বিক্ষোভে উত্তাল পাকিস্তান, দফায় দফায় সংঘর্ষ : নিহত ১
জমি সংক্রান্ত একটি মামলায় মঙ্গলবার স্থানীয় সময় বিকালে ৪ টার কিছু পর পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে গ্রেফতারের পর পুরো পাকিস্তান জুড়ে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠে।
মঙ্গলবার রাতভর বিক্ষোভের পর বুধবারও বিক্ষোভ চলছে। আর এই বিক্ষোভ ইতোমধ্যে সহিংসতার রূপ নিয়েছে। বিক্ষোভকারীরা বিভিন্ন যানবাহনে হামলা করে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে।
অনদিকে পুলিশের গুলিতে একজন নিহত হয়েচে। এবং শত শতা রাজনৈতিক কর্মী আহত হয়েছে।
একদিনে অর্থনৈতিকভাবে পুঙ্গ হয়ে পড়া পাকিস্তান নতুন করে রাজনৈতিক সংকটে পড়েছে। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ইন্টারনেট, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম।ইমরান খানকে রিমান্ডে নেওয়া গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ায় বিক্ষোভ সহিংসতায় রূপ নেয়।
আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য ও রাজনৈতিক দলের কর্মীরা মুখোমুীখ অবস্থান নিয়েছে। এতে দেখা দিয়েছে চরম আতঙ্ক। এদিকে সুপ্রিম কোট থেকে পুলিশ প্রধানকে ডেকে পাঠানো হয়েছে। জানতে চাওয়া হয়েছে ইমরান খানের গ্রেপ্তার কারণ।
ইমরান খানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) কর্মী-সমর্থকেরা মঙ্গলবার বিভিন্ন শহরে রাতভর বিক্ষোভ করেছেন। এ সময় তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গাড়িতে হামলা, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও আগুন ধরিয়ে দেয়। সেনাবাহিনীর দফতরেও হামলা চালায়।
পাকিস্তানের গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার (৯ মে) বিকেলে ইরমান খানকে গ্রেফতারের পরপর বিক্ষোভ শুরু করেন পিটিআই কর্মীরা। সন্ধ্যার পর গোটা পাকিস্তানে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। পিটিআই কর্মীরা ইসলামাবাদ, রাওয়ালপিন্ডি, লাহোর, করাচি, গুজরানওয়ালা, ফয়সালাবাদ, মুলতান, পেশাওয়ার ও মারদানে বিক্ষোভ করে। ক্ষুব্ধ নেতাকর্মী-সমর্থকরা রাওয়ালপিন্ডির সেনা দফতরে হামলা চালায়। এর আগে লাহোর সেনানিবাসের অফিসার্স কোয়ার্টারেও তারা হামলা চালায়।
ডন পত্রিকার অনলাইনে শেয়ার করা সাংবাদিক আসাদ আলী তুরের টুইটার ভিডিও পোস্টে দেখা যায়, মুখে রুমাল বেঁধে লাঠিসোঁটা নিয়ে রাওয়ালপিন্ডির সেনা দফতরের সামনে জড়ো হতে থাকেন পিটিআই নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। এর কিছুক্ষণ পরই একজন দুজন করে সেনা দফতরের প্রধান ফটকের দিকে এগিয়ে যেতে থাকেন তারা। একপক্ষ প্রধান গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে যায়। আরেক পক্ষ প্রধান গেটের ঠিক মাঝখানে অবস্থিত সেনাবাহিনীর গৌরবোজ্জ্বল প্রতীক ভেঙে ফেলেন। সব মিলিয়ে এক মিনিটেরও কম সময়ের মধ্যে সেনানিবাসের ভেতরে ঢুকতে দেখা যায় দুঃসাহসী পিটিআই বিক্ষোভকারীদের।
এ সময় প্রধান ফটকে নিয়মিত প্রহরারত কোনো সেনা সদস্যকে দেখা যায়নি। এর প্রায় ঘণ্টা দেড়েক আগে লাহোর সেনানিবাসের অফিসার কোয়ার্টারেও ভাঙচুর চালান পিটিআই সমর্থকরা।
ফরিদা রওদাদ নামে এক বিক্ষোভকারী বিবিসিকে বলছিলেন, ‘আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। আমরা আর কী করতে পারি? পাকিস্তানে আর কী করার আছে? আমরা সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কখনো কোনো কথা বলিনি, বললে হয়ত ভালো করতাম! এখন একটা নৈরাজ্য চলুক, বিশৃঙ্খলা ঘটুক। ইমরান না থাকার মানে পাকিস্তানে আর কিছু নেই। ক্ষমতা হাতে নেবার মতো আর কেউ এখানে নেই।।’
ইসলামাবাদের পুলিশ সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছে, পাঁচজন পুলিশ অফিসার আহত হয়েছেন এবং ৪৩ জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
রয়টার্স বলছে, দক্ষিণ পশ্চিমের কোয়েটা শহরে ইমরান খানের সমর্থকদের সাথে সংঘর্ষে ছয়জন পুলিশ কর্মকর্তাসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে।
আল-জাজিরা জানিয়েছে, ইমরানের গ্রেফতারের পর পাকিস্তানের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ দমন করতে দেশটির পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান ব্যবহার করেছে। করাচিতে দেশেটির বৃহত্তম শহরের মধ্য দিয়ে চলমান প্রধান সড়কে জড়ো হওয়া বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করেছে।
বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় শহর লাহোরে পুলিশ জলকামান ব্যবহার করেছে। ওই শহরেই ইমরান খান বাস করেন।
এদিকে ইমরানকে গ্রেফতার করার পর দেশটির রাজধানী ইসলামাবাদে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। সেখানে চারজনের বেশি জমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
ইমরানকে গ্রেফতারের বিষয়ে তার রাজনৈতিক দল ‘পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ পার্টি ‘ বলেছে, আধাসামরিক বাহিনী রেঞ্জার্স-এর সদস্যরা ইমরানকে ‘অপহরণ’ করেছে। রাজনৈতিক দলটি আরও বলেছে, পাকিস্তানের সাহসী জনগণকে অবশ্যই বেরিয়ে আসতে হবে এবং তাদের দেশকে রক্ষা করতে হবে।
এদিকে ইমরানকে গ্রেফতারের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন ইসলামাবাদ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি আমের ফারুক।
মঙ্গলবার (১০ মে) ইসলামাবাদে আদালত চত্বর থেকে ইমরান খানকে গ্রেফতার করা হয়। দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত ইমরান খান এদিন আদালতে হাজিরা দেন। তিনি বলছেন, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
গত বছর এপ্রিল মাসে ইমরান খানকে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে বরাখাস্ত করা হয়। সেসময় থেকে তিনি আগাম নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রচারণা চালাচ্ছেন। এবছর আরও পরের দিকে পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন হওয়ার কথা।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)