সবজিসহ নানা খাদ্যপণ্যর দাম কমেছে বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বা বিবিএস। তাদের তথ্য অনুযায়ী, নভেম্বর মাস শেষে মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে আট দশমিক ৯১ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে এ হার ছিল ৯ দশমিক ১০ ও আগস্টে ছিল ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে। বিবিএস আরও জানিয়েছে, নভেম্বর মাসে খাদ্যপণ্যের দাম কমে আট দশমিক ১৪ শতাংশ হয়েছে, গত মাসে যা ছিল আট দশমিক ৫০ শতাংশ।
সোমবার (৫ ডিসেম্বর) পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান মূল্যস্ফীতির সর্বশেষ তথ্য প্রকাশ করেন।
এসময় নভেম্বর মাসে খাদ্য পণ্যের দাম কমেছে বলে তথ্য প্রকাশ করায় প্রশ্নের মুখে পড়েন পরিকল্পনামন্ত্রী।
সাংবাদিকেরা সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রীকে জানায়, বাজারঘাট ঘুরে দেখি প্রতিনিয়তেই খাদ্যপণ্যের দাম বাড়তি। বাজারের সঙ্গে বিবিএস-এর তথ্যের মিল নেই। খাদ্যপণ্যের দাম কমেছে কোন কোন বাজারে এসব বাজারের তালিকা মন্ত্রীর কাছে জানতে চান উপস্থিত সাংবাদিকরা।
মন্ত্রী বলেন, নভেম্বর মাসে অত্যন্ত ভালো খবর পেয়ছি। মূল্যস্ফীতি ডিসেম্বরে তা আরও কমার সম্ভাবনা আছে। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ধান, শাক সবজি হওয়ার পাশাপাশি তেল গ্যাসের দাম বিশ্বব্যাপী কমায় সার্বিকভাবে প্রবৃদ্ধিও সাত শতাংশে যাবে এমন আশা বাদ পরিকল্পনা মন্ত্রীর।
তিনি বলেন, তেল গ্যাস সরকার নিজে কিনে বিক্রি করে। সরকার কোনো মহাজনি নয় এটা নিয়ে লাভ করবে না। বিশ্ববাজারে দাম কমলে অবশ্যই সরকার কমাতে বাধ্য হবে। মূল্যস্ফীতি পরিমাপকের সূচকগুলো পর্যালোচনা করবে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। এমন কিছু পণ্য যা নিত্য প্রয়োজনীয় না তা এ তালিকায় রাখা হবে কিনা তা ভাবা হবে। মূল্যস্ফীতির বাড়ন্ত ভাব নিয়ে কেউ কেউ রাজনীতি করতে চেয়েছিলেন, এখানে তা হয়নি। ম্যানেজমেন্ট পরিচালনা করার কারণে সম্ভব হয়েছে।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ডিসেম্বরে মূল্যস্ফীতি আরও কমবে। গত তিন মাসে ধারাবহিকভাবে মূল্যস্ফীতি হ্যাটট্রিক হয়েছে। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমে যাওয়ায় আমাদের দেশে অবশ্যই এর প্রভাব পড়বে। আমাদের ধান ও সবজি উৎপাদন ভাল হয়েছে। সরকার জ্বালানি কেনে এবং বিক্রি করে। সামাজিক ও বাস্তব কারণে দাম বাড়াতে হয়। বিশ্ববাজারে দাম কমলে আজ হয় কাল আমাদের দেশেও দাম কমবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বর্তমানে ৪২২টি পণ্যের ওপর মূল্যেস্ফীতি যাচাই করা হয়। এখন সেগুলো আবার পূর্ণবিবেচনা করা হবে। কেননা এখানে সোনার দামও ধরা হয়েছে। সোনার দাম বাড়লে মূল্যস্ফীতিতে প্রভাব পড়ে। এছাড়াও মাখন ও কফিসহ এ রকম অনেক পণ্যের দাম ও ধরা হয়। এগুলো সংশোধন করা হবে।
তিনি আরও বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ে অনেকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করতে চেয়েছিল। কিন্তু তাদের আশা পূরণ হয়নি। তারা বলতে চেয়েছিল এটা ভালো সময়ের কারণে মূল্যস্ফীতি কমছে। কিন্তু তাদের কথা ঠিক নয়। মুল্যস্ফীতি কমার মূল কারণ হচ্ছে ব্যবস্থাপনা। এক্ষেত্রে কোনো কোনো পণ্যের কর ছাড় এবং টিসিবিরি পণ্যে বিক্রির কারণে মূল্যস্ফীতি কমেছে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মধ্যবিত্তের দিকে আলাদা কোনো টার্গেট নেই সরকারের। অর্থনৈতিক, মানবিক ও রাজনৈতিক কারণে নিম্নবিত্তের দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।
গ্রামে সার্বিক মূল্যস্ফীতি পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে কমে দাড়িয়েছে আট দশমিক ৯৪ শতাংশে, যা তার আগের মাসে ছিল আট দশমিক ৯২ শতাংশ। খাদ্য পণ্যের মূল্যস্ফীতি কমে দাড়িয়েছে আট দশমিক ২৩ শতাংশে, যা তার আগের মাসে ছিল আট দশমিক ৩৮ শতাংশ। খাদ্য বহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাড়িয়েছে ১০ দশমিক ৩১ শতাংশে, যা তার আগের মাসে ছিল ৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ।
শহরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে কমে দাঁড়িয়েছে আট দশমিক ৭০ শতাংশে, যা তার আগের মাসে ছিল আট দশমিক ৯০ শতাংশ। খাদ্য পণ্যের মূল্যস্ফীতি কমে দাড়িয়েছে সাত দশমিক ৯৫ শতাংশে, যা তার আগের মাসে ছিল আট দশমিক ৭৫ শতাংশ। খাদ্য বর্হিভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাড়িয়েছে ৯ দশমিক ৫৪ শতাংশে, যা তার আগের মাসে ছিল ৯ দশমিক শূণ্য ৭ শতাংশ।
নভেম্বরে মজুরি হার শতকরা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ছয় দশমিক ৯৮ শতাংশে, যা তার আগের মাসে ছিল ছয় দশমিক ৯১ শতাংশ। কৃষি খাতে মজুরি হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ছয় দশমিক ৯০ শতাংশে, যা তার আগের মাসে ছিল ছয় দশমিক ৮৫ শতাংশ।
শিল্প খাতে মজুরি হার বেড়ে দাড়িয়েছে সাত দশমিক শূণ্য ছয় শতাংশে, যা তার আগের মাসে ছিল ছয় দশমিক ৯৭ শতাংশ। সেবা খাতে মজুরি হার বেড়ে দাড়িয়েছে সাত দশমিক ১৭ শতাংশে, যা তার আগের মাসে ছিল সাত দশমিক ১১ শতাংশ।
গত জুলাইয়ে মূল্যস্ফীতির হার ছিল সাত দশমিক ৪৮ শতাংশ, আগস্টে ছিল ৯ দশমিক ৫২ শতাংশ, সেপ্টেম্বরে ছিল ৯ দশমিক ১০ শতাংশ।
গত জুলাইয়ে মজুরি হার ছিল ছয় দশমিক ৫৬ শতাংশ, আগস্টে ছিল ছয় দশমিক ৮০ শতাংশ এবং সেপ্টেম্বরে ছিল ছয় দশমিক ৮৬ শতাংশ।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]