আগামী ১৭ জুলাই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে যশোরের মণিরামপুর উপজেলার ৮নং হরিহরনগর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন। প্রথমবারের মতো এই ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন ভোটারদের প্রত্যক্ষ উপস্থিতিতে ইভিএম-এর মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হবে। প্রযুক্তি নির্ভর ইভিএমে ভোট গ্রহণ নিয়ে তাই প্রার্থী ও ভোটারদের মধ্যে নানা ধরনের বিরুপ মন্তব্য ও মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অধিকাংশ প্রার্থী ও ভোটারদের মধ্যে ইভিএমে তেমন আগ্রহ নেই! নেই তেমন একটা আস্থা।
পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিলে ভোটটি সঠিকভাবে কাউন্ট হবে কিনা সেটা নিয়ে ভোটারদের মধ্যে সংশয় কাজ করছে। নির্বাচন কমিশন ইভিএমের মধ্যেমে ভোট প্রদানের বিষয়ে ভোটারদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিয়েছেন কিন্তু বেশিরভাগ ভোটার প্রশিক্ষণ নিতে আগ্রহী নন।
অধিকাংশ ভোটার ইভিএমে আগ্রহী নহে বলে খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে। সরেজমিন হরিহরনগর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে প্রার্থী ও ভোটারদের সাথে কথা বলে ইভিএমে ভোট প্রদানে আগ্রহী নহে অধিকাংশরা এমনটি জানা গেছে। ভোটারদের মধ্যে ইভিএমে তেমন একটা আস্থা নেই বলেও জানা গেছে।
গত বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) বিকেলে হরিহরনগর ইউনিয়নের এনায়েতপুর গ্রামের কলেজ শিক্ষক মশিয়ার রহমান (৫৬), মিজানুর রহমান (৪২), জাহাঙ্গীর হোসেন (৪০), জাকির হোসেন (৩৫), ফরাদ হোসেন (৭৪), হরিহরনগর গ্রামের মনিরুল ইসলাম (২৮), সালামতপুর গ্রামের ছদর উদ্দীন (৭০), শৈলি গ্রামের শাজাহান (৪৫), মদনপুর গ্রামের হযরত আলী (৭৫), মুয়াজ্জিন রেজাউল (৬৫), নুর ইসলাম (৭৪), ইস্রাফিল (৫০), শিল্পী খাতুন (৪০), খুর্শিদা খাতুন (৪৫), হামিদা খাতুন (৪০), খাটুরা গ্রামের হাসেম আলী (৬৫), নজরুল মাষ্টার (৪২), মধুপুর গ্রামের কুরবান আলী (৫৮), রিজাউল (৪৫), কোলা গ্রামের রিজাউল (৫৫) ও খাটুরা গ্রামের সাধারণ মেম্বর প্রার্থী আলিকদরের সাথে ইভিএমে ভোট নিয়ে কথা হয়। এ ছাড়া কথা হয় মদনপুর গ্রামের বার বার নির্বাচিত ইউপি সদস্য ও আসন্ন নির্বাচনে সদস্য পদপ্রার্থী ডাঃ মুনছুর আলীর সাথে। কথা হয় চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ তরিকুল ইসলামের সাথে (মোটর সাইকেল)। চেয়ারম্যান প্রার্থী তরিকুল ইসলাম জানান- আওয়ামীলীগ দলীয় নৌকার প্রার্থী বাদে আমরা তিন প্রার্থী গ্রাম পর্যায়ে ইভিএমে ভোট দিতে ভোটারা স্বাচ্ছন্দবোধ করবে না জেনেই আগে ভাগে ব্যালটের মাধ্যমে ভোট গ্রহণের জন্য নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেছিলাম। কিন্তু সেটা আমলে নেয়া হয়নি। ইভিএমে ভোট গ্রহণ বহাল রাখায় অগত্যা মেনে নিয়ে ভোট করছি। মদনপুর গ্রামের তিনবারের ইউপি সদস্য ও সদস্য প্রার্থী ডাঃ মুনছুর আলী বলেন- আমার প্রতিদ্বন্দ্বি অপর তিন প্রার্থী যে ভোট পাবে আমি তাদের চেয়ে বেশি ভোট পেয়ে নির্বাচিত হবো। এবার ইভিএমে ভোট হচ্ছে তাই তৃণমূলের বিএনপি’র এই কর্মী ফলাফল নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। মদনপুর গ্রামের রেজাউল মুয়াজ্জিন বলেন- আমি যাকে ভোট দিবো সেই প্রার্থীর ফলাফলে ভোটটি কাউন্ট হবে কিনা নিশ্চিত হতে পারছি না। সালামতপুরের প্রবীণ কৃষক ছদর উদ্দিন (৭০) বলেন- ইভিএমে ভোট আমার পূর্বপুরুষের কেউ দেয়নি। ইভিএম একেবারে তার অপছন্দের। এর প্রতি কোনো আস্থা নেই। এনায়েতপুর গ্রামের মিজানুর রহমান (৪২) বলেন- আমার গ্রামে প্রশিক্ষণ হয়েছে। কয়েকজন অংশ নিয়েছে। বেশিরভাগ ট্রেনিং নেয়নি। অধিকাংশ ভোটারের ইভিএমের প্রতি কোনো আগ্রহ নেই। আস্থা ও নেই অধিকাংশের। অন্যদিকে খাটুরা ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য প্রার্থী আলিকদর বলেন- নতুন পদ্ধতিতে ভোট দিতে তার এলাকার ভোটারকে সচেতন করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিছু কিছু ভোটার বেশ আগ্রহী বলে তিনি জানান।
পক্ষান্তরে গত ২৭ জুন হরিহরনগর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীদের সাথে মণিরামপুর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তেন মতবিনিময় কালে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহসান হাবিব খান (অবঃ) বলেন- ইভিএম সচ্ছতার প্রতীক। ভোট ডাকাতি ঠেকাতে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হবে ইভিএমে। হরিহরনগর ইউনিয়নের ভোট হবে একটি মাইলফলক। প্রশাসনের জাল ভেদ করে কোনো প্রকার অনিয়মের সুযোগ নির্বাচনে থাকবে না বলে তিনি দৃঢ়চিত্রে ঘোষণা দেন।
উল্লেখ্য- আগামী ১৭ জুলাই-২০২৩ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে হরিহরনগর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। এ নির্বাচনে ৪ জন চেয়ারম্যান, ১০ জন সংরক্ষিত নারী সদস্য ও ৩২ জন সাধারণ সদস্য প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচনে ২১ হাজার ২২৬ জন ভোটার প্রথমবারে মতো ইভিএম পদ্ধতিতে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাগেছে।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]