রাজধানীর মাস্টারমাইন্ড স্কুলের ‘ও’ লেভেলের ছাত্রী আনুশকা নুর আমিন অর্নাকে ধর্ষণের পর মৃত্যুর ঘটনায় দিহান দায় স্বীকার করলেও তার তিন বন্ধুকে নিয়ে তৈরি হয়েছে নানা প্রশ্ন, সন্দেহ আর সংশয়। আনুশকার পরিবারের অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠেছে- আনুশকার এমন করুণ মৃত্যুতে কি দিহান একাই জড়িত? নাকি তার তিন বন্ধুও জড়িত ছিল? নাকি ঘটনার সময় দিহান বা আনুশকা উত্তেজক ওষুধ সেবন করেছিল বা তারা নেশাগ্রস্ত ছিল কিনা- সে প্রশ্নেরও জবাব মেলেনি। এ ছাড়া আনুশকার বয়স নিয়েও রয়েছে নানা দোলাচল।
আনুশকার এক স্বজন রোববার (১০ জানুয়ারি) গণমাধ্যমকে বলেন, ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকের ভাষ্য ও পুলিশের সুরতহাল প্রস্তুতকারী পুলিশ কর্মকর্তার তথ্য অনুযায়ী, মেয়েটির যৌনাঙ্গ ও পায়ুপথে গভীর ক্ষত ছিল। দেহের দুই অংশ থেকেই রক্তপাত হচ্ছিল। তাহলে একজনের পক্ষে একসঙ্গে এমন নৃশংসতা চালানো সম্ভব নয়। দিহান যদি একাই এমন নৃশংসতা চালায়, তাহলে সে কি নেশাগ্রস্ত ছিল, নাকি নিজে এবং মেয়েটাকে উত্তেজনাকর কিছু খাইয়েছিল?
দিহানের তিন বন্ধুকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেওয়া হলেও প্রয়োজনে আবারও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদেরকে থানায় ডাকা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
তবে দিহান একা, নাকি তার সঙ্গে তিন বন্ধু জড়িত তা নিশ্চিত হতে ফরেনসিক পরীক্ষার প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ কর্মকর্তারা। ইতিমধ্যে পুলিশের আবেদনের প্রেক্ষিতে রোববার কারাগারে থাকা আসামি দিহানের ডিএনএ পরীক্ষার আদেশ দিয়েছেন আদালত। ফরেনসিক রিপোর্ট ও দিহানের ডিএনএ টেস্টের পর জানা যাবে তার বন্ধুরা জড়িত কিনা।
সেই তিন বন্ধুকে আবারও থানায় নেয়ার বিষয়ে নিউমার্কেট অঞ্চলের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার আবুল হাসান জানান, প্রাথমিক তদন্তে দিহানের তিন বন্ধুকে জিজ্ঞাসাবাদ করে কোনো সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। তবে ডিএনএ পরীক্ষায় ফারদিনের তিন বন্ধুর সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে আইনের আওতায় তাদের আনা হবে।
আনুশকার মরদেহ ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক বলেছেন, ‘মেয়েটি বিকৃত ও কুরুচিপূর্ণ যৌনাচারের শিকার হয়েছিল। তার যৌনাঙ্গ এবং পায়ুপথে ক্ষতচিহ্ন পাওয়া গেছে। এ কারণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়েছে।’ এর পরই স্বজনরা প্রশ্ন তুলছেন- চিকিৎসকের বিবরণ অনুযায়ী এমন বর্বরোচিত পাশবিকতা একজনের পক্ষে করা সম্ভব কিনা?
এ বিষয়ে মেয়েটির বাবা অভিযোগ করেন, তারা চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পেরেছেন, মেয়ের ওপর যে নৃশংস ঘটনা ঘটেছে, তাতে ঘটনার সঙ্গে কোনোভাবেই একজন জড়িত নয়। দিহানকে সঠিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই জড়িত অন্যদের তথ্য বেরিয়ে আসবে। তবে দিহানের পক্ষে অদৃশ্য এক শক্তি কাজ করছে বলে মনে হচ্ছে।
তিনি বলেন, আসামি তাকে বাসায় ডেকে নেওয়ার কথা বললেও মনে হচ্ছে, মেয়েটি কোচিং যাওয়ার পথে দিহান ও তার বন্ধুরা তাকে বাধা দিয়ে জোর করে বাসায় নিয়ে গেছে।
আলোচিত এই মামলার তদন্ত তদারকি কর্মকর্তা পুলিশের নিউমার্কেট থানার সিনিয়র সহকারী কমিশনার আবুল হাসান বলেন, আসামি দিহান জিজ্ঞাসাবাদে অপরাধের সঙ্গে একাই ছিল বলে জানিয়েছে। আদালতেও স্বীকারোক্তি দিয়েছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত আপাতত এটাই বিশ্বাস করতে হবে।
পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, মেয়েটির পরিবার যেসব প্রশ্ন তুলেছে, তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করা হচ্ছে। এসব রহস্য উদ্ঘাটনে মৃতদেহ থেকে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ধর্ষণে একাধিক ব্যক্তি জড়িত ছিল কিনা, ময়নাতদন্তে তা জানতে চাওয়া হয়েছে। ভেজাইনাল সোয়াব সংগ্রহ ও তা পরীক্ষার জন্য আবেদন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার (৭ জানুয়ারি) সকালে বন্ধু দিহানের মোবাইল কল পেয়ে বাসা থেকে বের হন রাজধানীর ধানমন্ডির মাস্টারমাইন্ড স্কুলের ‘ও’ লেভেলের শিক্ষার্থী আনুশকা নুর আমিন। এরপর কিশোরীকে কলাবাগানের ডলফিন গলির নিজের বাসায় নিয়ে যান দিহান। ফাঁকা বাসায় তাকে ধর্ষণ করা হয়। অসুস্থ হয়ে পড়লে দিহানসহ চার বন্ধু তাকে ধানমন্ডির আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক ছাত্রীকে মৃত ঘোষণা করেন। ধর্ষণের পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয় বলে জানান চিকিৎসকরা। এ ঘটনার মামলায় দিহান গ্রেফতার রয়েছেন। তিনি ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দিও দিয়েছেন।
এ ঘটনায় আনুশকার বাবা বাদী হয়ে মামলা করেছেন। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত বৃহস্পতিবার (৭ জানুয়ারি) সকালে আমার স্ত্রী ও আমি বের হয় হই। পরে আমার মেয়ে বেলা সাড়ে ১১টায় তার মাকে ফোন দিয়ে বলে সে কোচিংয়ের পেপার্স আনতে বাইরে যাচ্ছে। দুপুর ১টা ১৮ মিনিটে দিহান আমার স্ত্রীকে ফোন দিয়ে বলে আমার মেয়ে তার বাসায় গিয়েছিল। সেখানে হঠাৎ অচেতন হয়ে পড়ায় তাকে রাজধানীর আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতলের জরুরি বিভাগে ভর্তি করেছে। এ কথা শুনে আমার স্ত্রী দুপুর ১টা ৫২ মিনিটের দিকে হাসপাতালে পৌঁছায়। সেখানে গিয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসকের কাছে জানতে পারেন আমাদের মেয়েকে ধর্ষণ করে মেরে ফেলা হয়েছে।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]