অবসট্রাক্টিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া হল ঘুম-সম্পর্কিত শ্বাস-প্রশ্বাসের একটি ব্যাধি। এই রোগে ঘুমানোর সময়ে শ্বাস-প্রশ্বাস অনিয়মিত হয়ে যায়। অর্থাৎ শ্বাস কখনও শুরু হয়, কখনও আচমকা বন্ধ হয়ে আসে। বিভিন্ন ধরনের স্লিপ অ্যাপনিয়া আছে, তবে সবচেয়ে বেশি যা দেখা যায়, তা হল অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া।
এই রোগে আক্রান্তের গলার পেশি স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি শিথিল হয়ে আসে। এই পেশি মুখগহ্বরের টাকরা, আল জিভ, জিহ্বা ও টনসিলের মতো অংশগুলোকে ধরে রাখে।
ফলে এই পেশির শিথিলতায় শ্বাস নেওয়ার পথটি রুদ্ধ হয়ে আসে ও ঘুমের সময় আচমকা শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা দেখা দেয়। অবসট্রাক্টিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের ঘুমের মধ্যে মৃত্যু হওয়ার আশঙ্কা সাধারণ মানুষের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। এই রোগের ফলে ঘুমের মধ্যে হৃদরোগে আক্রান্ত হতে পারেন মানুষ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ১০ সেকেন্ডের বেশি এমন অবস্থা থাকলে দেহে অক্সিজেনের পরিমাণ বেশ কমে যেতে পারে। অতিরিক্ত ওজন, বার্ধক্য উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, শ্বাসনালীর সমস্যা এই রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় অনেকটাই।
অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ায় আক্রান্ত হতে পারেন যে কেউ, তবে সকলের ক্ষেত্রে ভয়াবহ পরিস্থিতি নাও হতে পারে। কোন কোন লক্ষণ দেখলে বুঝবেন অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া’র মতো সমস্যা হচ্ছে? জেনে নিন এই অসুখটি সম্পর্কে।
কী এই অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া?
এটি মূলত শ্বাসযন্ত্রের উপরিভাগের সমস্যা। ঘুমের মধ্যে বারবার শ্বাসনালীর উপরের দিকে বাধা এলে তাকে অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া বলা হয়। সাধারণত নাক, মুখ হয়ে গলা দিয়ে বায়ুর স্বাভাবিকভাবে চলাচল করার কথা। ঘুমের মধ্যেও এটি সচল থাকারই কথা। কিন্তু তাতে বাধা পড়লেই, সেই সমস্যাটিকে অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া বলা হয়।
কী কী কারণে অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া হতে পারে?
১. এর সবচেয়ে বড় কারণ হতে পারে মেদ। টনসিল বড় হয়ে গেলেও এটি হতে পারে।
২. হাইপারটেনশন, পলিসিস্টিক ওভারির মতো সমস্যার কারণেও এই অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া হতে পারে।
৩. হাঁপানি-সহ ফুসফুসের অন্য সমস্যার কারণেও এটি হতে পারে।
৪. স্নায়ুর সমস্যার কারণেও এটি হতে পারে। তাতে বুকের পেশির উপর মস্তিষ্কের নিয়ন্ত্রণ কমে যায়।
৫. হৃদযন্ত্র এবং কিডনির সমস্যাতেও এটি হয়।
৬. অন্তঃসত্ত্বা নারীদের ক্ষেত্রেও এটি দেখা যেতে পারে।
৭. ধূমপানের অভ্যাস থাকলেও এটি হতে পারে।
অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ার সম্ভাব্য লক্ষণসমূহ
১. নাক ডাকা এর প্রধান লক্ষণ।
২. ঘুমের মধ্যে শ্বাস আটকে যাওয়া, গলা শুকিয়ে যাওয়ার মতো সমস্যাও হতে পারে এতে।
৩. সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরে মাথাব্যথার সমস্যায় ভোগেন অনেকে। এটিও অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ার লক্ষণ।
৪. ক্লান্তিও হতে পারে এর ফলে।
৫. শিশুদের ক্ষেত্রে অবসাদ বাড়তে পারে অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ার কারণে।
৬. অনেকে যৌনসম্পর্কের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন এই সমস্যায়।
তথ্যসূত্র: মায়োক্লিনিক, এনএইচএস ইউকে, বিএলএফ ইউকে
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]