বড় ভাই আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিনের সঙ্গে নিজের মতাদর্শগত ভিন্নতা রয়েছেন বলে জানালেন অন্তর্বর্তী সরকারের বাণিজ্য এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন।
তিনি বলছেন, তার সম্পর্কে না জানার কারণে বড় ভাইয়ের সঙ্গে মিলিয়ে তাকে ফ্যাসিস্টের দোসর আখ্যা দেওয়া হচ্ছে। বস্তুত যশোর-১ আসনের সাবেক সাংসদ শেখ আফিলউদ্দিনের সঙ্গে তার রাজনৈতিক মতাদর্শগত ভিন্নতার পাশাপাশি পারিবারিক দূরত্বও রয়েছে।
নিয়োগের পর থেকেই ফ্যাসিস্টের দোসর হিসেবে সমালোচনার মুখে বুধবার দেশের একটি শীর্ষ গণমাধ্যমকে দেওয়া এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, ‘আফিল উদ্দিন আমার বড় ভাই। আমরা আলাদা মায়ের হলেও বড় ভাই হিসেবে শ্রদ্ধা করে চলি। তবে রাজনৈতিক আদর্শে আমরা সম্পূর্ণ ভিন্ন মতাদর্শের।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভিন্ন মা হওয়ায় ১৯৯৯ সালে পারিবারিকভাবে আমরা আলাদা হই। পরে আফিল ভাই রাজনীতিতে যুক্ত হন। আমরা সবাই দীর্ঘদিন ধরেই আলাদা ব্যবসা পরিচালনা করছি। তিনি মূলত যশোরকেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা ও রাজনীতি করছেন। আমিসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা ঢাকাকেন্দ্রিক।’
জানা গেছে, দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আকিজ গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা শেখ আকিজ উদ্দিনের ৩ স্ত্রীর ১৫ সন্তান। এর মধ্যে শেখ আফিল উদ্দিন আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য। আর শেখ বশিরউদ্দিন গত রবিবার অন্তর্বর্তী সরকারের বাণিজ্য এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পান। তার পর থেকে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ আফিলের ভাই হিসেবে ধরে শেখ বশিরকে আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা দেওয়া হচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে গত সোমবার শেখ বশির সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘যারা আন্দোলন করেছেন, তাদের আবেগের সঙ্গে আমার দ্বিমত নেই। তবে আমার ধারণা, ওনারা মিস ইনফরমড (ভুল তথ্য পাওয়া)। ওনাদের তথ্যের ভিত্তি সঠিক নয়।’
শেখ বশির সম্পর্কে জানাশোনা থাকা ব্যবসায়ীরাও বলছেন, শেখ আফিল ও শেখ বশিরের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা। শেখ বশির ব্যবসায় মনোযোগী ছিলেন। আফিল ব্যবসার পাশাপাশি রাজনীতিতে যোগ দিয়েছিলেন।
জানা গেছে, প্রয়াত শেখ আকিজ উদ্দিন ১৯৯৯ সালে সন্তানদের মধ্যে ব্যবসা ভাগ করে দেন। সেই থেকে আফিল উদ্দিনের সঙ্গে বশিরউদ্দিনের কোনো ব্যবসায়িক সম্পর্ক নেই। তাদের পারিবারিক যোগাযোগও খুব বেশি নয়। ২০২৩ সালে শেখ বশির যখন নিজের আকিজবশির গ্রুপের যাত্রা শুরু করেন, তখন আয়োজিত অনুষ্ঠানে আসেননি শেখ আফিল।
শেখ আকিজ উদ্দিনের ১৫ সন্তানের মধ্যে ১০ ছেলে ও ৫ মেয়ে। আকিজ উদ্দিনের সন্তানদের মধ্যে ছেলেরাই শুধু ব্যবসায় যোগ দিয়েছেন। ১০ ছেলের মধ্যে ব্যবসা ভাগ করে দেন আকিজ উদ্দিন নিজেই। ২০০৬ সালে তার মৃত্যু হয়।
শেখ আকিজের প্রথম স্ত্রীর তিন ছেলে। এর মধ্যে শেখ মহিউদ্দিন চিকিৎসক ও ব্যবসায়ী। তিনি আদ্-দ্বীন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল পরিচালনা করেন। শেখ মমিন উদ্দিন ২০২০ সালে মারা গেছেন। তিনি ট্যানারি, চামড়াসহ বিভিন্ন ব্যবসায় যুক্ত ছিলেন। শেখ আকিজের প্রথম স্ত্রীর তৃতীয় ছেলে শেখ আফিল উদ্দিন। তার আফিল গ্রুপ নামে ব্যবসা আছে। সেটা মূলত যশোর এলাকায়।
শেখ আকিজের দ্বিতীয় স্ত্রীর দুই ছেলে শেখ আমিন উদ্দিন ও শেখ আজিজ উদ্দিন। শেখ আমিনের তথ্যপ্রযুক্তি, গাড়িসহ বিভিন্ন ব্যবসা রয়েছে। শেখ আজিজের পুঁজিবাজার–সংশ্লিষ্ট খাত, কৃষিসহ বিভিন্ন ব্যবসা রয়েছে।
শেখ আকিজের তৃতীয় স্ত্রীর পাঁচ ছেলে। তাঁরা হলেন শেখ নাসির উদ্দিন, শেখ বশিরউদ্দিন, শেখ জামিল উদ্দিন, শেখ জসিম উদ্দিন ও শেখ শামীম উদ্দিন। তারা ধানমন্ডির একটি বাড়িতে পরিবারসহ একত্রে বসবাস করেন।
এই পাঁচ ভাই ২০২২ সাল পর্যন্ত একত্রে ব্যবসা করেছেন। তাদের প্রতিষ্ঠানের নাম ছিল আকিজ গ্রুপ। পরে তারা ব্যবসা ভাগাভাগি করেন।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]