নড়াইলের কালিয়ায় লালন সাধক হারেজ ফকীরকে মারধর করে তার আখড়াবাড়িতে থাকা সংগীত চর্চার অনুসঙ্গ হারমোনিয়াম, তবলা, দোতারা, বাঁশিসহ বাড়ির বিভিন্ন মালামাল ভেঙ্গে দিয়েছে জামায়াত নেতা আলী মিয়া ও তার লোকজন।
এ অভিযোগে বুধবার (৩১ আগস্ট) বিকেলে সাধক ফকির (৮৪) বাদি হয়ে কালিয়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এদিকে এ মামলার একদিন পর বৃহস্পতিবার দুপুরে আলী মিয়ার লোকজন হারেজ ফকীরের প্রতিবেশী স্থানীয় ইসমাইল চৌকিদারসহ ৪জন নারী-পুরুষকে মারধর করেছে।
লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, কালিয়া উপজেলার পুরুলিয়া ইউনিয়নের নওয়াগ্রামের বাসিন্দা হারেজ ফকীর শনিবার (২৭ আগস্ট) রাত ১০টার দিকে স্থানীয় কিছু ভক্ত নিয়ে সংগীত পরিবেশন করছিলেন। এ সময় স্থানীয় জামায়াত ইসলামী নেতা আলী মিয়া শেখ, মিন্টু শেখসহ ২০-২৫জনের একটি দল হটাৎ এসে সাধককে মারধর, সংগীতের বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রসহ বিভিন্ন মামলাল ভাংচুর করে। তারা চলে যাবার সময় বাড়ি থেকে উচ্ছেদসহ প্রাণ নাশের হুমকি দিয়ে যায়।
নওয়াগ্রামের বাসিন্দা নড়াইল বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন শীতল বলেন, হারেজ ফকীর একজন লালন তরিকার সাধু। নওয়াগ্রামে তার আখড়াবাড়িতে দীর্ঘ বছর ধরে একান্ত নিভৃতে লালন সংগীতের চর্চা করে আসছেন। একজন চিহিৃত জামায়াত নেতা আলি মিয়ার লোকজন এই সাধককে মারধর ও তার সংগীত চর্চার বাদ্যযন্ত্রগুলো ভেঙ্গে দিয়েছে। আমরা এ ঘটনায় দোষীদের গ্রেফতার করে শাস্তির দাবি জানাই।
এ প্রসঙ্গে সম্মিলিত সাংস্কৃতি জোট, নড়াইলের সভাপতি মলয় কুন্ডু ও সাধারণ সম্পাদক শরফুল আলম লিটু বলেন, মৌলবাদীরা বার বার সংস্কৃতির ওপর আঘাত হানছে। এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। অবিলম্বে এই মৌলবাদীদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
সাধক ফকিরের ছেলে মিজান ফকীর বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে স্থানীয় সাগরসহ কয়েকজন আমাকে জানায়, তোরে যেন আর এলাকায় না দেখি। এর পর আমি ভয়ে খুলনায় চলে যাচ্ছি। এ সময় মিন্টু শেখসহ কয়েকজন প্রতিবেশী নাজমুল শেখ, তার স্ত্রী হাসমা বেগম ও তার কন্যা ময়নাকে মারধর করেছে এবং তার এখন মামলা প্রত্যাহারের জন্য চাপ দিচ্ছে।
অভিযুক্ত আলী মিয়া শেখ বলেন, দীর্ঘ বছর ধরে হারেজ ফকীর গাঁজা সেবন ও ব্যবসা করে আসছে। সে এলাকার যুব সমাজকে ধ্বংস করছে। তাকে বিভিন্ন সময় নিষেধ করলেও শোনেনি। বিভিন্ন সময় পুলিশকে জানালেও কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়নি। শুনেছি স্থানীয় কিছু ছেলে হারেছের বাড়িতে গিয়েছিল। কিন্তু কি করেছে তা জানেন না। তিনি এক সময় জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন,তবে এখন সক্রিয় নন বলে জানান।
কালিয়া উপজেলা আ’লীগের সাবেক সদস্য ইউপি চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম মনি মিয়া বলেন, এলাকার কিছু লোক আমার কাছে হারেছের বিষয়ে নালিশ করতে এসেছিল, আমি হারেছকে নিষেধ করেছি এসব সেবন না করতে। হারিছের বাড়ি ও বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র কেউ ভাংচুর করেনি। ওরা মিথ্যা কথা বলছে। আর আমার ভাই এ ঘটনায় জড়িত নয় বলে মন্তব্য করেন।
এ ব্যাপারে সাধক হারেজ ফকীর বলেন, ঘটনার দিন রাতে আলি মিয়ার নেতৃত্বে একদল মানুষ আমার দীর্ঘদিনের সাধনা হারমোনিয়াম, তবলাসহ বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র ও ঘরের বিভিন্ন মালামাল ভেঙ্গে ফেলেছে। আমি এ ঘটনার বিচার দাবি করছি। আপনি গাঁজা সেবনসহ এর ব্যবসার সাথে জড়িত কিনা এ প্রশ্নে তিনি অস্বীকার করে বলেন, দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে এখানে সাধনা করছি। এতোদিন এ প্রশ্ন ওঠেনি। এখন এ প্রশ্ন উঠছে কেন? তারা সংগীত সাধনা করতে দিবেনা বিধায় এ ধরনের কথা বলছে।
এ প্রসঙ্গে কালিয়া থানার ওসি শেখ তাসমীম আলম বলেন, এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়েছে। ইসমাইল চৌকিদারকে মারধরের বিষয়টি শুনেছি। বিষয়টির তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]