মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটে নৌরুটে ১৮টি যানবাহন নিয়ে ‘রজনীগন্ধা’ নামের একটি ফেরি ডুবে গেছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২০ জনকে উদ্ধার এবং একজন নিখোঁজ থাকার খবর পাওয়া গেছে। উদ্ধারকাজ এখনো চলছে। তবে কীভাবে ফেরিটি ডুবে গেল, তা নিয়ে দুই ধরনের তথ্য পাওয়া গেছে।
ফেরিতে থাকা ট্রাকের চালক বলছেন, ‘কোনো বাল্কহেড ধাক্কা দেয়নি। নিচ দিয়ে পানি উঠে আস্তে আস্তে ডুবে গেছে ফেরি।’ একই ধরনের তথ্য দিয়েছেন ফেরি থেকে উদ্ধার হওয়া দুই যাত্রী।
তবে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, বাল্কহেডের ধাক্কায় ফেরিটি ডুবে গেছে।
জানা গেছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকেই ঘন কুয়াশার কারণে ফেরি ধীর গতিতে চলছিল। দিবাগত রাত ১টার দিকে দৌলতদিয়া ঘাট থেকে ইউটিলিটি ফেরি রজনীগন্ধা সাতটি ছোট ও দুটি বড় ট্রাক-লরি বুকিং দিয়ে পাটুরিয়া ঘাটের উদ্দেশে রওনা দেয়। কুয়াশার ঘনত্ব বেড়ে যাওয়ায় মাঝ-নদীতে নোঙর করে। বুধবার সকালে কুয়াশার ঘনত্ব কমে গেলে পাটুরিয়া ঘাটের কাছে আসার পর সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ফেরিটি আস্তে আস্তে ডুবে যায়। দীর্ঘ সময় ফেরির একটি অংশ পানির ওপরে ভাসমান ছিল। পরে ফেরিটি একেবারেই ডুবে যায়। ট্রাকচালক, চালকের সহকারী ও যাত্রীরা সাঁতরে তীরে আসার চেষ্টা করে। এ সময় মাছ ধরার ট্রলার ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে তাদের উদ্ধার করে।
ডুবে যাওয়া ফেরি থেকে উদ্ধার হওয়া ট্রাকের মালিক নাজমুল হাসানের বাড়ি চুয়াডাঙ্গায়। পাটুরিয়া ঘাটে উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘কোনো বাল্কহেড ধাক্কা দেয়নি। নিচ দিয়ে পানি উঠে আস্তে আস্তে ডুবে গেছে ফেরি। ট্রলারে করে লোকজন এসে আমাকেসহ কয়েকজনকে উদ্ধার করেছে।’
ফেরি থেকে উদ্ধার দুই যাত্রী জানান, তারা ঘুম থেকে উঠে দেখেন, ফেরি এগোচ্ছে না। আস্তে আস্তে ডুবে যাচ্ছে। তখন চালককে তারা বিষয়টি জানান। কিন্তু চালক তাদের কথায় কোনো পাত্তা দেয়নি। পরে তারা অন্যদের ডেকে নদীতে লাফ দেন। নদীতে ভাসমান অবস্থায় মাছ ধরার ট্রলার ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে তাদের উদ্ধার করে।
মানিকগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক মো. আব্দুল হামিদ মিয়া বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমাদের কর্মীরা ২০ জনকে জীবিত উদ্ধার করেছে। ফেরির সেকেন্ড ড্রাইভার হুমায়ূন কবির (৩৯) নিখোঁজ রয়েছেন। ফায়ার সার্ভিসের ১০ জন ডুবুরি ও ৩১ জন কর্মী উদ্ধার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। নারায়ণগঞ্জ থেকে ঘটনাস্থলে রওয়ানা হয়েছে উদ্ধারকারী জাহাজ নির্ভীক।’
বিআইডব্লিউটিসির আরিচা এরিয়া ডিজিএম মোহাম্মদ খালেদ নেওয়াজ বলেন, ‘আজ সকালে পাটুরিয়া ৫ নম্বর ঘাটের কাছে বাল্কহেডের ধাক্কায় রজনীগন্ধা নামে একটি ইউটিলিটি ফেরি ডুবে গেছে। ফেরিতে ৭টি ছোট ট্রাক ও ২টি বড় মালবোঝাই ট্রাক ছিল। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২০ জনকে জীবিত উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। আমরা উদ্ধারকারী জাহাজ নির্ভীককে খবর দিয়েছি, হামজা দিয়ে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।’
মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক রেহেনা আকতার জানান, এই ঘটনার তদন্তের জন্য অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]