বিশেষ প্রতিনিধি: সাতক্ষীরা সদর থানা পুলিশের নির্দেশ অমান্য করে কাশেমপুর বাইপাস বায়তুন নুর জামে মসজিদের জোরপূর্বক কমিটি গঠন করে দখলে আনার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এঘটনায় দাতা সদস্য সিদ্দিক আলী বাদী হয়ে সদর থানায় ৪ জনকে বিবাদী করে আরো ১৫/২০ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগ সূত্রে জানাগেছে, বিবাদীরা প্রকৃত হিংস্র, ডাঙ্গাবাজ, পরসম্পদ লোভী, ও জবর দখলকারী। স্থানীয় মহল্লার মুসল্লী ও দাতা সদস্যরা জানান, স্থানীয় মহল্লাবাসী ও পথচারীদের ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের স্বার্থে সদর উপজেলার কাশেমপুর গ্রামের মৃত ছলেমান সরদারের ওয়ারেশগণ তাদের পৌত্রিক তিন শতক জমির উপর সকলের সহযোগিতায় ও স্থানীয় মহল্লার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে মসজিদ নির্মাণ করেন। কিন্তু মসজিদটি নির্মাণ কাজের শুরু থেকেই কাশেমপুর স্কুল সংলগ্ন জামে মসজিদের সহ সভাপতি আব্দুল কদ্দুস, সদস্য আব্দুল মান্নান, আবুল হাসান, আব্দুল বারীসহ স্বার্থনেষী একটি মহল্লার লোকজন ও নানা অপকর্মের হোতা ব্যক্তিরা মসজিদটি দখলের আনার জন্য নানা ষড়যন্ত্রের লিপ্ত হয় এবং মসজিদে অশান্তি সৃষ্টি করতে থাকে। তারা মসজিদের সাধারণ মুসল্লী ও দাতা সদস্যদের মধ্যে উস্কানি দিয়ে অশান্তি সৃষ্টি করে। তারা মসজিদের উন্নয়ন কাজে বাঁধা সৃষ্টি করে ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করে। এছাড়াও প্রায় সময় তারা দাতা সদস্য পরিবারদেরকে হাত, পা, ভেঙ্গে দেওয়ার হুমকি প্রদর্শন করতে থাকে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয় মহল্লার বাসিন্দা মুসল্লী ও দাতা সদস্যরা। স্থানীয় মুসল্লীরা আরো জানান, মসজিদে কোন্দল নিরাসন করতে পুলিশিং কমিটির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেক সাহেব একটি সাত সদস্য মসজিদের আহবায়ক পরিচালনা কমিটি গঠন করে দেয়। এক বছরের মাথায় মুসল্লী ও দাতা সদস্যরা আহবায়ক পরিচালনা কমিটির কাছে আয় ব্যয়ের হিসাব চাইলে গত ১৫ এপ্রিল তারিখে আসর নামাজের পর মুসল্লী ও দাতা সদস্যদের কাছে আয় ব্যায়ের হিসাব দেওয়ার কথা ছিল তাদের। একই তারিখে তাদের কথামত স্থানীয় কিছু মুসল্লী ও দাতা সদস্যরা আসর নামাজের পূর্বে মসজিদে নামাজ আদায় করতে গেলে মসজিদে তালা মারা দেখতে পায়। মুয়াজ্জিন আব্দুল বারী ও ইমাম সাহেবের তালা খোলার অপেক্ষায় মুসল্লীরা নামাজের জন্য মসজিদের সামনে দাড়িয়ে থাকে। একপর্যায়ে মসজিদে তালা মারা থাকায় এবং ইমাম সাহেবের কাছে ওই তালার চাবি না থাকায় মসজিদে আজান ও নামাজের বিঘ্ন ঘটলে এক মুসল্লী মসজিদের বাহিরে দাঁড়িয়ে আজান দেয় এবং স্থানীয় মুসল্লীদের উপস্থিতিতে সাংবাদিক শহীদুল ইসলাম মসজিদের তালা ভেঙ্গে মসজিদে প্রবেশ করে আসরের নামাজ আদায় করে। পরে স্থানীয় মুসল্লী ও দাতা সদস্যরা জানতে পারে তারা আয় ব্যয় হিসাব না দেওয়ার জন্য পরিচালনা কমিটির আহবায়ক হাজি কুদ্দুস গাজী, আব্দুল মান্নান ও আবুল হাসানের ইন্দনে মসজিদের সাবেক মুয়াজ্জিন আব্দুল বারী জোহর নামাজের পর এক মুসল্লীকে মসজিদে তালা মেরে দিতে বলে এবং মুয়াজ্জিন আব্দুল বারী তালার চাবি নিয়ে আত্মীয় বাড়িতে চলে যায়। একইদিনে সন্ধ্যায় মুয়াজ্জিন আব্দুল বারী মসজিদে এসে ওই তালার চাবি বের করে দেয়। এরপর একইদিনে রাতে পূর্বের কমিটির আহবায়ক হাজি আব্দুল কদ্দুসসহ অন্যান্য সদস্যেরা পুলিশিং কমিটির সভাপতি আব্দুল খালেক সাহেবের মাধ্যমে স্থানীয় একজন দাতা সদস্য ও দুই জন মুসল্লীর কাছে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয় তারা। নতুন পরিচালানা কমিটি গঠন না হওয়া পর্যন্ত ওইদিন থেকে মসজিদে একজন দাতা সদস্য ও দুই জন মুসল্লী দায়িত্ব পালন করে আসছিল। গত ২৪ মে সকালে প্রতিবছরের ন্যায় মসজিদের উন্নয়ন কল্পের কাজের স্বার্থে এই তিনজন মসজিদে দায়িত্ব থাকা ব্যক্তিদের তত্বাবধানে মুসল্লীরা মসজিদের সামনে দাড়িয়ে সাধারণ পথচারীদের কাছ থেকে টাকা তুলছিল। টাকা তোলা কেন্দ্র করে একইদিনে সকাল ৯ টার দিকে কাশেমপুর এলাকার আব্দুল মান্নান, আবুল হাসান, আব্দুল বারী, লাকীসহ ১৫/২০ জন ব্যক্তিরা দলবদ্ধ হয়ে মসজিদের সামনে এসে টাকা তোলা বন্ধ করে দেয় এবং মসজিদে তালা মারার হুকুম দিয়ে দাতা সদস্য শাহিনুজ্জামান শাহিনকে এলোপাতাড়ি ভাবে বেদম মারপিট করে হাড়ভাঙা রক্তাক্ত জখম করে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে চলে যায় তারা। দাতা সদস্য শাহিনুজ্জামান শাহিনকে উদ্ধার করে তার চিকিৎসার জন্য সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে স্থানীয় মুসল্লীদের পরামর্শে পুলিশকে জানানো হয়। পুলিশ ওইদিন ঘটনাস্থলে এসে উভয় পক্ষে কোন্দল না করার জন্য নির্দেশ দেয়। তারপরও এক দাতা সদস্যের ভাইপো সিরাজুল ইসলামকে গত ৩০ মে বিকেলে কাশেমপুর মাঠে মধ্যে তাকে ও তার স্ত্রীকে পেয়ে সিরাজুল ইসলামকে মসজিদে না যাওয়ার জন্য তাকে হাত, পা ভেঙ্গে দেওয়ার হুমকি দেয় হাজি কদ্দুস। এরপর গত ৩১ মে তারিখে মসজিদে কমিটি করতে এবং মসজিদ দখলে আনার জন্য ৪০/৫০ জন অন্য মহল্লার বাসিন্দা ও স্কুল সংলগ্ন জামে মসজিদ কমিটির একাংশ লোকজন দলবদ্ধ হয়ে বাইপাস মসজিদে জুম্মা নামাজে আসে। তারা দলবদ্ধ হয়ে বাইপাস মসজিদে জুম্মা নামাজে উপস্থিতি হয়ে তাদের মহল্লার বাসিন্দার লোকজনের সমর্থনে একতরফা কমিটি গঠনের নামের তালিকা করে জোরপূর্বক মসজিদ দখলে আনার চেষ্টা করছেন। অথচ কমিটি গঠনের নামের তালিকায় অধিকাংশ ব্যক্তিরা স্থানীয় মহল্লার বাসিন্দা না এবং এই মসজিদের নিয়মিত মুসল্লী না, তারা স্কুল সংলগ্ন জামে মসজিদের কমিটির সদস্য ও মুসল্লী বলে স্থানীয় মহল্লার বাসিন্দা মুসল্লীরা জানান। এসব ঘটনায় স্থানীয় মহল্লার মুসল্লী ও দাতা সদস্যদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এই বাইপাস সড়ক ছয় লেন রাস্তা হবার জন্য মসজিদের জমি সরকারি খাস করে নিয়ে নেবে সরকার এবং মোটা অংকের টাকা মসজিদের নামে দেবে। আর এই সরকারি টাকা মসজিদের নামের টাকা ভোগ করার জন্য তারা দাতা সদস্য ও স্থানীয় মহল্লার মুসল্লীদের বাদ দিয়ে মসজিদে ইচ্ছামত মনগড়া কমিটি গঠন করে দখলে আনার চেষ্টা করছেন। তাদের কারণে যেকোনো সময় মসজিদে অশান্তি সৃষ্টি হয়ে বড় ধরনের ক্ষয়-ক্ষতিসহ খুন-জখমের আশংকা করছেন স্থানীয় মুসল্লী ও দাতা সদস্যরা। এসব হিংস্র ব্যক্তিদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না এবং মসজিদে নামাজ পড়তে যেতে চায় না। তাদের লোকজনের অনেকের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা ও নানা অপকর্মের অভিযোগে থানায় রয়েছে । এসব কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গেলে তারা মারপিট, গালিগালাজ করে এবং হাত, পা ভেঙ্গে দেওয়ার হুমকি দেয় বলে দাতা সদস্য পরিবার অভিযোগ করেন। এবিষয়ে সদর থানার এসআই হাদী বলেন, বাইপাস মসজিদে এখনো কোনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের সিন্ধান্ত করা হয়নি। উভয় পক্ষে থানায় ডেকে শোনা বোঝা এবং যাচাই বাছাই করে প্রকৃত স্থানীয় মহল্লার মুসল্লী ও দাতা সদস্যদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হবে।
উক্ত বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে মসজিদে শান্তিশূংখলা রক্ষাতে প্রকৃত স্থানীয় মহল্লাবাসীদের মধ্যে সৎ, যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে কমিটি গঠনের জন্য পুলিশ সুপারের কাছে আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন দাতা সদস্য পরিবার ও স্থানীয় মহল্লার বাসিন্দা ।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]