নড়াইলে পাউবোর খাল খনন উপকারের বদলে দুর্ভোগ বেড়েছে বেশি। নড়াইলে খাল খনন নড়াইল সদর উপজেলার গারোচোরা থেকে চানপুর পর্যন্ত তিন কিলোমিটার খাল পুনর্খনন করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। উপকারের বদলে তা এখন দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
খাল খননের পর দুই পাড়সহ পাকা রাস্তা ভেঙে পড়ায় এলাকার মানুষ এখন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। আট মাস পার হলেও ভেঙে যাওয়া পাড় ও রাস্তা সংস্কার করা হয়নি। আমাদের নড়াইলে জেলা প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায়, জানান, পাউবো সূত্রে জানা গেছে, ২৩ লাখ টাকা ব্যয়ে চলতি বছরের জানুয়ারিতে খালটির ১ হাজার ৭০০ মিটার পুনর্খননের কাজ শুরু হয়। মেসার্স নাজমুল হক নামে একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান খালের উপরিভাগে ৪০ থেকে ৫০ ফুট এবং তলদেশ ১০ ফুট চওড়া করে খাল পুনর্খননের কাজ পায়।
গত ২২ সেপ্টেম্বর সরেজমিনে দেখা গেছে, শাহাবাদ ইউনিয়নের চারটি বিলের কৃষিকাজে সেচ সুবিধার জন্য খালটি পুনর্খনন করে চিত্রা নদীর সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। খালের উপরিভাগে ৪০ থেকে ৫০ ফুট এবং তলদেশ ১০ ফুট চওড়া করে কাটার নির্দেশনা ছিল। কিন্তু উপরিভাগ কাটা হয়েছে ১৫ থেকে ১৬ ফুট এবং তলদেশ ১০ থেকে ১২ ফুট চওড়া করে কাটা হয়েছে। নদীর কাছাকাছি এলাকায় খালের মতো করে না কেটে সরু আকারে কাটা হয়েছে। এতে নদীর পানি খালে প্রবেশ করতে পারছে না। অনেক স্থানে ঢালু না করে খাড়াভাবে খাল খনন করা হয়েছে। এতে এসব স্থানে দুই পাড়ের মাটি ধসে পড়ে খাল পাড়ের বসতভিটা হুমকির মুখে পড়েছে। ভেঙে গেছে পৌরসভার পাকা রাস্তা।
গারোচোরা গ্রামের বাসিন্দা সাজ্জাদ হোসেন ও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক লুতফুন্নেছাসহ কয়েকজন বলেন, ‘ঝুড়ি-কোদাল দিয়ে খাল কাটা হলে পাড়ের বাসিন্দাদের এত ক্ষতি হতো না। খননযন্ত্র দিয়ে খাল কাটা হয়েছে। এতে পাড়ে কোনো ঢাল তৈরি হয়নি। খালের পাড় খাড়াভাবে কাটায় পাশের বিভিন্ন স্থাপনাসহ পৌরসভার রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যে উদ্দেশ্যে খাল খনন করা হয়েছে তা পূরণ হয়নি।
ভ্যানচালক রোস্তম আলী বলেন, ‘রাতে ভ্যান চালানো যায় না। অনেক সময় অন্য ভ্যানকে সাইড দিতে গেলে খাদে পড়ে যেতে হয়। এক সপ্তাহ আগে খাদে পড়ে গিয়ে নয়নপুর গ্রামের ভ্যানচালক হরিপদ বিশ্বাসের পা ভেঙে গেছে।
জানতে চাইলে ঠিকাদার এনামুল হক বলেন, ৪০-৪৫ বছর সংস্কার না করায় খালের বেশির ভাগ অংশ ভরাটসহ বেদখল হয়ে বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে উঠেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের মেপে দেয়া জায়গায় খাল খননের কাজ করেছি।
এনামুল হক আরও বলেন, দরপত্রে খননযন্ত্র দিয়ে খাল কাটার নির্দেশনা আছে। খাল কাটতে গিয়ে নানা ধরনের বাধার সম্মুখীন হয়েছি। ঠিকমতো খাল কাটতে পারিনি।
নড়াইল পৌরসভার মেয়র আনজুমান আরা বলেন, খাল খননের পর ১১ ফুট চওড়াবিশিষ্ট প্রায় ১ কিলোমিটার পাকা রাস্তা ভেঙে যায়। ভেঙে যাওয়া রাস্তাটি মেরামতের জন্য জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে পাউবোকে চিঠি দেয়া হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙা রাস্তার পাশ দিয়ে বাঁশের খুঁটি ও গাছের গুঁড়ি পুঁতে কিছু বালুর বস্তা দিয়ে দায়সারাভাবে রাস্তা ভরাট করে। তিনি দ্রুত এই ভাঙা স্থান ভরাটের জন্য পাউবো কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী উজ্জ্বল কুমার সেন বলেন, প্রায় চার যুগ ভরাট খাল পুনর্খননের উদ্যোগ নেয়ায় এলাকাবাসীর বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। কাজ করতে সমস্যা হয়েছে। অনেক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিষয়টি সরেজমিনে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]