নড়াইল পৌরসভার চিত্রা নদীর তীরে দুই বছর আগে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি স্থাপনা নির্মিত হলেও এখনো তা জনগণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়নি। আমাদের নড়াইল জেলা প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায়, জানান, এটি এখন পরিণত হয়েছে ময়লার স্তূপে। এখানে মানুষের মল ত্যাগের ঘটনাও ঘটছে। এদিকে এ স্থাপনার দেয়ালে নড়াইল জেলার মুক্তিযোদ্ধাদের যে সংক্ষিপ্ত ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে তা অসম্পূর্ণ ও ভুল।
জানা গেছে, মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক স্থানসমূহ সংরক্ষণ ও মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর প্রকল্পের আওতায় নড়াইল শহরের কুড়িগ্রামে চিত্রা নদীর তীরে নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের জায়গায় প্রায় ১৫ শতাংশ জায়গার ওপর এ মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি স্থাপনা নির্মিত হয়। নড়াইল এলজিইডি বিভাগের তত্ত্বাবধানে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মার্শাল ট্রেডার্স ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০২০ সালের জুন মাসে এ কাজটি শেষ করে।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি স্থাপনার দেয়ালে নড়াইল জেলার মুক্তিযোদ্ধাদের একটি সংক্ষিপ্ত ইতিহাসে এখানে ১ নম্বর পয়েন্টে লেখা হয়েছে ‘১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ নড়াইল ট্রেজারি ভেঙে অস্ত্র নিয়ে যায় মুক্তিযোদ্ধারা’। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধারা জানিয়েছেন ২৭ মার্চ নড়াইল ট্রেজারি ভাঙা হয়। ২ নম্বর পয়েন্টে লেখা হয়েছে ‘৮ই মে ৮ জন ও ২৩মে ৪৯ জন ইতনা গণহত্যায় শহীদ হন ৫৭ জন’। কিন্তু নড়াইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের অভ্যন্তরে (তৎকালীন ওয়াপদা ভাবন) এই গণকবরের নামফলকে লেখা রয়েছে, ‘২০ জুলাই ৮ জন মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করা হয়’।
লোহাগড়া উপজেলার ইতনা গ্রামে ২৩ মে গণহত্যার নামফলকে ‘স্বাধীনতাকামী ৩৯ জন এবং স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আরও ১১ শহীদদের নামের তালিকা রয়েছে’। ৪,৫ ও ৬ নম্বরে লোহাগড়া, কালিয়া উপজেলা এবং নড়াইল মুক্ত দিবসের যে তথ্য দেওয়া হয়েছে তা খণ্ডিত ও অসম্পূর্ণ।
নড়াইল জজ আদালতের পেছনে চিত্রা নদীর তীরে নড়াইল লঞ্চ ঘাটের পন্টুনের ওপর ৩ হাজারের বেশি মানুষকে গলা কেটে চিত্রা নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হলেও এখানে তার কোনো তথ্য নেই। এ ছাড়া দীর্ঘ ৯ মাসজুড়ে জেলায় প্রায় ৩০০ মুক্তিযোদ্ধা এবং প্রায় ৬ হাজার মানুষকে হত্যা করা হলেও সে সম্পর্কে কোনো তথ্য নেই।
এ প্রসঙ্গে মার্শাল ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী এ কাজের ঠিকাদার তরিকুল বিশ্বাস বলেন, কাজটি সমাপ্ত হওয়ার ২ মাস পর নড়াইল এলজিইডি বিভাগের তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী, উপজেলা প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে কাজটি বুঝে দেওয়া হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের সংক্ষিপ্ত ইতিহাসের তথ্য কে দিয়েছে এমন প্রশ্নে ঠিকাদার বলেন, তৎকালীন উপজেলা প্রকৌশলীর মাধ্যমে যে তথ্য দেওয়া হয়, তার ভিত্তিতে এটি লেখা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে নড়াইল এলজিইডি বিভাগের বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী বিশ্বজিত কুমার কুন্ডু বলেন, ‘এ প্রকল্প মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে হওয়ায় এর তত্ত্বাবধান সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের করা উচিত ছিল।’
জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি জেলা কমান্ডার এস এ মতিন বলেন, ‘গত শনিবার জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি স্থাপনার পরিস্থিতি তুলে ধরেছি। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, কয়েক দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]