ভারত ছাড়া বিশ্বকাপে ভরাডুবিতে উপমহাদেশের শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের ক্রিকেটের টালমাটাল অবস্থা। তিন দেশেই ব্যর্থতার জন্য তুলোধুনো করছে ক্রিকেট বোর্ডকে। শ্রীলঙ্কার ক্রীড়া মন্ত্রণালয়তো ক্রিকেট বোর্ডই বাতিল করেছে। তাতে নিয়ম ভঙ্গ করায় দেশটিকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকেই নিষিদ্ধ করেছে আইসিসি। বাজে পারফরম্যান্সের জন্য বোর্ড ও দলকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডও। দায় নিয়ে প্রধান নির্বাচক ইনজামাম ও অধিনায়ক বাবর আজম পদত্যাগ করেছেন। কিন্তু টাইগারদের চরম ব্যর্থতার পরও বোর্ডের নেই কোনো লাজলজ্জা। সব দোষ খেলোয়াড়দের ওপর চাপিয়ে লুকিয়ে আবারো নিজেদের মতো করে দল তৈরির পরিকল্পনা করছে।
এবারের বিশ্বকাপ ক্রিকেটে অঘটন আর ভরাডুবির গল্পটা যেন ভারী হয়ে গেছে। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের পারফরম্যান্স ঠেকেছে তলানিতে। প্রত্যাশার ভেলায় চেপে বিশ্বকাপে পাড়ি জমালেও ফিরেছে খালি হাতেই তারা।
এতে টালমাটাল অবস্থা লঙ্কান ক্রিকেট বোর্ডের। বিশ্বকাপে ব্যর্থতার দায়ে এসএলসির দায়িত্বে থাকা বোর্ড কর্তাদের বরখাস্ত করেছেন দেশটির ক্রীড়ামন্ত্রী। বাতিল ঘোষণা করা হয় দেশটির ক্রিকেট বোর্ডকেও। লঙ্কান ক্রিকেট বোর্ডকে ঢেলে সাজাতে দেশটির কিংবদন্তি
ক্রিকেটার অর্জুনা রানাতুঙ্গাকে দায়িত্ব দিয়েছিল অ্যাডহক কমিটি।
কিন্তু এমন সিদ্ধান্তের পর বিপাকে পড়েছে দেশটির ক্রিকেটের অস্তিত্ত্বই। সরকারি এমন হস্তক্ষেপে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের খেলাতেই দেশটিকে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। যদিও, লঙ্কান ক্রিকেট বোর্ডের এই বিলুপ্তির বিরুদ্ধে আদালত একটি আবেদন দুই সপ্তাহের জন্য স্থগিতাদেশ মঞ্জুর করেছে। শ্রীলঙ্কার ক্রীড়ামন্ত্রীর এমন উদ্যোগে স্পষ্ট, একেবারে নতুন আঙ্গিকে দেশটির ক্রিকেট বোর্ড গঠন করতে চায়।
বিশ্বকাপের আগে ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষে থাকা দল পাকিস্তানের অবস্থাও নাজুক। বিশ্বকাপে একেবারেই ফ্লপ। দলের পারফরম্যান্স কিংবা টিম ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব, সবখানেই ভরাডুবির চিত্র স্পষ্ট। বিশ্বকাপের স্বপ্ন দেখলেও, আসর থেকে বিদায় হয়েছে ইংল্যান্ডের সঙ্গে হেরেই। ব্যর্থতার গ্লানি মেনে নিয়ে পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন বোর্ডের প্রধান নির্বাচক ইনজামাম উল হক। তুমুল সমালোচনার মুখে তিন ফরম্যাট থেকেই পদত্যাগ করেছেন অধিনায়ক বাবর আজম।
বাবরের পরিবর্তে ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটের দায়িত্ব পেয়েছেন পেসার শাহিন আফ্রিদি। টি-টোয়েন্টির দায়িত্বও আফ্রিদির আর সাদা পোশাকের ক্রিকেটের অধিনায়ক করা হয়েছে শান মাসুদকে। তারকাদের বাদ দিয়ে নতুনদের নিয়েই সাজানো হচ্ছে দল। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডকেও পরিস্কার করা হচ্ছে। বোর্ডের প্রধান নির্বাচকের দায়িত্ব পড়েছে সাবেক পেসার এবং পাঞ্জাবের বর্তমান ক্রীড়ামন্ত্রী ওয়াহাব রিয়াজের কাঁধে। বোর্ড পরিচালকের পদেও আনা হয়েছে পরিবর্তন। গুরুত্বপূর্ণ এই পদে আনা হয়েছে সাবেক অলরাউন্ডার মোহাম্মদ হাফিজকে।
সবাই যখন ব্যর্থতার দায়ে আগামীর জন্য নিজেদের নতুন করে ঢেলে সাজানোতে ব্যস্ত। তখন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড চলছে আগের ফরম্যাটেই। বিশ্বকাপ ইতিহাসে দলের সবচেয়ে লজ্জাজনক পারফরম্যান্সেও নিজেদের দায় এড়াতে ব্যস্ত বোর্ড কর্তারা। সব দায় ক্রিকেটারদের ওপর চাপিয়ে নিজেদের পদ বহাল রাখার কাজটি পোক্ত করছেন সবার অজান্তে লুকিয়ে লুকিয়ে। এক সাকিবে আস্থা রেখেই মিথ্যে স্বপ্ন বুনছেন নাতো আবার!
বছরের পর বছর চেয়ার ধরে রাখলেও এক দশকে নতুন কোনো তারকা ক্রিকেটার তৈরি করতে পারেননি তারা। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেষ্ট সিরিজ চলতি মাসেই। কারা দলে খেলবেন আর কেইবা দলের হাল ধরবেন সেটা আবারো তলে তলে ঠিক করছেন ব্যর্থতার ষোলকলা পূর্ণ করা কোচ, নির্বাচক ও কর্তা ব্যক্তিরা। বোর্ডের ছলচাতুরিতার শেষ কোথায়? লাখ লাখ ক্রিকেটপ্রেমীদের মাথায় এই প্রশ্নটাই ঘোরপাক খাচ্ছে বারবার।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]