বিলুপ্তির পথে যাত্রাশিল্পো। তাই শুধু গল্প করেই দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাচ্ছেন রাজগঞ্জের যাত্রা শিল্পীরা। এমনচিত্র দেখাগেছে যশোরের মণিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্জ বাজারের গুড় হাটা গলির নিজাম চাচার চায়ের দোকানে। সেখানে রাজগঞ্জ বঙ্গবন্ধু নাট্য সংস্থার যাত্রা শিল্পী রুহুল কুদ্দুস (হানুয়ার), জসিম উদ্দিন (হানুয়ার), আব্দুল আজিজ (হানুয়ার), নিজাম উদ্দিন (হানুয়ার), সোরাব হোসেন (চাকলা), শাহাদুজ্জামান (হানুয়ার), বিজয় মল্লিক (রত্নেশরপুর), কামাল হোসেন (মোবারকপুর), জিয়াউর রহমান (শয়লা), রাশেদুল ইসলাম (শাহপুর), রিজাউল ইসলাম (বেলতলা), হাবিবুর রহমান (মোবারকপুর), কওছার আলী (ষোলখাদা), ইকবাল হোসেন (মল্লিকপুর), বাবর আলী (নয়ন মোড়) এরা বসে প্রতিদিন সকাল, দুপুর, রাত পর্যন্ত চা, পান আর সিগারেট খাওয়া আর ওই যাত্রা জগতের বিভিন্ন সংলাপ, কোথায় কোন অভিনয় করা হয়েছে আর কোন চরিত্রে কে অভিনয় করেছে, এই নিয়েই শুধু আলোচনা করেন। তারা মাঝে মাঝে যাত্রার সেই ঐতিহাসিক অভিনয়ের সংলাপ দেন।
রাজগঞ্জ বঙ্গবন্ধু নাট্য সংস্থার সদস্য রুহুল কুদ্দুস তো যাত্রার গল্প না করে থাকতেই পারেন না। নিজাম চাচার চায়ের দোকান মানেই রাজগঞ্জ এলাকার যাত্রা শিল্পীদের আড্ডা। সরকারি কোনো দিবস আসলেই আগে থেকে প্রস্তুতি নেন যাত্রা অনুষ্ঠান করার জন্য। কিন্তু শেষে এশেই শেষ হয়ে যাই, তাদের সকল প্রস্তুতি। টাকা ম্যানেজ হয় না। তা না হলে অনুমতি মেলে না। এমন পরিস্থিতিতে বন্ধ হয়ে যায় সকল প্রস্তুতি। কিন্তু থেমে থাকে না এই চায়ের দোকানে বসে থাকা যাত্রা শিল্পীদের গল্প।
কপোতাক্ষ নদের অববাহিকা, অপরূপ সৌন্দর্য্যে ভরা ঝাঁপা বাঁওড় পাড়ে গড়ে ওঠা জনপদ রাজগঞ্জ। এক সময় এই রাজগঞ্জে অনুষ্ঠিত হতো বাঙ্গালীর ঐতিহ্য যাত্রাপালা। রাজগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে টিন দিয়ে প্যান্ডেল করে মাসের পর মাস চলতো যাত্রাপালা। বৈকালি, বাবুল, নিউ রাজদুধ নামের অপেরাগুলোর শিল্পীরা এই রাজগঞ্জ স্কুলের মাঠে যাত্রা পরিবেশন করতো। যাত্রা প্যান্ডেল-ভর্তি দর্শক, সানাই বাজছে, রং-বেরংয়ের লাইটের কম্পোন আর ড্রামের তালে মঞ্চে প্রবেশ করতো শিল্পীরা। এই যাত্রা দেখতে খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে গাড়ীভরে লোক আসতো। যাত্রা মাঠ হোটেল, চায়ের দোকানসহ বিভিন্ন খাবারের দোকানে ভরা থাকতো। সেসময় যখন যাত্রা চলতো, তখন উৎসব চলতো রাজগঞ্জে। কি জমজমাট থাকতো রাজগঞ্জ বাজার। কিন্তু এখন আর হয় না যাত্রা। যাত্রার সেই যৌলুশ আর নেই। এখন সেই শিল্পীদের আর কদরও নেই। আধুনিকতায় হারিয়ে গেছে যাত্রাপালা। বর্তমান প্রজন্ম যাত্রা কি তা বোঝেই না।
জানাগেছে- অনেক নাম করা যাত্রা শিল্পী মারা গেছে। আর যারা বেছে আছেন, তারা বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন। তারা চরম অর্থ কষ্ঠে ও অসুস্থ হয়ে নানা সমস্যায় রয়েছেন। যারা মানুষকে আনন্দ দিতেন, সমাজের বিভিন্ন দিক তুলে ধরতেন শিল্পের মাধ্যমে, তাদের জীবনই আজ দুর্দশাগ্রস্থ।
রাজগঞ্জ বঙ্গবন্ধু নাট্য সংস্থার অন্যতম সংগঠক জসিম উদ্দিন জানান- রাজগঞ্জে যাত্রা শিল্পের সাথে জড়িত রয়েছে মাত্র কয়েকজন। এরা এখনো চেষ্টা করে যাত্রাপালা করার জন্য। কিন্তু নানান জটিলতার কারণে পারে না।
জসিম উদ্দিন বলেন- যাত্রা শিল্পীরা যাত্রাপালার মাধ্যমে রহিম-রুপবান, আপন-দুলাল, আলোমতির প্রেম কুমার, কাশেম মালার প্রেম, ঝন্টু ডাকাত, বৌমা তুমার পায়ে নোমোস্কার, সহ বিভিন্ন বাংলা ছবিগুলোর আদি ইতিহাস তুলে ধরতেন।
রাজগঞ্জ বঙ্গবন্ধু নাট্য সংস্থা সদস্যরা এ শিল্প বাঁচিয়ে রাখতে, সরকারী সহায়তার দাবী জানিয়েছেন।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]