দীর্ঘ ১০ বছর পর ২০১৯-২০ অর্থবছরে নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি করা হয়। সেসময় বলা হয়েছিলো এমপিওভুক্তি চলমান প্রক্রিয়া। তবে এর পরের বছর অর্থাৎ চলতি অর্থবছরে আবার তা বন্ধ ছিল। ফলে অনেকটাই হতাশ হয়ে পড়েছিলেন নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা। তবে আগামী অর্থবছর নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এরই মধ্যে ২০২১ সালের এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী নতুন সফটওয়্যারও প্রস্তুত করা হয়েছে। এখন সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সম্মতির পরিপ্রেক্ষিতে আবেদন গ্রহণ শুরু হবে বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ আগামী অর্থবছরে স্কুল-কলেজ এমপিওভুক্তির জন্য ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছিল। তবে পুরোটা না পাওয়া গেলেও এমপিওভুক্তি খাতে বরাদ্দ মিলেছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া মন্ত্রণালয় তাদের থোক বরাদ্দ থেকে এই খাতে টাকা কমবেশি করতে পারবে। এটা নির্ভর করছে কী পরিমাণ যোগ্যতাসম্পন্ন স্কুল-কলেজ পাওয়া যায় এর ওপর।
এ ছাড়া মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগ আগামী অর্থবছরে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মাদরাসা এমপিওভুক্তির জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছিল। সেখানেও বরাদ্দের পুরোটা পাওয়া যায়নি। ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ মিলেছে। তবে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার শিক্ষকরা এমপিওভুক্তির দাবি জানালেও তাদের জন্য আগামী অর্থবছরে বরাদ্দ নেই বলে জানা গেছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান বলেন, ‘আগামী অর্থবছরে নতুন এমপিওভুক্তির জন্য বরাদ্দ রয়েছে। আমাদের নতুন সফটওয়্যার তৈরির কাজও শেষ পর্যায়ে রয়েছে। সেটা শেষ হলেই আবেদন গ্রহণের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক-২) মোমিনুর রশিদ আমিন বলেন, ‘যেহেতু নতুন নীতিমালা হয়েছে, তাই নতুন সফটওয়্যার করতে হয়েছে। আমাদের সফটওয়্যার তৈরির কাজ শেষ, শুধু মাদরাসার কিছু কাজ বাকি আছে। আবেদন গ্রহণের সিদ্ধান্ত এলেই আমরা সফটওয়্যার উন্মুক্ত করে দেব।’
জানা যায়, ২০১৮ সালে এমপিওভুক্তির জন্য ৯ হাজার ৪৯৫টি প্রতিষ্ঠান অনলাইনে আবেদন করেছিল। দীর্ঘ যাচাই-বাছাই শেষে ২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর দুই হাজার ৭৩০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী। পরে প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্রের হার্ডকপি যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্তভাবে দুই হাজার ৬১৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়েছিল। ২০১৯ সালের শেষদিকে বিশেষ ক্ষমতা বলে সরকার আরো সাতটি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করেছিল। তবে এবার এমপিওভুক্তির বেশ কিছু শর্তে পরিবর্তন আনা হয়েছে। এ ছাড়া দুই বছর আগেই যেহেতু মাত্র দুই হাজার ৬১৫টি প্রতিষ্ঠান যোগ্য হয়েছে। ফলে আগামী অর্থবছরেও সব ধরনের প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে সর্বোচ্চ হাজারখানেক প্রতিষ্ঠানের শর্ত পূরণের সুযোগ রয়েছে।
২০২১ সালের নীতিমালা অনুযায়ী, নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি পেতে নিম্ন মাধ্যমিকে শহরে ১২০ ও মফস্বলে ৯০, মাধ্যমিকে শহরে ২০০ ও মফস্বলে ১৫০, উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শহরে ৪২০ ও মফস্বলে ৩২০, উচ্চ মাধ্যমিক কলেজে শহরে ২৫০ ও মফস্বলে ২২০ এবং ডিগ্রি কলেজে স্নাতকে শহরে ৪৯০ ও মফস্বলে ৪২৫ জন শিক্ষার্থী থাকতে হবে। পাসের হার স্তরভেদে সর্বনিম্ন ৪৫ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ করা হয়েছে। এ ছাড়া নতুন এমপিও পেতে মোট ১০০ নম্বরের মধ্যে শিক্ষার্থী সংখ্যায় ৩০, পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৩০ ও পাসের হারে ৪০ নম্বর রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশ নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার বলেন, ‘একটি প্রতিষ্ঠান স্বীকৃতি পাওয়ার অর্থই সব যোগ্যতা অর্জন করা। করোনায় নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তাই স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সব নন-এমপিও প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করতে প্রয়োজনীয় বরাদ্দের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমরা দাবি জানাচ্ছি।’
তথ্যসূত্র: কালের কণ্ঠ
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]