বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতার মসনদে বসেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার রাজভবনে রাজ্যপালের তত্ত্বাবধানে শপথ গ্রহণ করেন রাজ্যে ৪৩ জন মন্ত্রী। এর আগে রোববার ৪৩ জনের তালিকা রাজভবনে পাঠিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ সেই অনুযায়ী রাজভবনে শপথ গ্রহণ করেন রাজ্যের ভাবি মন্ত্রী মন্ডল।
বিগত সরকারে পরিবহণ মন্ত্রণালয় ছিল শুভেন্দু অধিকারীর হাতে। তিনি পদত্যাগ করে বিজেপিতে যোগ দেয়ার পর থেকেই ওই চেয়ারটি ফাঁকা ছিল।
কোভিড পরিস্থিতি ও পেট্রোল-ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি হওয়ায় ধুঁকছে পরিবহণ শিল্প। আগামী দিনে আরও কঠিন অবস্থা হতে চলেছে। তা আঁচ করেই বিশ্বস্ত ফিরহাদ হাকিমকে পরিবহণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিলেন মমতা। একইসঙ্গে আবাসনের দায়িত্বেও রয়েছেন তিনি। এবারের শুভেন্দুর সাবেক চেয়ারে বসে কী করেন ফিরহাদ তাই দেখার অপেক্ষায় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
নির্বাচনী প্রচারণার সময় ফিরহাদ হাকিম শুভেন্দু অধিকারীকে তোপ দাগেন। তিনি বলেন, শুভেন্দুর তৃণমূল ছেড়ে দেয়ায় দলের সবাই খুব খুশি, বলছে বেঁচে গেছি। তিনি বলেন, শুভেন্দু যখন অমিত শাহের পা ধরল, মনে হচ্ছিল এই দিন দেখার চেয়ে মৃত্যু হওয়া অনেক ভালো ছিল। শুভেন্দু একদা যে তাঁর সহকর্মী ছিলেন, সেটাই বলতে লজ্জা করে।
ফিরহাদ বলেন, শুভেন্দু ধান্দাবাজির জন্য দল ছাড়লেন না জেলে ঢোকার ভয়, সেটা ভবিষ্যতেই বলবে।
নন্দীগ্রামে যিনি কৃষক আন্দোলন করেছিলেন, তিনি কীভাবে বিজেপির হাত ধরেন যারা নয়া কৃষি আইন এনেছে, সেই নিয়েও প্রশ্ন করেন ফিরহাদ। তিনটি নতুন আইন নিয়ে তৃণমূলের কিসে আপত্তি, সেটাও ব্যাখ্যা করে বলেন তিনি। সব মিলিয়ে নন্দীগ্রাম আন্দোলনে শুভেন্দুর অবদানকে লঘু করা ও নয়া কৃষি আইন নিয়ে তাঁর চাষীবন্ধু ইমেজকে ধাক্কা দেওয়া, এই জোড়া নীতি নিয়ে চলবে তৃণমূল, এদিনের সভায় সেটা সাফ হয়ে গেল।
ভারতের স্বাধীনতার পর কলকাতার প্রথম মুসলিম মেয়র হিসাবে দায়িত্বপালন করছেন ফিরহাদ হাকিম। ববি হাকিম নামে বেশি পরিচিত এই নেতা আগে থেকেই রাজ্যের নগরোন্নয়ন এবং পৌর দপ্তরের মন্ত্রী ছিলেন।
১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার আগে পাঁচজন মেয়র ছিলেন মুসলিম, যাদের মধ্যে ছিলেন শের-এ-বাংলা এ কে ফজলুল হক। কিন্তু তারপর থেকে কখনও কোনও মুসলিম ধর্মাবলম্বী নেতা কলকাতার মেয়র পদে বসেননি।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ফিরহাদ হাকিম দক্ষিণ কলকাতার চেতলা অঞ্চলের মানুষ। কংগ্রেস রাজনীতি করতে করতেই মমতা ব্যানার্জীর ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠা এবং গত শতাব্দীর নয়ের দশকের শেষ দিকে কলকাতা কর্পোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর হিসাবে প্রথম ভোটে জেতা।
যতদিন গেছে, ততই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠদের বৃত্তে ঢুকে পড়েছেন মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির কাছাকাছি পাড়ার বাসিন্দা ফিরহাদ হাকিম।
কর্পোরেশনের গণ্ডি ছাড়িয়ে পৌঁছিয়ে গেছেন বিধানসভায়। ভোটে জিতে বিধায়ক হওয়ার পরে হয়েছেন মন্ত্রী।
আর রাজনীতির ক্ষেত্রে হয়ে উঠেছেন মমতা ব্যানার্জীর ‘ম্যান ফ্রাইডে’দের অন্যতম।
এক সাক্ষাৎকারে ফিরহাদ হাকিম বলেছিলেন, তার দাদু বিহারের গয়া জেলা থেকে কলকাতায় এসে ব্যবসা শুরু করেন। বাবা ছিলেন কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টের আইন কর্মকর্তা। আর মা ছিলেন কলকাতার একটি স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষিকা।
ফিরহাদ হাকিম গত বছর হজ করে এসেছে, কিন্তু ওর মধ্যে হিন্দু-মুসলিম প্রসঙ্গটা একেবারেই নেই।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]