জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠপুত্র, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, বিশিষ্ট ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক
ব্যক্তিত্ব বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদ শেখ কামালের ৭৪তম জন্মদিনে বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়েছেন সাতক্ষীরা সদর-২আসনের সংসদ সদস্য নৌ-কমান্ডো ০০০১ বীর
মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি।
সেই সাথে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধুর সহধর্মীনি বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবসহ তাঁর পরিবারের সকল
শহিদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেছেন। ১৯৪৯ সালের এই দিনে বহুমাত্রিক সৃষ্টিশীল প্রতিভার অধিকারী শেখ কামাল গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভয়াল কালরাত্রিতে মাত্র ২৬ বছর বয়সে তিনি জাতির জনকের হত্যাকারী ঘৃণ্য শত্রুদের নির্মম-নিষ্ঠুর বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞের প্রথম শিকার হয়ে শাহাদাত বরণ করেন। পঁচাত্তরের ভয়াল পনেরোই
আগস্ট নারকীয় হত্যাযজ্ঞের প্রধান লক্ষ্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলেও এ দিনের ঘটনায় প্রথম শহীদ হন তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র শেখ কামাল।
বঙ্গবন্ধুর ছেলে পরিচয় দেয়ার পর ঘৃণ্য কাপুরুষ মেজর (বরখাস্ত) বজলুল হুদা তার স্টেনগান দিয়ে শেখ কামালকে হত্যা করে।
বঙ্গবন্ধুর বাড়ির অন্যতম পাহারাদার হাবিলদার কুদ্দুস সিকদারের আদালতে দেয়া সাক্ষ্য থেকে জানা যায়, ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে প্রথম প্রবেশ করে খুনী বজলুল হুদা ও ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) নূর চৌধুরী। সঙ্গে আরও কয়েকজন।
বাড়িতে ঢুকেই তারা শেখ কামালকে দেখতে পায়। সঙ্গে সঙ্গে বজলুল হুদা স্টেনগান দিয়ে তাকে গুলি করে। শেখ কামাল বারান্দা থেকে ছিটকে গিয়ে অভ্যর্থনা কক্ষের
মধ্যে পড়ে যান। সেখানে তাকে আবার গুলি করে হত্যা করা হয়।
বহুমাত্রিক অনন্য সৃষ্টিশীল প্রতিভার অধিকারী তারুণ্যের দীপ্ত প্রতীক শহীদ শেখ কামাল ঢাকার শহীন স্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস
করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে বিএ অনার্স পাস করেন।
বাংলাদেশের শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি অঙ্গনের শিক্ষার অন্যতম উৎসমুখ ছায়ানটের সেতার বাদন বিভাগের ছাত্রও ছিলেন শেখ কামাল। স্বাধীনতা উত্তর যুদ্ধ-বিধ্বস্থ বাংলাদেশ পুনর্গঠন ও পুনর্বাসন কর্মসূচীর পাশাপাশি সমাজের পশ্চাতপদ জনগোষ্ঠীর ভাগ্যোন্নয়নে সমাজ চেতনায় উদ্বুদ্ধকরণে মঞ্চ নাটক আন্দোলনের ক্ষেত্রে শেখ কামাল ছিলেন প্রথম সারির সংগঠক।
বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী শেখ কামাল বন্ধু শিল্পীদের নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন ‘স্পন্দন’ শিল্পী গোষ্ঠী। এছাড়া তিনি ছিলেন ঢাকা থিয়েটারের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতাও। অভিনেতা হিসেবেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যাঙ্গনে
প্রতিষ্ঠিত ছিলেন।
শৈশব থেকে ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, বাস্কেটবলসহ বিভিন্ন খেলাধুলায় প্রচন্ড উৎসাহ ছিল শেখ কামালের। তিনি উপমহাদেশের অন্যতম ক্রীড়া সংগঠন ও আধুনিক
ফুটবলের প্রবর্তক আবাহনী ক্রীড়াচক্রের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।
শহীদ শেখ কামাল আমৃত্যু আমাদের দেশের নান্দনিক ফুটবল ও ক্রিকেটসহ অন্যান্য দেশীয় খেলার মানোন্নয়নে তার অক্লান্ত প্রম দিয়ে অপরিসীম অবদান রেখেছিলেন। নতুন নতুন খেলোয়াড় সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ শিবির গড়ে
তুলতেন এবং তাদের সঙ্গে নিয়মিত অনুশীলন করতেন।
১৯৭৫ সালের ১৪ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশবরেণ্য এ্যাথলেট সুলতানা খুকুর সঙ্গে তার বিয়ে হয়।
ছাত্রলীগের একজন নিবেদিত, সংগ্রামী ও আদর্শবাদী কর্মী হিসেবে ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ওয়ার কোর্সে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়ে মুক্তিবাহিনীতে কমিশন্ড লাভ করেন ও মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল ওসমানির এডিসি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীনতার পর শেখ কামাল সেনাবাহিনী থেকে অব্যাহতি নিয়ে পুনরায় লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করেন। তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য ছিলেন এবং শাহাদাত বরণের সময় বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগের অঙ্গ-সংগঠন জাতীয় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শাহাদাতবরণের সময় তিনি সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের এম এ বর্ষের শেষ পর্বের পরীক্ষা দিয়েছিলেন।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কমিশন্ডপ্রাপ্ত গর্বিত অফিসার
শেখ কামালের জন্মদিন উপলক্ষে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সংগঠনগুলো বিস্তারিত কর্মসূচী গ্রহণ করেছে।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]