কেউ গিয়েছিলেন আত্মীয়ের বাড়ি বেড়াতে। কেউ গিয়েছিলেন আত্মীয়ের বিয়ে বা জন্মদিনের অনুষ্ঠানে। কিন্তু লকডাউনের জেরে তাঁরা আর বাংলাদেশ থেকে ফিরতে পারেননি। অনেকেরই ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে। হাতে টাকাও নেই। একবেলা-আধবেলা খেয়ে দিন কাটছে অনেকেরই। অপরদিকে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে কতদিন থাকা যায়? সকলেই দেশে ফিরতে চাইছেন। কিন্তু ফেরার কোনও উপায় খুঁজে পাচ্ছেন না।
যেমন বারাসতের দম্পতি রামপ্রসাদ মল্লিক এবং দীপিকা মল্লিক। ৯ মার্চ তাঁরা গিয়েছিলেন বাংলাদেশে এক আত্মীয়ের বাড়ি। ইচ্ছে ছিল ১০-১৫ দিনের মধ্যে ফিরে আসবেন। কিন্তু লকডাউনে জেরে আটকে পড়েছেন তাঁরা।
ওই দম্পতির মেয়ে নাইসা জানালেন, বাড়িতে ফিরতে না পেরে বাবা-মা চিন্তায় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। দিন কয়েক আগে মা অসুস্থ হয়ে মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিলেন।
নাইসার কথায়, ‘বাবার সাইনাসের সমস্যা রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে ফিরে বাবার ডাক্তার দেখানোর কথা ছিল। কবে বাবা-মা বাড়ি ফিরতে পারবেন, জানি না। দু’মাস আগে ওঁদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে বাবা-মায়ের জন্য খুবই চিন্তায় রয়েছি।’
গোবরডাঙার বাসিন্দা এক ব্যক্তি বাংলাদেশের মাদারিপুর জেলায় আত্মীয় বাড়িতে গিয়েছিলেন। লকডাউনে আটকে পড়েছেন। কাছে টাকা নেই। পরিচিত এক জনের বাড়িতে বাজার করছেন, রান্নার জন্য আনাজ কাটছেন, জামা কাপড় কাচছেন। দিন কয়েক আগে করোনা পরীক্ষার জন্য লালারস দিয়েছেন। কিন্তু কী ভাবে কবে দেশে ফিরতে পারবেন, তা তিনি জানেন না।
বাংলাদেশে আটকে থাকা ভারতীয়দের মধ্যে বেশির ভাগই অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে থাকা মানুষ। বিমানে আসা বা কোয়রান্টিনে থাকার মতো টাকা তাঁদের নেই। তাঁরা যে সব আত্মীয়ের বাড়িতে রয়েছেন, তাঁদেরও আর্থিক অবস্থাও ভাল নয়। আটকে থাকা অনেকেরই বিমানে আসার মতো আর্থিক সামর্থ্য নেই। অনেকেই চাইছেন, সরকার তাঁদের দেশে ফেরাতে পদক্ষেপ করুক।
পেট্রাপোল অভিবাসন দফতরের চিফ অফিসার জয়ন্ত বিশ্বাস বলেন, ‘বাংলাদেশে আটকে পড়া ভারতীয়রা দেশে ফিরতে চাইলে ও-দেশে থাকা ভারতীয় হাইকমিশনারের দফতরে যোগাযোগ করে আবেদন করতে হবে। দেশে ফিরে কোথায় কোয়রান্টিনে থাকবেন, সেটাও জানাতে হবে তাঁদের।’
অভিবাসন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ ভাবে অনেকেই দেশে ফিরে আসছেন। তাঁরা বিমান বা সড়ক পথে ফিরছেন। বাংলাদেশে আটকে পড়া ভারতীয়দের পক্ষে কি হাইকমিশনারের অফিসে যোগাযোগ করা সকলের পক্ষে সম্ভব? অভিবাসন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, শুধু ঢাকা নয় সিলেট, রঙপুর, খুলনা চট্টগ্রাম-সহ ৬-৭ জায়গায় হাইকমিশনের অফিস আছে। আটকে পড়া ভারতীয়দের সরাসরি যেতে হচ্ছে না। মেলে, ফোনে বা যে কোনও ডিজিটাল মাধ্যমে যোগাযোগ করলেই হবে।
নাইসা এ বিষয়ে বলেন, ‘মাসখানেক আগে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনের অফিসে ফর্ম ভর্তি করে বাবা-মায়ের ব্যাপারে আবেদন করেছিলাম। ঠিকানা, পাসপোর্ট ভিসার নথিপত্র চাওয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিল, ধীরে ধীরে ভারতীয়দের দেশে পাঠানো হচ্ছে। আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে নেওয়া হবে। কিন্তু এখনও করা হয়নি।’
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]