বিচিত্র প্রজাতির মাছের সমাহার যবিপ্রবির ‘অ্যাকুয়াটিক বায়োডায়ভার্সিটি মিউজিয়াম’
সহজেই মাছের সঙ্গে পরিচিতি, বিলুপ্ত ও বিলুপ্তপ্রায় সব স্বাদু পানির মাছ ও সামুদ্রিক মাছ এবং অন্যান্য জলজ প্রাণি সংরক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ও গবেষণা উন্নয়নে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) তৈরি করা হয়েছে ‘অ্যাকুয়াটিক বায়োডায়ভার্সিটি মিউজিয়াম’।
মিউজিয়ামটিতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সংরক্ষিত কোনোটির রং বাদামি, কোনোটি আবার হলদেটে, কোনো জারে মাছগুলো কালচে হয়ে আছে। ‘অ্যাকুয়াটিক বায়োডায়ভার্সিটি মিউজিয়াম’-এর থরে থরে সাজানো বিভিন্ন আকৃতি ও রঙের বিচিত্র সব মাছের সমাহার। বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একাডেমিক ভবনের তৃতীয় তলায় ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন বায়োসায়েন্স (এফএমবি) বিভাগের উদ্যোগে যবিপ্রবির নিজস্ব অর্থায়নে এ মিউজিয়ামটি তৈরি করা হয়েছে।
জানা গেছে, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে এ ধরণের কোনো মিউজিয়াম নেই এবং এতদ্বাঞ্চলে এটিই প্রথম। মাছ সংরক্ষণের জন্য ফরমালিন, ইথানল, রেজিনসহ কয়েকটি রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে ফরমালিন কম মূল্যের হলেও ইথানল ও রেজিনে মাছের নমুনা সংরক্ষণ করা তুলনামূলক ব্যয়বহুল। মিউজিয়াম তৈরির প্রকল্পে পরিচালক হিসাবে ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন বায়োসায়েন্স (এফএমবি) বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. সিরাজুল ইসলাম ও সহকারী প্রকল্প পরিচালক হিসেবে রয়েছেন একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক পূজা বৈদ্য। মিউজিয়ামটি তৈরিতে বিভাগের আরও অনেক শিক্ষক-শিক্ষার্থী সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করেন।
অধ্যাপক ড. মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, IUCN এর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রায় ৩০০ প্রজাতির স্বাদু পানির মাছ ও ৪৭৫ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ পাওয়া যায়। কিন্তু বাস্তবে খোঁজ করতে গেলে একশত প্রজাতির স্বাদু পানির মাছের দেখা মেলে না। আমাদের দেশ থেকে দেশীয় বহু প্রজাতির মাছ হারিয়ে গেছে। আর অনেকগুলোই এখন বিলুপ্তির পথে। প্রায় ১০ শতাংশ মাছ প্রতি বছর হারিয়ে যাচ্ছে। মিউজিয়ামে সংগৃহীত নমুনা মাছের তথ্য হতে মাছের বিলুপ্তিরোধে সচেতনতা তৈরি এবং পূর্বে বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় মাছের প্রজাতির পরিসংখ্যান জানা সম্ভব হবে। এটি নতুন প্রজন্মকে বাংলাদেশের মৎস্যভান্ডারের সমৃদ্ধতার বিষয়ে জানতে সহায়ক ভ‚মিকা পালন করবে। ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন বায়োসায়েন্স বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য মাছ চিহ্নিত করতে পারা অত্যাবশ্যকীয়। তারা এ মিউজিয়াম থেকে মাছ ও মাছের বৈশিষ্ঠ্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবে।
অধ্যাপক ড. মো. সিরাজুল ইসলাম আরও বলেন, বাণিজ্যিকভাবে বাজারে সাধারণত ৬০-৭০ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ পাওয়া যায়। কিন্তু এর বাইরে সামুদ্রিক মাছের যে বিপুল প্রজাতি রয়েছে, তা আমাদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের চেনা-জানা ও দেখার সুযোগ হয় না। অ্যাকুয়াটিক বায়োডায়ভার্সিটি মিউজিয়ামে বর্তমানে স্বাদু পানি ও সামুদ্রিক পানির মোট ২৫০ প্রজাতির মাছ সংরক্ষিত রয়েছে এবং মাছের অন্যান্য প্রজাতি সংগ্রহের কাজ চলমান রয়েছে। তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও দর্শনার্থীদের জন্য মিউজিয়ামটি উন্মুক্ত থাকবে। দর্শনার্থী ও শিক্ষার্থীরা এসে দেখতে পারবে বাংলাদেশের মৎস্য সম্পদ কতটা সমৃদ্ধ ছিল আর এখন কত প্রজাতির মাছ রয়েছে। আবার অনেকেরই সমুদ্রে যাবার সুযোগ হয় না তারা মিউজিয়ামে এসে মাছগুলো দেখতে পারবেন এবং মাছ সম্পর্কে জানতে পারবেন। মাছের উৎস, প্রাপ্তিস্থল, জীবনকাল, প্রচলিত নাম, বৈজ্ঞানিক নাম ও প্রজনন সম্পর্কিত তথ্য দেওয়া থাকবে যাতে করে শিক্ষার্থী ও দর্শনার্থীরা সহজেই মাছ সম্পর্কে জানতে পারে। এ ছাড়া বিশেষ প্রক্রিয়ায় বড় আকৃতির মাছের অঙ্গ-সংস্থান দেখার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা মাছের অভ্যন্তরীণ গঠন দেখতে ও জানতে পারবে। মিউজিয়ামের অন্য অংশে অ্যাকুরিয়ামে সৌন্দর্যবর্ধক জীবন্ত মাছের সংগ্রহও থাকবে। সমুদ্রে জীবের বিপুল সমাহার নিয়ে মিউজিয়ামের অন্য আরেকটি অংশে ভবিষ্যতে আকর্ষণীয় বিভিন্ন প্রমাণ্যচিত্র দেখানোর ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা রয়েছে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল উন্নয়ন ও গবেষণা প্রকল্পের মধ্যে এটি অন্যতম একটি প্রকল্প। যশোরঞ্চলকে বলা হয় মাছের উর্বর ভূমি। মিউজিয়ামটির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ও দর্শনার্থীরা খুব সহজেই সহজেই বিচিত্র সব মাছের সঙ্গে পরিচিত হতে পারবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব অর্থায়নে মিউজিয়ামটি তৈরি করা হয়েছে। এটি আরও সম্প্রসারণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)