে আসবেন- এমনই প্রত্যাশা সমাজের সচেতন মানুষের।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]