পৌরসভার মেয়াদ শেষেই দায়িত্ব ছাড়তে হবে, বসবে প্রশাসক
পরবর্তী নির্বাচন না হলেও পাঁচ বছর মেয়াদ শেষ হলে পৌরসভার মেয়র, কমিশনারদের দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার বিধান রেখে স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) (সংশোধন) আইন ২০২১ এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
সরকার চাইলে সর্বোচ্চ ছয় মাসের জন্য প্রশাসক দিতে পারবে।
সোমবার (৪ অক্টোবর) মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে এ তথ্য জানান মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
আইনটি সংসদে পাস করার পর তা কার্যকর হবে।
নতুন এ আইনে বলা হয়েছে, যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ১২ মাস বকেয়া থাকলে পৌরসভা বাতিল হয়ে যাবে।
বিদ্যমান ‘স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন-২০০৯’ এ পৌরসভা গঠন হওয়ার পর নির্বাচনের আগ পর্যন্ত প্রশাসক নিয়োগের সুযোগ আছে। তবে মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও নির্বাচন না হলে আগের মেয়র ও কাউন্সিলররা দায়িত্বে থাকেন।
এখন আইন সংশোধনে মন্ত্রিসভার সায় পাওয়ার পর নতুন বা পুরনো যে কোনো পৌরসভায় নির্বাচনসংক্রান্ত জটিলতা তৈরি হলে প্রশাসক নিয়োগের সুযোগ তৈরি হলো।
বিদ্যমান আইনের সুযোগ নিয়ে অনেক এলাকার পৌর মেয়ররা নির্বাচিত মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নিজেদের লোকজন দিয়ে বিভিন্ন উপলক্ষ্যে আদালতে মামলা ঠুকে দেন। এতে মামলা নিষ্পত্তির আগে পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠানের সুযোগ থাকে না।
আর মামলা বছরের পর বছর চলার সুযোগে আগের মেয়রই দায়িত্ব পালন করেন। এমন সমস্যা থেকে উত্তরণে পৌরসভায় প্রশাসক নিয়োগের প্রস্তাব করা হয়েছে বলে জানা গেছে। আইনটি পাস হলে পৌরসভায় প্রশাসক নিয়োগের সুযোগ তৈরি হবে।
উল্লিখিত জটিলতার কারণে হবিগঞ্জের আজমেরীগঞ্জ পৌরসভায় প্রায় দেড়যুগ নির্বাচন হচ্ছে না। ২০০৪ সালের ২১ জানুয়ারি আজমেরীগঞ্জকে পৌরসভা ঘোষণা করে সরকার।
এর পরপরই প্রাথমিকভাবে প্রশাসকের দায়িত্ব পান স্থানীয় বিএনপি নেতা গোলাম ফারুক। তার নেতৃত্বে পৌরসভার সীমানা নির্ধারণ সম্পর্কিত ঘটনায় আদালতে মামলা হলে সীমানা নির্ধারণে স্থগিতাদেশ দেন আদালত।
টানা ১৪ বছরের বেশি প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন গোলাম ফারুক। বছর দেড়েক আগে আদালতের অপর এক আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে গোলাম ফারুককে ওই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
এখন অভিভাবকহীন এ পৌরসভায় দেখভালের দায়িত্বে আছেন স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। নীলফামারীর পৌর মেয়র দেওয়ান কামাল আহমেদ তার নির্বাচিত মেয়াদ পার হয়ে আরেক মেয়াদ পার করতে যাচ্ছেন।
কিন্তু সীমানা সংক্রান্ত আইনি জটিলতায় সেখানেও নির্বাচন হচ্ছে না। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এসব কারণে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট পৌরসভাগুলোর ওপর বিরক্ত। তাই সমস্যার সমাধানে আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
নতুন পৌরসভা গঠন ও বিদ্যমান পৌরসভা টিকিয়ে রাখতেও সংশ্লিষ্টদের কঠিন চ্যালেঞ্জে পড়তে হবে। দুই ক্ষেত্রেই চূড়ান্ত অনুমোদনের পর কিছু কঠোর শর্ত দেওয়া হয়েছে।
যেসব পৌরসভা ১২ মাস অর্থাৎ এক বছরের বেশি বেতন-ভাতা বকেয়া রাখবে সেসব পৌরসভা বাতিল করার ক্ষমতা থাকবে সরকারের হাতে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান হিসেবে পৌরসভার অন্যতম শর্ত নিজেদের আয় দিয়ে প্রতিষ্ঠান চালানো। কিন্তু দেশের বেশিরভাগ পৌরসভা নিজেদের আয় দিয়ে চলতে পারে না।
করোনার মধ্যেও অনেক পৌরসভার কর্মচারীরা জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান ধর্মঘট করে বেতন-ভাতার দাবি করেন। এসব ঘটনায় সরকারকে বিব্রত হতে হয়।
কারণ অনেক পৌরসভা নিজেদের সংস্থানের বাইরে অনেক লোক নিয়োগ দিয়ে দেয়। আর সাধারণ মানুষ পৌরসভাকে সরকারি প্রতিষ্ঠান ভেবে ঘুষ দিয়েও কাজ নেন। এ ব্যবস্থা বন্ধ করতে উল্লিখিত কঠোর শর্ত আরোপ করা হলো।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)