নড়াইলে এ বছর বাঙ্গির বাম্পার ফলন হয়েছে। এ ফলন গতবারের লক্ষ্যমাত্রাকে ছাড়িয়ে যাওয়ায় কৃষকদের মুখে ফুটেছে হাসি। অল্প বীজে ভালো ফলন হওয়ায় কৃষকেরা বাঙ্গি উৎপাদনের দিকে ঝুঁকে পড়েছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার দক্ষিণাঞ্চল হিসেবে পরিচিতি কোলা, পারমল্লিকপুর, কোলা-দিঘলিয়া এলাকায় দীর্ঘ দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে বাঙ্গি চাষ হয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় এ মৌসুমে আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এবং সময়মত সার ও বীজ প্রয়োগ করায় বাঙ্গির বাম্পার ফলন হয়েছে। বাঙ্গি চাষ করে এ এলাকার অনেক কৃষক পরিবার স্বচ্ছলতার মুখ দেখছে।
পারমল্লিকপুর, কোলা ও দিঘলিয়া এলাকার একাধিক কৃষকরা জানান, এসব খেত থেকে প্রতিদিন প্রায় ১ টন বাঙ্গি সংগ্রহ করছেন স্থানীয় কৃষকরা। প্রতিদিন পাইকারি ব্যবসায়ীরা খেতে এসে কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি বাঙ্গি কিনে নিয়ে দেশের বড় বড় বিভাগীয় শহরে বিক্রি করছেন। আকার অনুযায়ী প্রতিটি বাঙ্গির দাম ৫০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত। বাঙ্গি সাধারণত বেলে ও আঠালো জাতীয় হয়ে থাকে, আঠালে বাঙ্গি খেতে বেশি সুস্বাদু। আঠালে বাঙ্গি তরকাকি হিসাবেও খাওয়া যায় বলে জানান এক কৃষক ।
কথা হয় উপজেলার কোলা গ্রামের বাঙ্গি চাষি বিল্লাল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, এক একর জমিতে বাঙ্গির চাষ করেছি। ফলন খুব ভালো, নিজেই বাজারে নিয়ে খুচরা বাঙ্গি বিক্রি করছি। প্রতিদিন ৫-৬ হাজার টাকার বাঙ্গি বিক্রি করছি। এতে আমি বেশ লাভবান হচ্ছি।
উপজেলার মল্লিকপুর গ্রামের বাঙ্গি চাষি মুরাদ হোসেন বলেন, আমাদের এই বাঙ্গি উপজেলার লোহাগড়া বাজার, দিঘলিয়া বাজার, এড়েন্দা বাজার, শিয়রবর বাজার, মানিকগঞ্জ বাজার, লাহুড়িয়া বাজারসহ জেলার বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করার পরেও এই বাঙ্গি যশোর, খুলনা, ফরিদপুর, ঢাকা, বরিশাল, মোল্যারহাটসহ বিভিন্ন জেলার পাইকাড়ি ব্যবসায়িরা এসে কিনে নিয়ে যাচ্ছে।
বাঙ্গি চাষ সম্পর্কে মল্লিকপুর গ্রামের কৃষক রাসেল মোল্যা জানান, সাধারণত মাঘ মাসে জমিতে বাঙ্গির বীজ লাগানো হয়। এক একর জমিতে এক মন টিএসপি, এমপি ইউরিয়া সার দিতে হয়। চৈত্র ও বৈশাখ মাসে বাঙ্গি খাওয়ার উপযুক্ত হয়। বাঙ্গি চাষে তেমন খরচ হয় না।
লোহাগড়া বাজারের বাঙ্গি ব্যবসায়ী বোরহান ও সুমন বলেন, এক শত বাঙ্গি পাঁচ হাজার টাকায় কিনে ৭-৮ হাজার টাকা বিক্রি করেছি। বাঙ্গি একদিকে যেমন কৃষকের মুখে হাসি ফুটাচ্ছে তেমনি বাঙ্গি ব্যবসায়ীরাও লাভবান হচ্ছে।
মল্লিকপুর গ্রামের শহিদ কাজি, সেলিম কাজী বলেন, এ উপজেলায় বাঙ্গি সংরক্ষণের জন্য কোনো হিমাগার না থাকায় চাষিদের অবিক্রীত বাঙ্গি নিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়। অনেক সময় অবিক্রিত বাঙ্গি বাড়ির গরু ছাগলকে খাওয়ানো হয় বলেও তিনি জানান।
লোহাগড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রইচ উদ্দিন বলেন, আমাদের এ উপজেলার দক্ষিণাঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া বাঙ্গি চাষের উপযোগী, বিধায় ফলন খুব ভালো হয়েছে। এ ব্যাপারে আমরা কৃষকদের বাঙ্গি চাষের শুরু থেকে বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করে থাকি।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]