নড়াইলের কালিয়া উপজেলার নবগঙ্গা নদীর মহাজন-বড়দিয়া ঘাটে প্রায় এক বছর আগে দুটি ফেরি আনা হয়েছে। এখনো ওই ঘাটে ফেরি চলাচল শুরু হয়নি।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের উদাসীনতা ও অবহেলার কারণে ফেরি চালু হচ্ছে না। তবে সওজের কর্মকর্তারা বলছেন, দুই মাস আগে ঘাটের সংযোগ সড়কের কাজ শেষ হয়েছে। জনবলসংকটের কারণে ফেরি চালানো যাচ্ছে না।
ওই ঘাটের পশ্চিম পারে মহাজন বাজার, এ পারে লোহাগড়া উপজেলা ও নড়াইল জেলা সদর এবং পূর্ব পারে বড়দিয়া বাজার, এ পারে নড়াগাতী থানা ও কালিয়া উপজেলা সদর। এটি এক সময় নৌবন্দর ছিল। এখনো আছে নৌ পুলিশ ফাঁড়ি। জেলার মধ্যে টিন বিক্রির সবচেয়ে বড় মোকাম এখানে অবস্থিত। বড়দিয়া ও মহাজন বাজার দুটি অন্তত ১৫ কিলোমিটারের মধ্যে সবচেয়ে বড় বাজার।
এ বাজারে কয়েকটি ব্যাংক, এনজিওর কার্যালয় ও বড় খাদ্যগুদাম রয়েছে। এর আশপাশে রয়েছে মুন্সি মানিক মিয়া ডিগ্রি কলেজ, বড়দিয়া বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়, ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মাধ্যমিক বিদ্যালয়, টুনা ইসলামিয়া মাদ্রাসা ও মহাজন মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ অন্তত ২০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
স্থানীয় মাউলি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রোজী হক বলেন, ‘নবগঙ্গা ও মধুমতী নদী পরিবেষ্টিত এলাকাটি পুরোনো ঐতিহ্যবাহী জনপদ। নদীবন্দরের কারণে একসময় আশপাশের জেলা থেকে এখানে বড় বড় ব্যবসায়ীরা মোকাম করতে আসতেন। সে ঐতিহ্য এখনো বিলীন হয়নি। অনেক আগেই এখানে সেতু হওয়া উচিত ছিল। সেতু হয়নি, সওজ ফেরি চালু করতে প্রায় এক বছর আগে দুটি ফেরি আনে, তা–ও চালু হলো না।
এই ঘাটে নৌকায় পারাপারের ব্যবস্থা। কোনো গাড়ি পারাপার করা যায় না। গাড়ি পার করতে হলে ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার ঘুরে গোপালগঞ্জের চাপাইল সেতু বা কালিয়ার বারইপাড়া ফেরিঘাট দিয়ে আসতে হয়। দ্রুত অসুস্থ রোগী অ্যাম্বুলেন্সে নিতে হলে এভাবে ঘুরে গোপালগঞ্জ, খুলনা, নড়াইল ও ঢাকায় নিতে হয়। মহাজন ঘাট পর্যন্ত যাত্রীবাহী বাস আসে। ফেরি চালু হলে নড়াগাতী ও কালিয়ায় বাস চলাচল করতে পারবে। প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাসসহ ছোট পরিবহন চলতে পারবে।
বড়দিয়া বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জগদীশ চন্দ্র সরকার বলেন, বড়দিয়া ও মহাজন ঐতিহ্যবাহী পুরোনো বড় বাজার। ফেরি চালু না হওয়ায় পণ্য পরিবহনের জন্য কাভার্ড ভ্যান, ট্রাক, পিকআপ, ট্রলি, ভ্যান, নছিমন চলতে পারে না। এ জন্য ওই ঘাটে এসে কুলি দিয়ে পণ্য নামিয়ে নৌকায় ওঠাতে হয়। এতে ভোগান্তির পাশাপাশি খরচও বাড়ে। এ ছাড়া উভয় পারেই নৌকার ঘাট সমতল নয়, খাঁড়া। তাই ওঠানামাও বিপজ্জনক।
সরেজমিন দেখা যায়, মহাজন খেয়াঘাটের ১০০ ফুট উত্তরে উভয় পাড়ে পন্টুন ও সংযোগ সড়ক প্রস্তুত আছে। মহাজন পাড়ে পন্টুনের সঙ্গে দুটি ফেরি বাঁধা রয়েছে।
কালিয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘ফেরি চালু না হওয়ায় জনগণের ভোগান্তি হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে সওজ বিভাগের সঙ্গে এর আগে কথা বলেছি। আবারও বলব। জেলা প্রশাসনকেও জানাব।
সওজের নড়াইল কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুজ্জামান বলেন, ‘এক বছর আগে এ ঘাটে ফেরি আনা হয়েছে, তবে পন্টুন ও সংযোগ সড়ক প্রস্তুত ছিল না। দুই মাস আগে তা প্রস্তুত করা হয়েছে। কিন্তু লোকবলসংকটে ফেরি চালু করা যাচ্ছে না।
কালনা সেতু চালু হলে সেখানকার লোকবল দিয়ে এ দুটি ফেরি চালু করার চেষ্টা চালাব। এটি এক সময় নৌবন্দর ছিল। এখনো আছে নৌ পুলিশ ফাঁড়ি। জেলার মধ্যে টিন বিক্রির সবচেয়ে বড় মোকাম।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সওজের অবহেলার কারণে ফেরি চালু হচ্ছে না। সওজের কর্মকর্তারা বলছেন, জনবলসংকটের কারণে ফেরি চালানো যাচ্ছে না।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]