কর্মসৃজন প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের ৪০ দিনের কাজ ভেস্তে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নড়াইলের কালিয়ায় শ্রমিকের তালিকা প্রস্তুতে অনিয়ম, শ্রমিক, তদারকির অভাব ও হরিলুটের পরিকল্পনার কারণে মূলত এই অবস্থার সৃষ্টি।
এদিকে, অনুপস্থিত শ্রমিকদের হাজিরা দেখিয়ে কাজ শেষ না করেই ৩৫ দিনের মজুরির টাকার একটি অংশ সংশ্লিষ্টরা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা যায়, হতদরিদ্রদের জন্য চলতি অর্থবছরে সরকারের কর্মসৃজন প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে ৪৮টি প্রকল্পের কাজ হাতে নেওয়া হয়। ওইসব প্রকল্পের অনুকূলে এক হাজার ২৩৯ শ্রমিক নিয়োগ করা হয়েছে। সরকারি বিধান অনুযায়ী ওইসব প্রকল্পের একজন শ্রমিক প্রতিদিন ৩৫ ঘনফুট মাটি কাটার বিনিময়ে ২০০ টাকা হারে মজুরি পাবেন।
গত বছর ১৪ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া ৪০ দিনের ওই কর্মসূচির কাজ চলতি বছর ৬ জানুয়ারি শেষ হওয়ার কথা। বিভিন্ন ইউনিয়ন ওইসব প্রকল্পের খোঁজ নিতে গিয়ে জানা গেছে, গত ৩৫ দিনে পেড়লী ইউনিয়নের পাঁচটি প্রকল্পের মধ্যে তিনটিতেই কাজের কোনো নমুনা পাওয়া যায়নি। দুটি প্রকল্পের কাজ আংশিক শেষ করা হয়েছে।
প্রকল্প চেয়ারম্যানরা বলেছেন, শ্রমিক নিয়োগ ও স্থানীয় সমস্যার কারণে তারা কাজ করতে পারেননি। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসে বার বার জানিয়েও কোনো সুরাহা হয়নি।
চাচুড়ী ইউনিয়নের চারটি প্রকল্পের মধ্যে দুটির কাজ আংশিক সম্পন্ন হয়েছে। ওই ইউনিয়নের ‘দাদনতলা মিজান মোল্যার বাড়ি থেকে শামছু মোল্যার ঘের অভিমুখী রাস্তা মাটি দ্বারা উন্নয়ন’ প্রকল্পে গিয়ে ২২ শ্রমিকের স্থলে তিন শিশুসহ দশজনকে কাজ করতে দেখা গেছে। শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিশুরা বদলি শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে।
প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি বাচ্চু মিয়া বলেন, ১৪ জন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করে থাকেন, আর বাকি আটজন শ্রমিক অফিসের হিসেবে রয়েছে। এর বেশি আর কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। শিশু শ্রমিক কাজ করে কি-না তিনি জানেন না বলে দাবি করেন।
একই ইউনিয়নের ‘কৃষ্ণপুর মুরালী বিশ্বাসের বাড়ি হতে বিল্লাল খাঁর বাড়ি অভিমুখী রাস্তা মাটি দ্বারা উন্নয়ন’ প্রকল্পস্থলে গিয়ে ২২ জন শ্রমিকের জায়গায় ১৭ জনকে কাজ করতে দেখা গেছে।
প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি মো. রবিউল ইসলাম বিপুল বলেন, প্রকল্পের কাজ চলছে। শ্রমিক অনুপস্থিতির বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি নানা সমস্যার কথা তুলে ধরেন।
এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শ্রমিক অনুপস্থিতির কারণে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পগুলোর কাজ বেশিরভাগই আংশিক সম্পন্ন হয়েছে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শ্রমিকের তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে ব্যাপক অনিয়মের কারণে অনেকেই প্রকল্পের কাজে যোগ দেন না। যে কারণে গত ৩৫ দিনে বেশিরভাগ প্রকল্পের প্রায় অর্ধেক কাজ শেষ করেই বরাদ্দকৃত টাকার অর্ধেক টাকা সংশ্লিষ্টরা তুলে ভাগবাটোয়ারা করে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নাছরিন সুলতানা বলেন, জেলার তিনটি উপজেলার দায়িত্বে থাকার কারণে সবকিছু খেয়াল রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে কোনো অনিয়ম হয়ে থাকলে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কালিয়ার ইউএনও মো. নাজমুল হুদা বলেন, অনিয়ম ও নানা সমস্যার কারণে উপজেলার কর্মসৃজন প্রকল্পের কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। প্রকল্পের কাজের মেয়াদ বৃদ্ধি হলে আবার কাজ শুরু করা হবে।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]