দীর্ঘ ৬ বছর আগে ঢাকা থেকে হারিয়ে যাওয়া ছেলেকে ফেসবুকের কল্যানে সাতক্ষীরার আশাশুনি থেকে ফিরে পেতে যাচ্ছেন এক মা। হারিয়ে যাওয়া আবু সাঈদ (১৪) বর্তমানে বিভাগীয় এতিম ছেলে-মেয়েদের জন্য নির্মিত কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আশাশুনিতে রয়েছে।
জানা যায়, আবু সাঈদের বয়স যখন মাত্র ৮ বছর তখন তার স্বামী পরিত্যাক্তা মা ছাবিনা খাতুন তার পিতার বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলার দেলুয়ারকান্দি গ্রামে আশ্রয় নেন। পিতার কাঁধে কতদিন বসে বসে খাবেন এ চিন্তায় তিনি নিজের পায়ে দাঁড়াতে ঢাকায় পাড়ি জমান। কাজ শুরু করেন সেখানকার একটি পোশাক কারখানায়। শিশু পুত্র সাঈদকে নিয়ে তিনি একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। মা যখন কাজে যেতেন শিশু সাঈদ তখন পথে পথে ঘুরে বেড়াতো। এক পর্যায়ে সে দুষ্টচক্রের সাথে সঙ্গ দিতে শুরু করে। একদিন পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করেন। অথচ তার মা এঘটনাটি জানতে পারেননি। পুত্র হারানোর যন্ত্রণা বুকে নিয়ে তার মা আশপাশে অনেক খোঁজাখুজি করেও তাকে ফিরে পাননি। এরই মধ্যে সেন্ট্রাল জেলহাজতে ৩ মাস থাকার পর ছাড়া পায় শিশু সাঈদ। কিন্তু এ সময় সে আর তার মাকে খুঁজে পায়নি। আবারও সে পথশিশু হিসেবে বেড়ে উঠতে থাকে। কিছুদিন পর আবারও পুলিশ তাকে পথ থেকে তুলে নিয়ে নারায়নগঞ্জ এতিমখানায় ঠাঁই করে দেন। নারায়নগঞ্জে তার জীবন ছিল দীর্ঘস্থায়ী। সেখান থেকে মাত্র দেড় মাস আগে তাকে সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনিতে অবস্থিত বিভাগীয় এতিম ছেলেমেয়েদের জন্য নির্মিত কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পাঠানো হয়।
স্থাণীয় কিছু সাংবাদিক সেখানে একটি তথ্য নিতে গিয়ে আবু সাঈদের কথা জানতে পারেন। এরপর তারা তার সাক্ষাৎকার ভিডিও ধারণ করেন এবং ফেসবুকে ছেড়ে দেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়লে মালায়েশীয়া প্রবাসী দেলুয়াকান্দির জনৈক ব্যক্তি দেখে তার মনে হয় এই সাঈদ তাদেরই এলাকার ছাবিনার ছেলে। তিনি ওই ফেসবুকের ওই ভিডিও পোস্টটি তাদের গ্রামের বন্ধুদের কাছে শেয়ার করেন। তারা এই পোষ্টটি সাঈদের নানী মোমেনা খাতুন দেখালে তিনি তার কন্যা ছাবিনাকে বিষয়টি জানান। ছাবিনা ও তার পরিবারের অন্যরা ভিডিও পোস্টটি দেখে তাকে শানাক্ত করেন যে এ সাঈদই তাদের সন্তান।
তারা একপর্যায়ে আশাশুনির স্থাণীয় সাংবাদিকদের সহযোগিতায় কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে সাঈদের সাথে কথা বলেন। আবু সাঈদকে দেখে তার মা-নানী-মামা সবাই তাকে চিনতে পারেন। মুহূর্তেই অপরপ্রান্তে তাদের বাড়িতে খুশিতে কান্নার রোল পড়ে যায়। তারা এ সময় জানান, ২/১ দিনের মধ্যে তারা আশাশুনিতে আসবেন তাদের পুত্রকে নেওয়ার জন্য। এদিকে ৬ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া আবু সাঈদ তার বাড়িতে মা-নানী-মামাদের কাছে ফেরার আনন্দে আশাশুনির এতিমখানায় খুশিতে অশ্রু ঝরাচ্ছে।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]